অবিশ্বাস্য!! বিজেপির চেয়ে ১৫ লাখ ভোট বেশি পেয়েও তেজস্বীর আরজেডি হারল! এমন ফলাফলের কারণ কী?
মানুষের ভাষা ব্যুরো: বিহার নির্বাচন ২০২৫-এর ফলাফল রাজনৈতিক মহলে বিস্ময় সৃষ্টি করেছে। মহাগঠবন্ধনের প্রধান শক্তি হিসেবে তেজস্বী যাদবের আরজেডি মাত্র ২৫টি আসন জিততে পারলেও, ভোটের হিসেব বলছে তারা একাই পেয়েছে সর্বোচ্চ সংখ্যক ভোট।
আরজেডি ২৩ শতাংশ ভোট পেয়েছে, যা গত বছরের ২৩.১১ শতাংশের তুলনায় সামান্য কম। সংখ্যায় তাদের প্রার্থীরা ১ কোটি ১৫ লাখ ৪৬ হাজার ৫৫টি ভোট পেয়েছেন। অন্যদিকে, বিজেপি পেয়েছে ১ কোটি ৮১ হাজার ১৪৩টি ভোট— অর্থাৎ আরজেডি-র চেয়ে প্রায় ১৫ লাখ ভোট কম। কিন্তু আসন সংখ্যার (৮৯) হিসাবে বিজেপি আরজেডি-র চেয়ে অনেক এগিয়ে।
তাহলে প্রশ্ন হলো— সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়েও আরজেডি কেন পিছিয়ে রইল?
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, মূল কারণ হলো ভোটের ভাগ (Vote Share) বনাম আসন রূপান্তর (Seat-Conversion)। আরজেডি বহু কেন্দ্রে বিপুল সংখ্যক ভোট পেয়েছে, কিন্তু তা জয়ের সীমা পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেনি। কোথাও দ্বিতীয়, কোথাও তৃতীয় হয়েছে। ফলে মোট ভোটের সংখ্যা বেড়ে গেলেও, আসন সংখ্যা বাড়েনি। এই ভোটগুলি বেশিরভাগই 'নষ্ট ভোট' (wasted votes), যা হেরে যাওয়া প্রার্থীদের ঝুলিতে জমা হয়েছে।
আরজেডি ১৪৩টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল, অন্যদিকে বিজেপি এবং জেডিইউ প্রত্যেকে মাত্র ১০১টি আসনে লড়েছিল। ফলস্বরূপ, আরজেডি ৪২টি বেশি আসনে ভোট পাওয়ার সুযোগ পায়, যা সরাসরি তাদের মোট ভোটের ভাগ বাড়িয়েছে, কিন্তু তাদের প্রকৃত নির্বাচনী জয় বাড়ায়নি।
একদিক থেকে দেখতে গেলে, এই নির্বাচনের দুঃখজনক নায়ক হলেন আরজেডি-র তেজস্বী যাদব। বিহারে তার দল এককভাবে সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়েছে (বিহারের নির্বাচনে আরজেডি-র ভোটের ভাগ)। গত নির্বাচনের তুলনায় আরজেডি-র ভোট কমেছে মাত্র ০.১২ শতাংশ। ২০২০ সালের বিধানসভা নির্বাচনে আরজেডি পেয়েছিল ২৩.১১ শতাংশ ভোট, যা এবার কমে হয়েছে ২২.৯৯ শতাংশ।
আবার, কংগ্রেসের ভরাডুবি হলেও তাদের ভোট খুব বেশি কমেছে এমন নয়। বিহারে কংগ্রেসের ভোটের ভাগ খুব বেশি ছিল না। ২০২০ সালে কংগ্রেস পেয়েছিল ৯.৪৮ শতাংশ ভোট, যা এবার কমে হয়েছে ৮.৭২ শতাংশ। অর্থাৎ, তাদের ভোট কমেছে ০.৭৬ শতাংশ। আর জোটের দুই প্রধান শরিকের সম্মিলিত ভোট কমেছে ০.৮৮ শতাংশ, যা ১ শতাংশের কম।
তাহলে জোটের ভুল কোথায় হলো?
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের মতে, এর কারণ হলো রাহুল গান্ধীর রাজনীতিতে ধারাবাহিকতার অভাব। তবে এটাও সত্যি যে বিহারে কংগ্রেস সংগঠনকে শক্তিশালী করার মূল দায়িত্ব স্থানীয় নেতাদেরই। বাংলাতে শুভেন্দু-সুকান্ত-দিলীপ ঘোষরা যদি বিজেপি সংগঠন গড়তে ব্যর্থ হন, তাহলে বিহারে নরেন্দ্র মোদীর পক্ষেও নির্বাচনে সফল হওয়া কঠিন হবে।
দ্বিতীয়ত, জোট শরিকদের মধ্যে সারাবছর যৌথ কর্মসূচির অভাব এবং ঐক্যের প্রচেষ্টার ঘাটতি। ভোটের সময় জোট বাঁধা, আর ভোট শেষে গণ্ডগোল।
তৃতীয়ত, কংগ্রেস তাদের সামর্থ্যের চেয়ে বেশি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য দর কষাকষি করেছে। তারা ৬০টিরও বেশি আসনে লড়েছে, অথচ কংগ্রেসের ততটা শক্তি নেই।
চতুর্থত, হায়দরাবাদ থেকে উড়ে এসে এআইএমআইএম (AIMIM) বিহারের মুসলিম ভোট ধরে কংগ্রেস ও আরজেডি-র অগ্রযাত্রা ব্যাহত করেছে। রাহুল-তেজস্বী তা আটকাতে পারেননি। তবে দিনের শেষে, গেম চেঞ্জার ছিল ১০,০০০ টাকা সরাসরি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে স্থানান্তরের ঘটনা। এই ভোটেই সবচেয়ে বড় পার্থক্য গড়ে দিয়েছে।
0 মন্তব্যসমূহ