মানুষের ভাষা ওয়েবডেস্ক
ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের শীর্ষ বাণিজ্য উপদেষ্টা পিটার নাভারোর মন্তব্যে সোমবার ভারতের রাজনৈতিক মহলে প্রবল আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। নাভারো ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষিত ২৫ শতাংশ শুল্ক এবং রাশিয়ান তেল আমদানির প্রসঙ্গে ভারতকে “ক্রেমলিনের লন্ড্রি” আখ্যা দিয়ে বলেন, “ভারতে ব্রাহ্মণরা নিজেদের মুনাফা বাড়াচ্ছে সাধারণ মানুষের ক্ষতির বিনিময়ে।”
এই বক্তব্যকে ভারতীয় রাজনৈতিক মহল এবং অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা ‘জাতিবিদ্বেষী’, ‘অপমানজনক’ এবং ‘ভারতবিরোধী’ বলে নিন্দা করেছেন। বিশেষ করে “ব্রাহ্মণ মুনাফাখোর” শব্দবন্ধকে ঘিরে ক্ষোভ ছড়িয়েছে, যা ভারতের সামাজিক বাস্তবতাকে বিকৃত করে উপস্থাপনের প্রচেষ্টা বলে অনেকে মনে করছেন।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির অর্থনৈতিক উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সঞ্জীব সান্যাল নাভারোর কথাকে ঔপনিবেশিক মানসিকতার ধারাবাহিকতা বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, “এ ধরনের মন্তব্য ঊনবিংশ শতকের জেমস মিলের মতো ঔপনিবেশিক লেখকদের ভারতবিরোধী বর্ণনার প্রতিধ্বনি। আমেরিকার অভ্যন্তরীণ রাজনীতি থেকে চাপ সৃষ্টির জন্য ভারতকে লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে।” কংগ্রেস নেতা পবন খেরা কঠোর ভাষায় জানান, “মার্কিন প্রশাসন ভারতের বিরুদ্ধে এ ধরনের ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলতে পারে না। ভারতের জ্বালানি নীতি সর্বদাই জাতীয় স্বার্থকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে।”
শিবসেনা নেত্রী প্রিয়াঙ্কা চতুর্বেদী মন্তব্য করেন, “‘ব্রাহ্মণ’ শব্দ ব্যবহার করে ভারতের সামাজিক কাঠামোকে রাজনৈতিক অস্ত্র বানানো লজ্জাজনক ও ষড়যন্ত্রমূলক। আমেরিকার প্রেক্ষিতে ব্রাহ্মণ শব্দের অন্য অর্থ থাকতে পারে, কিন্তু ভারতের সঙ্গে যুক্ত করে ব্যবহার করা মোটেই নির্দোষ নয়।”
তৃণমূল সাংসদ সাংবাদিক সাগরিকা ঘোষ যদিও মার্কিন প্রেক্ষাপটে “Boston Brahmin” শব্দের ঐতিহাসিক ব্যবহার ব্যাখ্যা করেছেন, তবুও জনমতের একাংশ মনে করছে—ভারতকে টার্গেট করতেই এই শব্দ ইচ্ছাকৃতভাবে ব্যবহার করা হয়েছে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্ষোভ উগরে দিয়ে বহু ভারতীয় নাগরিক লিখেছেন, “আমাদের ধর্মীয়-সাংস্কৃতিক পরিচয় নিয়ে খেলা করা চলবে না। ভারতবিরোধী আখ্যান চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে।”
ট্রাম্প প্রশাসন সম্প্রতি ভারতীয় রপ্তানির ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করেছে, যা চীন ও তুরস্কের তুলনায়ও বেশি। একই সঙ্গে রাশিয়া থেকে সস্তায় তেল আমদানি করা নিয়ে ওয়াশিংটনের অসন্তোষ প্রকাশ পাচ্ছে বারবার। নাভারোর মন্তব্য সেই অসন্তোষেরই তীব্র বহিঃপ্রকাশ বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত।
এদিকে, সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের শীর্ষ বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি রাশিয়া ও চীনের নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। ঠিক সেই সময়ে মার্কিন শীর্ষ উপদেষ্টার এই আক্রমণাত্মক মন্তব্য কূটনৈতিক দিক থেকেও তাৎপর্যপূর্ণ।
ভারতীয় বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আমেরিকার অভ্যন্তরীণ রাজনীতি ও নির্বাচনী প্রচারের অংশ হিসেবে ভারতের বিরুদ্ধে ইচ্ছাকৃতভাবে নেতিবাচক প্রচার চালানো হচ্ছে। ভারত সরকার ও জনগণ ঐক্যবদ্ধভাবে এই ধরনের ‘অপমানজনক’ মন্তব্যের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।
নাভারোর বক্তব্য নিছক বাণিজ্যিক মন্তব্য নয়, বরং ভারত ও হিন্দু সংস্কৃতির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার প্রচেষ্টা—এমনই অভিমত বহু ভারতীয় নাগরিকের।
0 মন্তব্যসমূহ