
বিলম্ব কেন ?
ইয়াকুব মেমনের ফাঁসি - রাত দুটোতেও সুপ্রিম কোর্ট খুলে বিচার ।
বিচারের নিয়ম-“একজন অপরাধী ছাড়া পেলেও একজন নিরপরাধ ব্যক্তি বিচারের ভুলে যেন শাস্তি না পায়” ।
এদেশের মৃত্যুদণ্ডের নজির খুব বেশি নেই। আইন ও সংবিধান এই গণতান্ত্রিক দেশে জঘন্যতম অপরাধে মৃত্যু দন্ড পাওয়া অপরাধীকে নির্দোষ প্রমাণ করার প্রচুর সুযোগ দেয়। সর্বোচ্চ সাজার হাত থেকে বাঁচার জন্য সর্বোচ্চ আইনি সুযোগ। উদ্দেশ্য এই যে একজন অপরাধী ছাড়া পেলেও একজন নিরপরাধ ব্যক্তি বিচারের ভুলে যেন শাস্তি না পায়। আর মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পরবিচারে যদি কোনো ভুল থেকেও যায় তার সংশোধনের আর কোনো সুযোগ থাকে না। তাই সমস্ত প্রটোকল উপেক্ষা করে এদেশের সর্বোচ্চ আদালত ইয়াকুব মেমনের ফাঁসির মাত্র কিছু ঘন্টা পূর্বে রাত প্রায় ২ টার সময় আদালত খুলে রায় পুনর্বিচার করতে বসেন। যদিও মেমনের আইনজীবীদের সেই আবেদন সুপ্রিমকোর্ট রাত প্রায় ৪ টের সময় নাকচ করে দেয় ও নির্ধারিত সময়েই তার ফাঁসি কার্যকর করা হয়।দিনটা ছিল ৩০ সে জুলাই ২০১৫ । এই ঘটনা এদেশের বিচার ব্যবস্থার মহান রূপকে সারা বিশ্বের সামনে তুলে ধরে। প্রমাণ করে হাজার সমালোচনা সত্ত্বেও এদেশের আইনি ব্যবস্থা কত মজবুত ও উদার। ভারতে একজন ফাঁসির আসামী ফাঁসির পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত সুযোগ পায় নিজেকে নিরাপরাধ প্রমাণ করার।
নির্ভুল বিচারের স্তর-
রবীন্দ্রনাথ এ ব্যাপারেও পথ প্রদর্শক। তাই তিনি লিখেছিলেন "দণ্ডিতের সাথে দণ্ডদাতা কাঁদে যবে সমান আঘাতে / সর্বশ্রেষ্ঠ যে বিচার." । এদেশের বিচারব্যবস্থার প্রতি বহু মানুষের একটি সমালোচনা আছে তাহলো বিলম্বিত বিচার।

ভারতের বিচার ব্যবস্থা নিম্ন আদালত , রাজ্য উচ্চ আদালত বা হাই কোর্ট এবং দেশের উচ্চতম আদালত বা সুপ্রিম কোর্ট সহ আরও কিছু বিশেষ আদালতের স্তরে বিভক্ত ও বিন্যস্ত। একজন অপরাধী তখনি অপরাধী ঘোষিত হন যখন তিনি এই সবকটি আদালতের বিচারে দোষী সাব্যস্ত হন। নিম্ন থেকে উচ্চতম আদালত পর্যন্ত রায় পুনর্বিচারের সুযোগও অসংখ্য।ফাঁসির ক্ষেত্রে তো সব বিচার শেষে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণ ভিক্ষার আবেদন ও করা যায়।
অপরাধীর বাঁচার শেষ চেষ্টা-
নির্ভয়া মামলার দোষী চার আসামীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর কেন বিলম্ব হচ্ছে বারবার তা আজ সারা দেশের প্রশ্ন। পাশাপাশি এটাও ভাবা দরকার যে যে তার মৃত্যু নিশ্চিত জেনে গিয়েছে সে তো বাঁচার যত যত রকম উপায় আছে তার সব চেষ্টা শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত করবে। আর মনস্তত্ব বিশেষজ্ঞ দের মতে এই প্রকার জঘন্য অপরাধীদের মন মানসিকতা সাধারণের তুলনায় অনেকটাই আলাদা ও বিকৃতও বলা যায় ।
কতটা শিক্ষা নেবে বিকৃত মন ?
