পহেলগাঁও হামলার ছায়ায় চিট্টিসিংপুরা হত্যাকাণ্ডের স্মৃতি: কাকতালীয় নাকি ষড়যন্ত্র ???????
মানুষেরভাষা ওয়েবডেস্ক
জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া জঙ্গি হামলা গোটা দেশকে নাড়িয়ে দিয়েছে। হামলাটি শুধু নৃশংসতার জন্যই নয়, বরং ২৫ বছর আগে ঘটে যাওয়া চিট্টিসিংপুরা হত্যাকাণ্ডের বিভীষিকাকে যেন নতুন করে ফিরিয়ে এনেছে — এমনটাই বলছেন স্থানীয় মানুষজন ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা।
২০০০ সালের ২০ মার্চ চিট্টিসিংপুরা গ্রামের গুরুদ্বারের সামনে দাঁড় করিয়ে ৩৫ জন শিখ ধর্মাবলম্বী পুরুষকে ঠাণ্ডা মাথায় গুলি করে হত্যা করেছিল জঙ্গিরা। এবারের পহেলগাঁও হামলাতেও লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষদের, আবার সেই পরিচিত কৌশল — সেনাবাহিনীর পোশাক পরে ছদ্মবেশী জঙ্গিদের হামলা।
চিট্টিসিংপুরার বয়স্ক বাসিন্দা নানক সিং এখনো সেই ভয়াল রাতের কথা ভুলতে পারেননি। পহেলগাঁও হামলার খবর শোনার পর যেন তাঁর চোখের সামনে ভেসে উঠেছে সেই রাত। তিনি বলেন,
"ওরাও সেনার পোশাক পরে এসেছিল। আমাদের দুই গুরুদ্বারের সামনে দাঁড় করিয়ে গুলি চালিয়েছিল। আমারও গুলি লেগেছিল, পড়ে যাই। ওরা ভেবেছিল আমি মারা গেছি।"
এমনই আরও একজন, খাজন সিং, যিনি সেদিন রাতে গ্রামের বাইরে ছিলেন বলে বেঁচে যান। আজ তিনি হতাশ গলায় বলেন, "আমরা সবাই মিলে একসঙ্গে বাস করি। তবুও কেন বারবার এমন বিভাজনমূলক, রক্তাক্ত হামলা?"
পহেলগাঁও আর চিট্টিসিংপুরা — একে অপরের থেকে মাত্র ৩৫ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত। দুটি গ্রামেই ধর্মীয় সহাবস্থান ও সম্প্রীতির ঐতিহ্য রয়েছে বহুদিন ধরে। অথচ এই দুটি জায়গাই একাধিকবার জঙ্গি হানার শিকার হয়েছে।
চিট্টিসিংপুরা হত্যাকাণ্ডের পর লস্কর-ই-তৈবার নাম উঠে এলেও আজও তার মূল পরিকল্পনাকারী অধরাই থেকে গেছে। এবং ঠিক সেই ভুতুড়ে অনিশ্চয়তার মধ্যেই আজ আবার পহেলগাঁওয়ের হামলা নতুন করে আঙুল তুলছে প্রশ্নের দিকে —
বারবার নির্দিষ্ট সম্প্রদায়কে লক্ষ্য করে এই আক্রমণ কেন?
কারা এই হামলার পেছনে?
সরকার ও সেনা কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবে?
দেশজুড়ে সাধারণ মানুষ যেমন হতবাক, তেমনি চিট্টিসিংপুরার গ্রামবাসীরা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। গুরুদ্বারের দেয়ালে গুলির চিহ্ন আজও রয়েছে। মৃতদের ছবি আজও সেখানকার স্মৃতিতে অম্লান।পহেলগাঁওয়ের ঘটনার পর আবার নতুন করে সেই দুঃসহ স্মৃতি ঘিরে ধরেছে শিখ সম্প্রদায়কে। ইতিহাস কি নিজেকে আবার পুনরাবৃত্ত করছে? নাকি এটি আরও গভীর কোনও ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত?
এই ঘটনায় দেশজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। সাধারণ মানুষ ও বিশ্লেষকরা চাইছেন কঠোর পদক্ষেপ এবং এই রক্তচক্ষু সন্ত্রাসের চূড়ান্ত জবাব।