Image credit google
এগুলো না জানলেই নয় -
অনেকেই পাশের ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসা করতে পারেন এই তথ্যগুলো জানেন কিনা ? আমরা অনেকেই নতুন রিলিজ হওয়া সিনেমা বা নতুন লঞ্চ হওয়া মোবাইল ফোন সহ আরও কত কি নিয়ে সারা দিন ব্যস্ত থাকি। দেশের নানা ঘটনা নিয়ে তর্কে দিন কেটে যায়। কিন্তু এসব সুযোগই পাওয়া যেত না যদি নির্মম ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্ত হয়ে দেশ স্বাধীন না হতো। জানেন কি ১৯৪৭ এ দেশ স্বাধীন হলেও প্রকৃত স্বাধীনতার মর্যাদা লাভ করেছিল সেদিন যেদিন দেশের সংবিধান কার্যকর হয়। স্বাধীনতার ৮৯৪ দিন পর , ২৬ শে জানুয়ারি ১৯৫০ সালে। একটি গাছকে ফুলে ফলে ভরে উঠতে হলে তার শিকড়টা ভালো রাখতে হয়। শিকড়ে অর্থাৎ গোড়ায় যত্ন নিতে হয়। গোড়া কেটে মাথায় জল দিলে সে গাছ কি বাঁচে ? আসুন আমাদের অস্তিত্বের শিকড়টা কেমন সেটা দেখে নিই।
রচনা নয় ঘটনাকে ফিরে দেখা -
ব্রিটিশ ক্যাবিনেট মিশন এর সাথে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের মহান নেতৃবৃন্দের আলোচনার ফলশ্রতি হিসাবে ভারতের স্বাধীনতার ক্ষমতা হস্তান্তর ও সংবিধান প্রস্তুতের জন্য বিশিষ্ট নেতৃবৃন্দকে নিয়ে ভারতের গণপরিষদ গঠিত হয় এবং তার প্রথম মিটিং অনুষ্ঠিত হয় ১৯৪৬ সালের ৯ ডিসেম্বর। তারপর প্রচুর বিচার, বিবেচনা,আলোচনার পর ১৯৪৯ সালের ২৬ শে নভেম্বর সংবিধান চূড়ান্ত রূপ পায়। ১৯৫০ সালের ২৬ সে জানুয়ারি এই সংবিধান গণপরিষদ কতৃক স্বীকৃত ও গৃহীত হয়। ভারত প্রকৃত অর্থে স্বাধীন সার্বভৌম প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত হয়।
শপথ নিয়েই চললেন প্যারেডে -
আশ্চর্যের হলেও এটাই বাস্তব যে ১৯৫০ সালে এই ২৬ জানুয়ারী প্রথম প্রজাতন্ত্র দিবসের সকালে ,তৎকালীন গভর্নমেন্ট হাউস (বর্তমানে রাষ্ট্রপতি ভবনে) -এ রাজেন্দ্র প্রসাদ ভারতের প্রথম রাষ্ট্রপতি হিসাবে শপথ নেন এবং তারপর ভারতের সংবিধান যা বিশ্বের বৃহত্তমও , তা সারা দেশে কার্যকর করার নির্দেশ দিয়েই রওনা হয়ে যান আরউইন স্টেডিয়াম এর উদ্দেশ্যে। এখানেই ভারতের প্রথম প্রজাতন্ত্র দিবস অনুষ্ঠিত হয়।
Image credit Google
তিনি ২১ তোপধ্বনির মধ্যে দিয়ে জাতীয় পতাকা উত্তলন করেন। শুরু হয় প্রজাতান্ত্রিক ও বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ ভারতের স্বাধীন পথ চলা। এবার থেকে দেশের মানুষ তার নিজের অধিকার নিজে রক্ষা করার অধিকারী হলো। কেন ২৬ শে জানুয়ারিকে বাছা হলো ?
আসলে এই দিনটির বীজ পোতা হয়েছিলো অনেক পূর্বেই । ১৯২৯ সালের ৩১ সে ডিসেম্বর। জাতীয় কংগ্রেস এর লাহোর অধিবেশনে। এই বিশেষ অধিবেশন টি ঐতিহাসিক। কারণ এই অধিবেশনেই সেদিন ১২ টায় তৎকালীন কংগ্রেস সভাপতি জহরলাল নেহেরু সহ উপস্থিত নের্তৃবৃন্দ ২৬ শে জানুয়ারীকে স্বাধীনতা দিবস হিসেবে গণ্য করবেন বলে শপথ নেন । যার ফলশ্রুতি হিসেবে হয় অসহযোগ আন্দোলন যার থেকে ঠিক হয় ১৯৩০ সালের ২৬ সে জানুয়ারী পূর্ণ স্বরাজ( সম্পূর্ণ স্বাধীনতা ) দিবস ঘোষণা করার।এই ঐতিহাসিক ঘটনাকে সম্পূর্ণতা দিতেই স্বাধীন ভারতের গণপরিষদ ২৬ শে জানুয়ারী কে প্রজাতন্ত্র দিবস হিসেবে ঘোষণা করে.
