বিশ্ব ভাতৃত্ত্ব ভারতের ধর্ম ও ঐতিহ্য
Image credit Google
বন্ধুত্বের উত্তর বারবার শত্রুতাতেই ফিরিয়ে দিয়েছে পাকিস্তান। ১৯৪৭ সালের আগস্ট মাসে ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটে ও অখন্ড ভারত বিভক্ত হয়ে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্র জন্ম নেয় - ভারত ও পাকিস্তান। দুটি ভালো প্রতিবেশী হতেই পারতো। কিন্তু হয়নি তার কারণ পাকিস্তানের সর্বগ্রাসী মনোভাব। ভারত ১৯৫০ সালে প্রজাতন্ত্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। গণপ্রজাতন্ত্রী ভারতের সংবিধান কার্যকর হয়। দীর্ঘ ব্রিটিশ শাসন ও অত্যাচার এবং দেশভাগের সময় ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক হানাহানির পর ভারত ধীরে ধীরে নিজের দেশ হিসেবে সানির্ভর হওয়ার চেষ্টা করছে। দেশভাগের ক্ষত , দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধ-এর ভয়ানক স্মৃতি তখনও দেশের মানুষের মনে টাটকা। এরকম সময়ে জনসংখ্যা ও , কূটনীতি ও সামরিক শক্তিতে অনেক পিছিয়ে থাকা পাকিস্তান কে কি ভারত আঘাত করতে পারতো না ? যেখানে বিশ্বের তাবড় শক্তিশালী দেশ বিশ্বযুদ্ধের ক্ষয়ক্ষতি হিসাবে ব্যাস্ত ছিল। যখন নতুন বিশ্বকূটনীতি নতুন বিন্যাসে ব্যাস্ত ও সন্ধিয়ান ! পারতো। কিন্তু অন্যের ক্ষতির তুলনায় ভারত বরাবরই নিজের সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও নিজের সমৃদ্ধি-উন্নয়নেই বেশি মনোযোগী ছিল।
১৯৫৫- প্রজাতন্ত্র দিবসে প্রথমবার পাকিস্থানকে আমন্ত্রণ
নিজের এই আন্তরিক রূপের্ পরিচয় ভারত বারবার দিয়েছে। এবং চরম প্রতারিত হয়েছে। ১৯৫০ সাল থেকে ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত প্রজাতন্ত্র দিবসের প্যারেড দিল্লীতে বিভিন্ন স্থানে হতো। কখনও লালকেল্লায় কখনও রামলীলা ময়দানে। কিন্তু কোনো স্থায়ী জায়গা ঠিক হওয়ার প্রয়োজন সবাই অনুভব করছিলেন।কিন্তু প্রথম বছর থেকেই ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবসের একটি ঐতিহ্য আছে যা আজও আমালিন। তা হলো এই অনুষ্ঠানে পৃথিবীর যেকোন একজন বিশেষ ও বিখ্যাত ব্যক্তিকে প্রধান অতিথি করে আমন্ত্রণ জানান। সাধারণত কোনো দেশের রাষ্ট্রপ্রধানই আমন্ত্রিত হন। কিন্তু তার ব্যাতিক্রম ও আছে। এর মধ্যে একটি বিশেষ বার্তাও নিহীত থাকে।তা হলো সেই দেশের সঙ্গে সামগ্রিক মৈত্রী ও সুসম্পর্ক গড়ে তোলা। যাই হোক ১৯৫৫ সালে প্রথম ঠিক হয় রাজপথে স্থায়ী ভাবে প্রজাতন্ত্র দিবসের প্যারেড ও মূল অনুষ্ঠানটি হবে। জানেন ভারত সেবার কাকে এই বিশেষ সম্মান দিয়ে নিমন্ত্রণ জানিয়েছিলো ? অবাক হবেন অনেকে। দেশটির নাম পাকিস্তান।
Image credit Google
১৯৫৫ সালে ২৬ জানুয়ারী প্রজাতন্ত্র দিবসের মূল অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে এসেছিলেন পাকিস্তানের তৎকালীন গভর্নর জেনারেল মালিক গুলাম মোহাম্মদ। রাষ্ট্রপতি রাজেন্দ্র প্রসাদ প্রধানমন্ত্রী জহরলাল নেহেরু র বিশেষ আতিথেয়তায় কোনো কার্পণ্য ছিলোনা। তিনি রাজঘাটে মহাত্মা গান্ধীর সমাধিতে শ্রদ্ধা অর্পণ করেন। এটি কি বন্ধুত্বের বার্তা নয় ?
