Hot Posts

6/recent/ticker-posts

Ad Code

Recent in Home

হাইকোর্টের রায়ে শিক্ষার নবজন্ম | #wbsscscam, #sscscam

বিশেষ নিবন্ধ প্রবীর  রায় চৌধুরী

 

আজকের দিন টা বাংলার ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে  কেন ? আজ এমন কি হল ?  আজ রাজ্যের ইতিহাসে ঘটে যাওয়া সবচেয়ে বড় শিক্ষা দুর্নীতি মামলার রায় দান করলেন মহামান্য কলকাতা হাইকোর্ট  এক ধাক্কায় ২৫, ৭৫৩ জনের চাকরি বাতিল বলে ঘোষণা করলেন কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ  শুধু শিক্ষায় নয়,  শুধু রাজ্যে নয়,  সারাদেশের ইতিহাসে এত চাকরি একটি রায়ে বাতিল হওয়াটা অবশ্যই বিরল  দীর্ঘদিন যাবত চলা এই মামলা হাইকোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্টের অলিন্দে ঘুরপাক খাচ্ছিল  আর কলকাতার রাস্তায় ১০০০ দিনের উপর ধরনায় বসে দিন কাটছিল যোগ্য চাকরিপ্রার্থীদের  এত বড় রায়ের পর সেই রায় নিয়ে আইনি কাটাছেড়া বিশ্লেষণ হবে না তা কি হয় ? বরং বিভিন্ন রাজনৈতিক দল , সংগঠন,  বিশেষজ্ঞ মহল যথারীতি তাদের নিজস্ব মতামত দান করে চলেছেন চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ

 

এই পর্যন্ত তো সকলেরই এতক্ষন জানা হয়ে গেছে  দাঁড়ান   আসুন এগুলোকে সরিয়ে রেখে একটু চারপাশটা তাকিয়ে দেখি আরে হচ্ছিলটা কি?

 

বিষয়টা কি শুধুই চাকরি চুরি ? অর্থাৎ বলতে চাইছি যে,  বেআইনিভাবে শিক্ষকের চাকরি চুরি করাটাকে কি শুধু "চাকরি চুরি" শব্দবন্ধেই ব্যক্ত করা সম্ভব ?  একটু ভেবে দেখুন বিষয়টা আরো অনেক গভীর ভয়ংকর সর্বনাশা নয় কি ?

 

শিক্ষার সংঙ্গা তো অনেক বড়  সে নিয়ে যুগে যুগে নানা মনীষী এবং বিশেষজ্ঞরা নানা ব্যাখ্যা দিয়ে গেছেন   কিন্তু একটি কথায় তো সকলে একমত হবেন যে , আধুনিক এই যুগে যে কোন শিশুর শিক্ষাটা শুরু হয় বিদ্যালয় নামক একটি পবিত্রস্থান থেকে   যে পবিত্র স্থানে শিক্ষক নামক গুরুর কাছ থেকে শিক্ষা লাভ করে বেড়ে ওঠে আগামী প্রজন্ম   অন্তরের পরিস্ফুটন, বিবেকের উন্মোচন, মেধা জ্ঞানের বিবর্ধনের মাধ্যমে ভাবি কালের পথ চলার সামর্থ্য অর্জন করে ছাত্র সমাজ সমাজের অনু পরমানোর ন্যায় এই ছাত্র সমাজ আগামী সমাজের নিয়ন্ত্রক চালিকাশক্তিতে পরিণত হয় এভাবেই সময় এগিয়ে চলে... পূরাতন মুছে গিয়ে নতুন সমাজের বিকাশ ঘটে 

 

কিন্তু শিক্ষকই যদি অসৎ হয় ? অপারদর্শী হয় ? শিক্ষাদানে অক্ষম হয় ?  তবে তা সমাজের কাছে অপূরণীয় ক্ষতি   ভেবে দেখুন এইসব ভুয়ো শিক্ষকরাই আপনার আমার সন্তানদের শিক্ষা দেওয়ার নাম করে দিনের পর দিন ছলনা করে গেছে   কখনো কখনো ভুল শিক্ষা দিয়েছে যা সেই ছাত্রটি বা সেই ছাত্রীটি তার সারা জীবন বয়ে নিয়ে বেড়াবে  শিশু মনের অবাধ জিজ্ঞাসা ধমক খেয়েছে, মার খেয়েছে, লাঞ্ছিত হয়েছে এবং সেই জিজ্ঞাসা জিজ্ঞাসাই থেকে গেছে  এই অপদার্থরা যতদিন চাকরি,  বলা ভুল হলো অশিক্ষা দান করে গেল,  তাতে কতগুলো প্রজন্ম ধ্বংস হয়ে গেল ? আপনি যে রাজনৈতিক দলের সমর্থ্যক কি হন না কেন আপনার আদরের শিশুটির এই সর্বনাশটার কথা কখনো ভেবে দেখেছেন কি ?