পাকিস্তান দেখবে ভারতীয় সেনার প্রদর্শিত বিশ্বের বৃহত্তম সামরিক কুচকাওয়াজ -
বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র , বিশ্বের বৃহত্তম সংবিধানের মতোই ২৬ সে জানুয়ারি ভারতের রাজধানী দিল্লীর রাজপথে যে সামরিক কুচকাওয়াজ হয় সেটাও বিশ্বের বৃহত্তম প্যারেড ও হয়তো সুন্দরতমও বটে।
Image credit Google
ভারতকে টুকরো করে যে দেশের জন্ম , ভারতের সর্বনাশ করা যে দেশের মূল নীতি সেই পাকিস্তান একই সময়ে স্বাধীন হলেও পূর্ণ গণতন্ত্র হয়ে উঠতে পারল না। সে দেশে কোনো সময়েই জনতার ভোটে জেতা সরকার স্থায়ী হতে পারেনি। প্রতিবারই কোনো না কোনো সামরিক শাসক সেই সরকারকে ফেলে দিয়ে শাসন ক্ষমতা কব্জা করেছে। সন্ত্রাসবাদ সে দেশের মূল নীতি। তাই ভারতের রাজপথের এই সমারোহ আরো গুরুত্বপূর্ণ কারণ পাশাপাশি দুটি দেশের একটিতে সন্ত্রাসবাদের জিগির ও অন্যটিতে গণতন্ত্রের জয়ধ্বনি সারা বিশ্ব যাতে দেখতে পায়। আর পাকিস্তান ? ভারতের সামরিক শক্তি এই মহাপ্রদর্শনী দেখে নিশ্চয় খুশি হয় না। বিশেষত যারা তিন তিনটি যুদ্ধ ভারতের কাছে হেরেছে। এবার জেনে নিন প্রজাতন্ত্র দিবসের চমকে দেওয়া কিছু তথ্য :-
· ভারতের মূল সংবিধান হাতে লেখা এবং সেটি লিখেছিলেন প্রেম বিহারী নারায়ণ রাইজাদী।
· সংবিধানের মূল সংস্করণ মাত্র দুটি , একটি হিন্দি ও একটি ইংরাজি।
· মূল সংবিধান দুটি সংসদ ভবনের একটি হিলিয়াম বাক্সে সংৰক্ষিত আছে।
· এখনো পর্যন্ত মাত্র ১০০০ টি ফটো লিথোগ্রাফি কপি আছে সংবিধানের।
· বিশ্বের বহু দেশের সংবিধানের বিশেষ অংশের মিলিত রূপ হল ভারতের সংবিধান বিশেষত ফ্রান্স , রাশিয়া ও ইংল্যান্ড উল্লেখযোগ্য।
· সংবিধান প্রস্তাবনার রচনার মূল দ্বায়িত্ত্ব ছিল ডঃ বি আর আম্বেদকরের উপর।
· ১১৮ টি গণপরিষদের মিটিং ২ বছর ১১ মাস ১৮ দিন লাগে সংবিধান রচনায়।
· সংবিধান গণপরিষদে চূড়ান্ত হয় ২৪ সে জানুয়ারী ১৯৫০ , এবং তাতে গণপরিষদের ৩০৮ জন সদস্য স্বাক্ষর করেন।
সত্যমেব জয়তে -
জানেন কি ভারতের সংবিধানের মূল ভিত্তি বা বাণী কি ? তা হলো "সত্যমেব জয়তে"। এই মন্ত্রটি নেওয়া হয়েছে অথর্ব বেদের মাণ্ডুক্য উপনিষদের থেকে।ভারত দেশের মূল বাণীটি নির্বাচনের দায়িত্ত্ব ছিল বিশিষ্ট স্বাধীনতা সংগ্রামী ও তৎকালীন জাতীয় কংগ্রেসের ৪ বারের সভাপতি পন্ডিত মদন মোহন মালব্য-এর উপর। এই মন্ত্র্রের অর্থ "সত্য সবার উপরে" বা "সত্যই একমাত্র জয়ী হয় "।
উৎযাপনের কারণ -
দৈনন্দিন কূটকচালি ও জীবনসংগ্রামের মধ্যদিয়েই আমাদের এগিয়ে চলা। সংবিধান এই এগিয়ে চলাকে বিশৃঙ্খল হতে দেয় না। কিন্তু সংবিধানের মূল তাৎপর্যটা জানা থাকলে তবেই তো আসবে তাকে মেনে চলার কথা। নির্দিষ্ট ভাবে কিছু না জেনেই শুধু সবাই যদি নিজের ভালো লাগা ও ভালো থাকার স্বার্থে মগ্ন থাকি তাহলে তো বিশৃঙ্খলা আসবেই। তাই আগে প্রয়োজন সংবিধানটা জানা। সেটা মেনে চলা। এর অনেক উপকার। প্রধানতঃ এর ফলে দেশের আইনের সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা জন্মায় ও তার ফলে আইন ভঙ্গ কারীকেও সহজে চিহ্নিত করা যায়। নিজে সুরক্ষিত থাকা যায়। তাই সংবিধানের সহজ ও বোধগম্য ক্ষুদ্র রূপের শিক্ষা আজ সমাজের বড় প্রয়োজন। বিদ্যালয় থেকেই সেটা হোকনা শুরু। এছাড়া টেলিভিশন , সোশ্যাল মিডিয়া কে ব্যাবহার করে এই প্রচার যদি সরকারের তরফ থেকে হয় , এবং নিয়মিত হয় তাহলে স্বাধীন ভারতের আধুনিক সমাজ আরো সুন্দর হতে বাধ্য।এই দিবস উৎযাপনের মাধ্যমে সেই কথা সবার মনে-প্রাণে ,অন্তরে প্রবেশ করে কিনা সেটাই দেখার।
No comments:
Post a Comment
Thank You .Please do not enter any spam link in the comment box.