Image credit Google
উপরের ছবিটি মানুষের মনে তৃপ্তি দেয়। নীতি ও নীতির বিরোধিতা থাকবে , সঙ্গে বৃহত্তম গণতন্ত্রে ফায়ার আসুক সৌজন্য ও সভ্যতা। লড়াই তা নীতি আদর্শের হোক। মানুষ বেছে নিক তার প্রিয় নীতিটি
বিরোধিতা নতুন নয়
রবিবার বলিউড অভিনেত্রী স্বরা ভাস্কর নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের তীব্র বিরোধিতা প্রকাশ করেন স্বরা ভাস্কর ইন্দোরের জনসভায় ভাষণ দেওয়ার সময় বলেন, যে এই আইন সংবিধান বিরোধী ও তার সাথে বড় বিশ্বাসঘাতকতা । সরকারের সমালোচনা করে তিনি নাগরিকত্ব আইনের ভুলত্রুটিগুলো নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি জানান যে ভারত স্বাধীনতার সময় থেকে সার্বভৌম ধর্মনিরপেক্ষ প্রজাতন্ত্র। তাই তার সংবিধানের মূল কথা এই আইনের মাধ্যমে লংঘন করা হয়েছে।তার মতো আরো অনেকে একই কথা ভিন্ন ভিন্ন আন্দোলন বা মঞ্চে বলেছেন। নতুন কিছু নয়।
সমর্থনও নতুন নয়
অন্যদিকে আজই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দিল্লীতে এক জনসভায় জানান যে যখন বিরোধীদের সব সংশয় সরকার মনোযোগ দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছে তখন সেটা নিয়ে আর বিক্ষোভ আন্দোলন হয় উচিত নয়। বিজেপি ও সরকারের তরফে সংসদে ও সংসদের বাইরে সরকার পক্ষের সব নেতাই একাধিকবার সংবাদ মাধ্যমে জানিয়েছেন যে সি এ এ - নাগরিকত্ব ছিনিয়ে নেওয়ার আইন নয় , নাগরিকত্ব দেওয়ার আইন। এটিও নতুন কিছু নয়।
আইন নিয়ে সমস্যা - আইনি পথে সমাধান কাম্য
যদিও বিভিন্ন সংস্থা ও সংগঠনের পক্ষ থেকে এই বিষয়ে সুপ্রীম কোর্টে ইতিমধ্যেই বেশ কিছু মামলা দায়ের হয়েছে। প্রশ্ন হলো দেশের সংসদের দুটি কক্ষেই পাশ হওয়া একটি আইন দেশের একটি বৃহৎ অংশের মানুষের যদি পছন্দ না হয় তখন আইনি উপায়েই তার সমাধান করা যায় এবং আদালতে সেই সেই যুক্তিগুলিকেই উপস্থাপিত করা যায় যেগুলি আন্দোলন কারীরা বিভিন্ন অবরোধ- আন্দোলনে তুলছেন।

আন্দোলন , স্বাধীন মতপ্রকাশ যেমন দেশের মানুষের অধিকার ঠিক তেমনই কোনো ধংসাত্মক আন্দোলনে দেশীয় সম্পত্তির ক্ষতি ও বহু নিরীহ মানুষ অসুবিধায় পড়েন - অনেকেরই রাস্তাঘাটে প্রয়োজনীয় কাজকর্ম,রুজি রোজগার ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এই ক্ষতিগুলোও কিন্তু পূরণ হয় না।
প্রতিবাদের আধুনিক উপায়
কার কোন আন্দোলন সঠিক , কার কোন বক্তব্য সঠিক , সেটা বিচারের ভার তো জনতার। আজ উচ্চ প্রযুক্তি ও গণমাধ্যমের অসাধারণ উন্নতির ফলে নিজের মতামত অনেক দ্রুত অনেক বেশি মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে যায় সহজেই। তার পরও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল পথে নেমে ধর্ণা বিক্ষোভ , আন্দোলন করে বিভিন্ন ইস্যুতে। শুধু ভারতে নয় গণতান্ত্রিক অনেক দেশেই সরকার বিরোধী আন্দোলন হয়। কিন্তু গণতন্ত্রের বয়স বাড়ার সাথে সাথে , আধুনিক সময়ে আন্দোলনের পদ্ধতি কি পাল্টানো উচিত নয় ?
ভাষা ও ভঙ্গির বর্তমান রূপ কি কাম্য ?