 

দিনের পর দিন, এরা স্কুলে গেছে. ক্লাস নিয়েছে. আমার আপনার ট্যাক্সের টাকায় মাসের শেষে মাইনে নিয়েছে আর প্রতিদিন চুরি করেছে নিষ্পাপ শৈশব. ধ্বংস করেছে আগামী কয়েকটি প্রজন্মর ভিত্তিপ্রস্তর

 

শুধু ঘুর পথে ঘুষ দিয়ে শিক্ষকতার  চাকরি চুরি করেই কি এরা থেমে থেকেছে ভেবেছেন? ঘরে ঘরে কান পাকলেই শুনতে পাবেন এরা করে নি টা কি?

 


এরা ছাত্র-ছাত্রীকে ভুল শিক্ষা দিয়েছে , তাতেই খিদে মেটেনি. ক্লাসরুমে ছাত্রছাত্রীকে হুমকি দিয়েছে, তার কাছে প্রাইভেট টিউশন না পড়লে তিনি পরীক্ষায় নম্বর দেবেন না

 যোগ্য ছাত্র যোগ্য ছাত্রী অসাধারণ উত্তর লেখার পরেও গুমরে কেঁদেছে যখন দেখেছে তার থেকে ভুল উত্তর লেখার তারই বন্ধু বা বান্ধবী তার থেকে বেশি নম্বর পেয়ে গেছে  কারণ সেই বন্ধু বা বান্ধবী ওই নির্দিষ্ট ব্যক্তির কাছে প্রাইভেট টিউশন পরে-  এটাই তার বেশি নম্বর পাওয়ার একমাত্র কারণ  সমাজের আর সেই ছদ্দবেশী শিক্ষকের সম্পর্কে বিষিয়ে উঠেছে তার নিষ্পাপ মন 

 

 এভাবেই চলছিল. অভিভাবকরাও ধরেই নিয়েছিলেন এভাবেই চলতে হবে   কেউ প্রতিবাদ করলে এই ভুয়া শিক্ষক সেই ছাত্রকে বা ছাত্রীকে নানা ভাবে বেকায়দায় ফেলে সবাক শিখিয়ে দিতেন   দিনের শেষে সমাজ কি পেল? অধ্যাবসায় এবং পরিশ্রমের দ্বারা যে ছাত্র বা ছাত্রী টি পড়াশুনা করলো এবং শেষে এইভাবে ক্লাসের পর ক্লাস প্রতারিত হতে থাকলো তার ভবিষ্যৎ এবং তার মন কতটা সুস্থ সুন্দর থাকলো? সে তো শিখলো, একেবারে ছোট থেকে শিখল, ক্লাসের পরীক্ষায় ভালো লিখলেই ভালো নম্বর পাওয়া যায় না   তার জন্যে ওই ধরনের শিক্ষকদের সঙ্গে সেটিং  করতে হয় 

 

এরা করেনি টা কি ? এরা দিনের পর দিন ধরে ক্লাসরুমে নিজের নিজের প্রিয় ছাত্র-ছাত্রীকে কত রকম ভুল কৌশলে বেআইনিভাবে, না পড়ে পরীক্ষায় নম্বর পেতে হয় তার সব সব সহযোগিতা করে গেছে   মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিকের মত বড় মাপের পরীক্ষাগুলোও তার থেকে বাদ যায়নি   কোথায় কোন স্কুলে কোন (চোর) মাসতুতো ভাই এর গার্ড পড়বে, তা আগে থেকে জেনে নেওয়া, গুছিয়ে নেওয়া, যাকে  আজকাল সেটিং করে নেওয়া বলে,  তা  তারা আগে থেকেই করে নিত  ছাত্র পিছু টাকার রফা হতো এবং সেটা তারা তাদের তাদের কোচিংয়ের স্টুডেন্টদের জানিয়েও দিত   হলের মধ্যে পরীক্ষা চলার সময় সেটিং হয়ে থাকা অন্য এক এরকমই চোর তাদের টুকলি  সাপ্লাই দিয়ে দিত   যোগ্য পরিশ্রমী ছাত্র- ছাত্রীর এই দৃশ্য ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে দেখা ছাড়া আর কিছুই করার থাকতো না  পচন  ...আগাগোড়া পচিয়ে ছেড়ে দিয়েছে 

 

