Hot Posts

6/recent/ticker-posts

Ad Code

Recent in Home

খিদিরপুর মার্কেট অগ্নিকাণ্ডে ভস্মীভূত হাজারের বেশি দোকান :তীব্র প্রতিক্রিয়া শুভেন্দু অধিকারীর

 



মানুষের ভাষা ওয়েবডেস্ক , ১৭ জুন, কলকাতা:

খিদিরপুরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত অরফ্যানগঞ্জ মার্কেটে সোমবার ভোররাতে ঘটে গেল এক মর্মান্তিক অগ্নিকাণ্ড। রাত প্রায় ১টার সময় আগুন লাগে, এবং মুহূর্তের মধ্যে তা ছড়িয়ে পড়ে গোটা বাজারে। স্থানীয়দের দাবি অনুযায়ী, এই আগুনে ১,৩০০-র বেশি দোকান সম্পূর্ণভাবে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। দাহ্য পদার্থ এবং একটি তেল গোডাউনের উপস্থিতি আগুনকে আরও তীব্র করে তোলে।

আগুন নেভাতে পাঠানো হয় ২০টির বেশি দমকল ইঞ্জিন। টানা কয়েক ঘণ্টা চেষ্টা করেও আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে দমকল কর্মীদের ঘাম ছুটে যায়। সকাল পর্যন্ত জ্বলতে থাকে ছোট ছোট ‘পকেট ফায়ার’, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে।

প্রাথমিক তদন্তে এখনও আগুন লাগার কারণ স্পষ্ট নয়, তবে ক্ষতির পরিমাণ দেখে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। অনেকেই অভিযোগ করেছেন, দমকল বিভাগকে সময় মতো খবর দেওয়া হলেও তাঁরা পৌঁছাতে প্রায় তিন ঘণ্টা সময় নেন। একজন ব্যবসায়ী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “একঘণ্টা ধরে ফোন করেছি, কিন্তু দমকল আসতেই দেরি। আসার পরও ইঞ্জিনে জল ছিল না।” 

এদিকে  মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি পরিদর্শন করেন এবং ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের জন্য আর্থিক সাহায্য ঘোষণা করেন। তিনি জানান, যাঁদের দোকান সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে, তাঁদের ₹১ লক্ষ এবং আংশিক ক্ষতিগ্রস্তদের ₹৫০ হাজার করে দেওয়া হবে। পাশাপাশি, রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে নতুনভাবে বাজার নির্মাণের প্রতিশ্রুতিও দেন তিনি।

তীব্র প্রতিক্রিয়া শুভেন্দু অধিকারীর: ‘এটা ষড়যন্ত্র, জমি দখলের চক্রান্ত চলছে’

এই ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই মঙ্গলবার বিকেলে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে তিনি রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ তোলেন। তিনি বলেন, “রাত ১টার পর আগুন লাগে, সঙ্গে সঙ্গে দমকল ও স্থানীয় থানাকে খবর দেওয়া হলেও তারা এসে পৌঁছেছে ভোর ৪টায়। আপনারা বুঝতেই পারছেন এখানে কেমন খেলা হয়েছে। এটা সাধারণ দুর্ঘটনা নয়, এটা একটা পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র।”

তিনি আরও অভিযোগ করেন, “এই জমি ইতিমধ্যেই বেসরকারি গোষ্ঠীর হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। আলিপুর সেন্ট্রাল জেল, আলিপুর চিড়িয়াখানার জমিও এভাবে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। এবার খিদিরপুর বাজারের দিকে নজর দিয়েছে সরকার। খুব শিগগিরই এখানে শপিং মল আর বিউটি পার্লার উঠে আসবে।”

একটি বিস্তারিত টুইটে শুভেন্দু অধিকারী লেখেন,

“খিদিরপুর অরফ্যানগঞ্জ মার্কেটে বিধ্বংসী আগুন শুধুমাত্র একটি দুর্ঘটনা নয়, এটা পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র। ১,৩০০ ব্যবসায়ীর জীবন ও জীবিকা শেষ করে দেওয়া হয়েছে যেন এই জমি এক বিশেষ গোষ্ঠীর হাতে তুলে দেওয়া যায়। দমকল বিভাগের তিন ঘণ্টার দেরি, জল না থাকা, এবং প্রশাসনের নিস্ক্রিয়তা — সব মিলিয়ে এটা এক অশুভ আঁতাতের প্রমাণ। আমার পূর্বনির্ধারিত নদিয়া সফরের কারণে আমি আজ উপস্থিত থাকতে পারিনি, তবে খুব শিগগিরই ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসব। আমি ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের পাশে আছি। তাদের সুবিচার না হওয়া পর্যন্ত আমরা লড়াই চালিয়ে যাব। আমরা একসঙ্গে পুনর্গঠনের পথে হাঁটব। এই বিশ্বাসঘাতকতা জবাব পাবে।”



বেশ কিছু ব্যবসায়ীও শুভেন্দু অধিকারীর বক্তব্যের সঙ্গে সহমত পোষণ করে বলেন, “দমকল দ্রুত এলে ক্ষতি অনেকটা কম হতো। এখন আমাদের কিচ্ছু নেই। মাথার উপর ছাদ নেই, ব্যবসা নেই, সংসার চালাব কী করে?”

খিদিরপুরের ঐতিহ্যবাহী এই বাজার এখন শুধুই ধোঁয়া ও ছাইয়ের স্তূপ। পুনরায় উঠে দাঁড়াতে কতটা সময় লাগবে, তা সময়ই বলবে। তবে এই আগুন ঘিরে রাজ্য রাজনীতিতে যে ঝড় উঠেছে, তা নিঃসন্দেহে আগামী দিনে আরও তীব্র হবে। 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

Comments

Ad Code