বিচার ও বিচারের শাস্তিকে একটি দৃষ্টান্ত বা প্রতীক হিসাবে ধরা হয়। এখানে নির্ভয়ার মর্মান্তিক মৃত্যু যেমন এদেশের সংখ্য নির্যাচিতা নারীর মৃত্যু যন্ত্রনার প্রতীক তেমনই তার উপর নির্মম অত্যাচার চালানো এই চার নররাক্ষস এমনই অসংখ্য অত্যাচারী ধর্ষকের বিকৃত বাসনা , আদীম লিপ্সা ও নৃশংসতার প্রতীক। এই নির্ভয়ার মতো নারীরা যেমন আমাদের ঘর বাড়ী ও সমাজের অংশ তেমনি এই সমাজের আনাচে কানাচে - সর্বত্র মিশে আছে এরকমই অনেক নররাক্ষসের দল। অনেক সংযমী ,শিক্ষিত ,পরিশীলিত পুরুষও মুহূর্তের মানসিক বিকৃতির বশবর্তী হয়ে এরকম জঘন্য অপরাধ করে ফেলে। কাজেই যে পুরুষ শরীরটা চরম বাসনা চরিতার্থ করতে আগামী পরিণতির কথা না ভেবেই একটি নারী শরীরের উপর জঘন্য অত্যাচারে লিপ্ত হয় , সেই পুরুষের অপরাধটার উৎসস্থল তো তার মনে। দৃষ্টান্ত মূলক মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি সেই মনে ধাক্কা দিচ্ছে কি ? সময় বলবে।
নির্ভয়াকে জীবিত ফিরিয়ে দাও
এতো কিছুর পর যে মৃত্যু দন্ড কার্যকর করার সময় আসে তখন তা নির্ভুল না বললে তো বলতে হয় নির্যাচিতার বাঁচার আকুতিটাই অপরাধ। তার উপর করা অত্যাচারটা নয়। যে মেয়েটি মরার মুহূর্তে শেষ বারের মতো বাঁচতে চেয়েছিলো , উন্নততর চিকিৎসাও যাকে বাঁচাতে পারলো না তার নতুন করে বেঁচে ওঠা কি সম্ভব ? যারা এই নরখাদকদের হয়ে সওয়াল করছেন তারা নির্ভয়াকে আবারবাঁচিয়ে আনুন। সাত বছরে পারেননি।১লা ফেব্রুয়ারী ২০২০ র এখনও কয়েকদিন বাকি আছে। একমাত্র নির্ভয়াকে জীবিত ফিরিয়ে আনলেই তো এই তার হত্যাকারীদের ক্ষমা পাওয়ার প্রশ্ন ওঠে।

মৃত্যু ঠিক কেমন ? এটাই শাস্তি
মৃত্যু কি দেখা যায় ? কার কবে মৃত্যু হবে কেউ কি জানে ? উত্তর হ্যাঁ । এই তো দেখুন। নির্ভয়ার অত্যাচারীরা জানে কবে তারা মরবে।ঘনিয়ে আসা মৃত্যুর পদধ্বনি বোধহয় ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছে। দিন.... ঘন্টা ..... মিনিট... সেকেন্ড .. ওই সে আসছে। মৃত্যু আসছে। ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দিলে তো সব শেষ ।মৃত্যু কেমন , বাঁচতে কতটা ইচ্ছা হয় সেটা এবার জানছে তারা । এটাই তো শাস্তি ।
No comments:
Post a Comment
Thank You .Please do not enter any spam link in the comment box.