এরা করেনিটা কি? এতোতেও এদের খিদে মিটতো না  এদের দলবদ্ধ হাত পৌঁছে যেত মিড ডে মিলে, স্কুলের ফান্ডে--  যথা স্পোর্টস, ফাংশান, ডেভেলপমেন্ট ফান্ড ইত্যাদি ইত্যাদ   সবকিছুতেই গড়বড় করে দাও কোন ভয় নেই..... কোন ভয় নেই   মাথার ওপর ছোট , বড় , মেজ , সেজ সব নেতার হাত আছে   শুধু ভাগ দিয়ে খাও   তাহলেই কোন চিন্তা নাই কোন চিন্তা নাই     নিচে নামতে নামতে এরা এত নিচে নেমেছিল যে স্কুল চত্বরে বিয়ে বাড়ি ,জন্মদিন, পার্টির মিটিং সবই চালাতো   এমনকি ক্লাসরুমের ভিতর বসে মদ্যপান, স্কুল ফাংশনের নাম করে চটুল নাচের আসর, কিছুই বাদ দেয়নি এরা   অভিভাবককুল চুপচাপ দেখে গেছে আর ভেবে গেছে-  এভাবেই চলতে হয়, এভাবেই চলতে হবে....

 

ভেবে দেখুন, আপনি যে দলের সমর্থক হোন না কেন, এই সমস্ত পচা গলা দুর্গন্ধময় পরিবেশের মধ্যে থেকে বেড়ে উঠে আপনার সন্তান কি শিখলো ? সেই সন্তান সমাজের কতটা ভালো করতে পারবে? মানুষ হতে কতটা কষ্ট পেলো ? আর ভবিষ্যৎ কিভাবে অন্ধকারময় হয়ে গেলো ? কারণ বৃহত্তর উচ্চশিক্ষায় তারা ক্রমশ পিছোতে থাকলো  কর্মহীন হয়ে হতাশায় নিমজ্জিত এক যন্ত্রে পরিণত হলো  এই চোরের ধূর্ত চোখ তখন তাকেই আবার খুঁজে নিলো  কারণ তার পেটে ক্ষিদে , আর দুর্নীতি তো সে ক্লাসরুম থেকেই শিখে নিয়েছে  তাই এই সুন্দর সম্ভবনাময় ছাত্রটি তখন ওই চোরের দেওয়া অসৎ কোনো কাজ বেঁচে নিলো - শিল্পহীন , কর্মহীন এই সমাজে কি পেলাম আমরা ? একটু ভেবে দেখুন  সেই ছাত্রটির একদিন একটি সন্তান হবে 

 

তাই এদের শুধু চাকরি চোর বললে চলবে না. এরা শৈশব চুরি করেছে   এরা শিশুর ভবিষ্যৎ চুরি করেছে   এরা প্রজন্মের পর প্রজন্মকে ধ্বংস করে দিয়েছে   এবং এরা দুর্নীতি এবং অপসংস্কৃতিকে নিয়মে পরিণত করেছে   যেখানে নিয়ম কানুন আইন মানা মানুষজন ক্রমশ সংখ্যালঘু হয়ে পড়েছে    অনিয়ম কখনো বেশিদিন প্রবাহিত হতে পারে না    অনিয়ম  আত্মঘাতী   কারণ কিছুদিন পর অনিয়মের জালেই অনিয়ম ধ্বংস হয়   সত্য প্রকাশিত হয়   অন্ধকার কেটে গিয়ে সভ্য সমাজের নতুন সূর্যোদয় ঘটে  

 

তাই আজ ঐতিহাসিক দিন   সূর্যোদয়ের দিন   বিদ্যালয়, বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষ, আজ চোর মুক্ত হল 

 


যদি সার্বিকভাবে ভাবেন, তাহলে দেখতে পাবেন যে এরা শুধু চোর নয়   এরা হত্যাকারী   এরা শৈশবের  হত্যাকারী   এরা সভ্যতা-সংস্কৃতি-জ্ঞান-বিজ্ঞানের হত্যাকারী   এরা ভাবি কালের হত্যাকারী   তাই আদালত ধার্য করে দেওয়া যে শাস্তি তারা পেলেন তা অনেকের কাছেই বিশাল বিরাট হলেও,  তলিয়ে ভাবলে দেখবেন সামগ্রিক ক্ষতির বিচারে তা কিছুই না   বড়ই অকিঞ্চিতকর   কারণ হারিয়ে যাওয়া সেই শৈশব, লক্ষ লক্ষ ভবিষ্যৎ, এবং তার ধ্বংসের যে ক্ষতি-  তা  কেউ কোনদিন আর পূরণ করতে পারবে না   আদি অনন্তকাল সেই শৈশব গুলি এই সমাজকে তিরস্কার করবে , ধিক্কার দেবে  আর চিৎকার করে বলবে "ফিরিয়ে দাও সাতটা বছর" 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

Comments

Ad Code