অন্যদিকে , রাস্তাঘাট যদি নিরাপদ না হয় তাহলে নিজের রোজগার যেমন ক্ষতিগ্রস্থ হয় তেমনি দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়। ইদানিং একটা ট্রেন্ড হয়ে দাঁড়াচ্ছে , অনেকেই কোনো বক্তব্য রাখার সময় বক্তব্যের শালীনতা রক্ষা করছেন না। ব্যক্তিগত আক্রমণ রাজনৈতিক গন্ডি ছাড়াচ্ছে। একজন ভুল বললে তার বিরোধিতাও আরও উগ্র ভাবে হচ্ছে। ফলে উগ্রতা , অশালীনতা ক্রমশ বেড়েই চলেছে। কোথাও তো থামতে হবে। আগামী শিশু কি এইগুলি শিখেই বারো হবে ? রাজনৈতিক বা সিনেমা জগতের মানুষরা অন্যান্য ক্ষেত্রের মানুষের থেকে অনেক বেশি প্রচারের আলোয় থাকেন। তাই সাধারণ মানুষের মনের উপর তাদের প্রভাবও বেশি থাকে। তাই যে ভঙ্গি বা যে ভাষা তারা আজকাল প্রয়োগ করছেন মানুষ তথা শিশু মনে তার দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব পড়ছে।
মূল ইস্যু গুলো পিছনে পরে যায়

নির্বাচন গণতন্ত্রের প্রধান বিষয়। সারা বছর স্কুল , কলেজে কমিটি নির্বাচন থেকে পঞ্চায়েত, পুরসভা ,বিধান সভা , লোকসভা - কোনো না কোনো নির্বাচন তো রয়েইছে । নির্বাচন মানে কি যুদ্ধ ? একজন আর একজনের প্রতি সীমাহীন অশালীন ভাষা প্রয়োগ ? এতে হয়তো প্রচার পাওয়া যায় , কিন্তু মূল সমস্যার একটাও কি সমাধান হয় ? জল , কল , রাস্তা , শিক্ষা , স্বাস্থা , অভ্যান্তরীন ও বৈদেশিক নীতি , অর্থনীতি , আইন , প্রযুক্তি , দেশের অগ্রগতি - নির্বাচনের প্রচারের যেগুলি মূল বিষয় হওয়া উচিত সে গুলো ? উচ্চারিটি হয় ঠিক ই কিন্তু অনেক পিছনের সারিতে পরে যায়। গুরুত্ত্বহীন হয়ে পরে।
বিচারের দীর্ঘসূত্রিতা - ধৈর্য্যহীনতার মূল
আইন এবং বিচার ব্যবস্থার দীর্ঘসূত্রিতার মধ্যে এই রোগ লুকিয়ে নেই তো ? যেকোনো মতের বিরুদ্ধ মত থাকতেই পারে , কিন্তু নির্ণায়ক ক্ষেত্রে তার বিচার করবে কে যে কোন মতটি ঠিক আর কোনটা ভুল ? বিচারের স্থান তো আদালত। কিন্তু দেশের বিভিন্ন আদালতে কয়েক লক্ষ মামলা অমীমাংসিত হয়ে পরে আছে। মুশকিল হলো বিবাদ যতটা , বিবাদ মীমাংসার পরিকাঠামো তার তুলনায় অত্যন্ত কম। তাই বিরোধের যদি মীমাংসা না হয় , তাহলে বিবাদমান পক্ষরা সম্মুখ সমরে নেমে পড়বে। সবই আছে , আদালত আছে , নির্বাচন কমিশন আছে - কিন্তু অভিযোগ আর প্রতিকারের অনুপাত এত কম যে তা চোখেই দেখা যায় না। তাই বিচার আদালতের প্রসারণ দরকার , সিদ্ধান্ত প্রয়োগকারী সংস্থাগুলি মজবুত হওয়া দরকার - উন্নত প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে মানুষের অভিযোগ দায়ের করা এবং অভিযোগ এর দ্রুত বিচার বা নিষ্পত্তি যদি নিশ্চিত করা যায় তাহলে ক্রমবর্ধমান এই সমাজ অনেক দ্রুত একটি সুন্দর সমাজে পরিণত হতে পারে।
কটা আইন সাধারণ মানুষ জানে ?
আজকের সি.এ.এ. বা. এন. আর.সি. সহ বিভিন্ন আন্দোলন মানুষের আলোচনার মুখ্য বিষয়। আইনটার স্থানীয় ভাষার অনুবাদ কজন সাধার মানুষ পেয়েছেন ? কোটি রাজনৈতিক দল আসল আইনের প্রতিটি পাতার অনুবাদ করে সাধারণ মানুষকে দিয়েছে ? ভালো খারাপ যেটাই তাতে থাকুক তা মানুষের জানার অধিকার আছে। মানুষ পরে জেনে সিদ্ধান্ত নেবে নিজের নিজের বুদ্ধি বিবেচনা অনুযায়ী - সেটাই তো বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের গরিমা হওয়া উচিত।
No comments:
Post a Comment
Thank You .Please do not enter any spam link in the comment box.