১৯৬৫- প্রজাতন্ত্র দিবসে দ্বিতীয়বার পাকিস্থান
একই ঘটনা ঘটেছিল আর একবার। সেটা ১৯৬৫ সল্। মালিক গুলাম মোহাম্মদ আসার ঠিক ১০ বছর পর। তখন রাষ্ট্রপতি ছিলেন ডঃ সবাপল্লী রাধাকৃষ্ণণ ও প্রধানমন্ত্রী লালবাহাদুর শাস্ত্রী। পণ্ডিত নেহেরুর উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রেখে দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার স্বার্থে প্রধানমন্ত্রী লালবাহাদুর শাস্ত্রী এক বিখ্যাত স্লোগান তৈরি করেন -" জয় জওয়ান , জয় কিষাণ " , যা সারা ভারতকে আলোড়িত করে। প্রতিরক্ষা ও উন্নয়নের স্বার্থে তিনি বুঝেছিলেন আন্তর্জাতিক সীমান্ত সুরক্ষিত এবং শান্ত না থাকলে ও দেশের অভ্যান্তরীন উন্নয়ন ঠিক ভাবে হবে না। তাই তিনি প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে মৈত্রী সম্পর্কের জন্য ও অন্য্ প্রতিবেশীদেরও সেই বার্তা দেওয়ার জন্য আবার প্রজাতন্ত্র দিবসে আমন্ত্রণ জানালেন পাকিস্তানকে।পাকিস্তান তার পাঞ্জাব প্রদেশের গভর্নর রানা আব্দুল হামিদকে পাঠিয়ে উপেক্ষার সঙ্গে আমন্ত্রণ রক্ষা করলো। আর তারপর ?
বন্ধুত্বের জবাবে পাকিস্তান বারবার ফিরিয়ে দিয়েছে কাপুষের প্রতারণা -- যুদ্ধ।
তারপর নিকৃষ্টতম ভাবে সেই বন্ধুত্বের জবাব দিল যুদ্ধ বাধিয়ে। মাত্র একমাস পর। ভারত জবাব দিল কঠিনতম ভাবে। ১৯৬৫ যুদ্ধে পাকিস্তান ভারতের কাছে প্রথমবার পরাজিত হলো।
Image credit Google
তাদের পরিচয় যে এমনই সেটা তারা পরে আরও যুদ্দ্ব বাধিয়ে বুঝিয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী পাকিস্তানের সঙ্গে মাইত্রী স্থাপনে উদ্যোগী হয়ে সৌহার্দ বাস যাত্রার সূচনা করেন পাঞ্জাবের ওয়াঘা সীমান্ত থেকে লাহোর পর্যন্ত। প্রথম যাত্রায় তিনি নিজে যান। তখন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন নাওয়াজ শরীফ ও আর্মি প্রধান ছিলেন জেনারেল পারভেজ মুসারাফ। যিনি পরে নাওয়াজ শরীফকে এক মধ্যরাতের অভ্যূথানে গদি থেকে সরিয়ে নিজে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করেন। পাকিস্তান
এই এই বন্ধুত্বের জবাব দিয়েছিলো কার্গিল যুদ্ধ বাধিয়ে। এবং ইটা আজ সবার জানা আবারও পরাজিত হয়েছিল।সেই ট্র্যাডিশন এখনো চলছে
বলাবাহুল্য এই ট্র্যাডিশন এখনো চলছে।প্রধানমন্ত্রী মোদী ২০১৪ তে প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হয়ে তার শপথ গ্রহণে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী , যিনি আবার প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন --সেই নওয়াজ শরীফ কে। তারপর পাকিস্তানের কুৎসিত জঙ্গী রূপ আজও আমরা দেখছি যার নিন্দার ভাষা নেই। পুলওয়ামা এখনো স্মৃতিতে টাটকা। জবাব পেয়েছে ভারতের সার্জিকাল স্ট্রাইকে। আরো একবার। কিন্তু থেকে শেখা ভারত ভুলেও আর পাকিস্তানকে ১৯৬৫ এর পরে প্রজাতন্ত্র দিবসে আমন্ত্রণ জানায়নি। ভাগ্গিস জানায়নি।
No comments:
Post a Comment
Thank You .Please do not enter any spam link in the comment box.