পশ্চিমবঙ্গ রাজনীতির পটভূমিতে এক গুরুত্বপূর্ণ মোড় আনল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)। দলের দীর্ঘদিনের অনুগত নেতা, সাংসদ ও মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য আজ একমতক্রমে পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির নতুন সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। দলের রাজ্য দফতরে আয়োজিত এক সংক্ষিপ্ত অথচ তাৎপর্যপূর্ণ সভায় তাঁর নাম আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হয়। সঙ্গে ছিলেন বিদায়ী সভাপতি সুকান্ত মজুমদার এবং পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।
প্রথম বিজেপি বিধায়ক থেকে রাজ্য সভাপতি – এক সংগ্রামের কাহিনি
শমীক
ভট্টাচার্য রাজনীতির ময়দানে কেবল উচ্চকণ্ঠ বা
দলীয় নেতৃত্বের আনুগত্যেই বিশ্বাসী নন, তাঁর রয়েছে
শিক্ষা,
বিশ্লেষণী ক্ষমতা এবং মার্জিত রাজনৈতিক
সৌজন্য। ২০১৪ সালে তিনি
বসিরহাট
দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্র থেকে
নির্বাচনে জিতে ইতিহাস তৈরি
করেন। তিনি হয়ে ওঠেন
পশ্চিমবঙ্গে
প্রথম বিজেপি বিধায়ক, একটি রাজ্যে যেখানে
দীর্ঘদিন ধরে বামফ্রন্ট ও
পরে তৃণমূল কংগ্রেসের আধিপত্য ছিল।
এরপর
তিনি দলের হয়ে একাধিক
বার প্রচারে নেতৃত্ব দিয়েছেন, মিডিয়ার গুরুত্বপূর্ণ মুখ হয়ে উঠেছেন
এবং রাজ্য ও কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের
সঙ্গে সংযোগ রেখে সংগঠনকে এগিয়ে
নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন। যদিও ২০২১ সালে
রাজাহাট-গোপালপুর থেকে বিধানসভা নির্বাচনে
তিনি জয়লাভ করতে পারেননি, তবে
দলের প্রতি
তাঁর নিষ্ঠা ও রাজনৈতিক দূরদৃষ্টি
তাঁকে
পিছিয়ে দেয়নি।
শিক্ষিত, মার্জিত, অথচ বিশ্লেষণী নেতৃত্বের প্রতিনিধি
শমীক
ভট্টাচার্য একজন স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী
এবং
তিনি রাজনীতিকে চিরকালই একটি সেবামূলক ক্ষেত্র
হিসেবে দেখেছেন। তার ভাষণ কখনও
উত্তেজনাপূর্ণ নয়, বরং যুক্তি
ও পরিসংখ্যাননির্ভর। সংবাদ চ্যানেলে তাঁর উপস্থিতি সংযত
অথচ তীক্ষ্ণ বক্তৃতার নিদর্শন। সেই সঙ্গে রয়েছে
তার স্বচ্ছ ভাবমূর্তি, যা আজকের দিনেও
রাজনৈতিকভাবে প্রাসঙ্গিক ও বিরল।
২০২৬
সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে বড় দায়িত্ব
দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব শুধু তিনিই মনোনয়নপত্র জমা দেবেন বলে সিদ্ধান্ত নেওয়ায় বোঝা যাচ্ছে, বিজেপি এখন অন্তর্দ্বন্দ্ব বন্ধ করে ঐক্যবদ্ধভাবে এগোতে চায়। তাঁর নির্বাচন শুধুই নেতৃত্ব বদল নয়, বরং একটি ব্যবস্থাগত পুনর্গঠনের বার্তা"।
সৌজন্য ও সংগঠনের যুগল নেতৃত্ব
শমীক
ভট্টাচার্যের হাতে রাজ্য বিজেপির
নেতৃত্ব তুলে দেওয়া মানে,
দল চাইছে রাজনীতিকে আরও মার্জিত ও
বুদ্ধিবৃত্তিক পরিসরে নিয়ে যেতে। একদিকে
শুভেন্দু অধিকারীর মতো মাঠের নেতা,
অন্যদিকে শমীক ভট্টাচার্যের মতো
সংগঠক ও মুখপাত্র—এই যুগল নেতৃত্ব
হয়তো বিজেপিকে পশ্চিমবঙ্গে এক নতুন ছন্দে
ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করবে।
তাঁর
শপথ এখন একটাই—দলকে ঐক্যবদ্ধ রেখে
বাংলার রাজনীতিতে বিজেপিকে আরও শক্তিশালী করে
তোলা, এবং ২০২৬ সালের
নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে
তোলা।
0 মন্তব্যসমূহ