Hot Posts

6/recent/ticker-posts

Ad Code

Recent in Home

“ব্যক্তি নয়, দল বড়। আর দলের থেকেও দেশ বড়।”: শমীক ভট্টাচার্যের প্রথম সাংবাদিক বৈঠকে শিক্ষিত নেতৃত্বের ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত

 



 পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির নবনিযুক্ত সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য তাঁর প্রথম সাংবাদিক বৈঠকে যে বার্তা দিলেন, তা যেন রাজনীতির চেনা ছকের বাইরে এক শিক্ষিত, মার্জিত দূরদর্শী রাজনীতির নিদর্শন। এই প্রেস কনফারেন্স কেবল রাজনৈতিক ঘোষণায় সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং তা ছিল মূল্যবোধ, আত্মনিয়ন্ত্রণ সাংস্কৃতিক দায়বদ্ধতার প্রতীক।

 তিনি সোজাসুজি বললেনব্যক্তি বড় নয়, দল বড়। আর দল থেকেও বড় দেশ। এই একবাক্যেই তাঁর নেতৃত্বের দৃষ্টিভঙ্গি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এই বক্তব্য শুধু রাজনৈতিক শ্লোগান নয়, এটি এক শিক্ষিত বুদ্ধিদীপ্ত রাষ্ট্রচিন্তার প্রতিফলন, যা বর্তমান রাজনৈতিক ভাষ্যে বিরল।

 

ব্যক্তিনির্ভর রাজনীতির বিরুদ্ধে বুদ্ধিবৃত্তিক বার্তা

বিজেপির রাজ্য দপ্তরে অনুষ্ঠিত এই সাংবাদিক বৈঠকে সব রাজনৈতিক নেতার ছবি সরিয়ে শুধু দলের প্রতীক পদ্মফুলের ছবি রাখা হয়। এমনকি বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীরও কোনো ছবি ব্যাকড্রপে রাখা হয়নি। বিষয়টি ঘিরে প্রশ্ন উঠতেই শমীক ভট্টাচার্য অত্যন্ত শালীন অথচ স্পষ্ট জবাব দেন

ব্যক্তির চাইতে দল বড়, আর দলের চাইতেও দেশ বড়। এই ব্যাকড্রপ তার প্রতিফলন মাত্র।

  এক শিক্ষার পাঠযেখানে রাজনীতি মানে কেবল ব্যাক্তিকেন্দ্রিক প্রচার নয়, বরং দলীয় নীতির প্রতি শ্রদ্ধা বৃহত্তর রাষ্ট্রচিন্তার প্রকাশ। একজন গভীরভাবে শিক্ষিত এবং আত্মবিশ্বাসী নেতাই এমন বার্তা দিতে পারেন। 

সংবেদনশীলতা কূটনৈতিক ভারসাম্যের পরিচয়

অনুষ্ঠানে শুভেন্দু অধিকারীর ছবি অনুপস্থিত থাকার বিষয়টি ঘিরে বিতর্ক শুরু হলেও ভট্টাচার্য পরিস্থিতি যথেষ্ট সংযতভাবে সামাল দেন। তিনি বলেন,

শুভেন্দু অধিকারীর প্রভাব আমাদের গেটের বাইরেও আছে। তাঁর নাম প্রতিনিয়ত মানুষ স্মরণ করে। এমনকি তৃণমূলও তাঁর নাম বারবার উচ্চারণ করে।

 এই মন্তব্য তাঁর রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা কূটনীতির পরিচায়ক। অন্যদিকে দিলীপ ঘোষের অনুপস্থিতি নিয়েও জল্পনা তৈরি হয়। সেটিও তিনি চাতুর্যের সঙ্গে খণ্ডন করেন

দিলীপ ঘোষ কোথাও যাননি, যাবেন না, দিলীপ কোথাও যেতে পারবেন না । উনি বিক্রয়যোগ্য পণ্য নন। বিজেপি ঠিক সময়ে তাঁকে যথাযথ জায়গায় কাজে লাগাবে। দিলীপ ঘোষ ছিলেন, আছেন, থাকবেন। 

 এই মন্তব্য আবারও প্রমাণ করে, ভট্টাচার্য শুধুই মুখপাত্র নন, তিনি দলের অভ্যন্তরীণ ভারসাম্য রক্ষা করার মতো রাজনৈতিক পরিপক্বতাসম্পন্ন নেতা।

 সংস্কৃতির প্রতি দায়বদ্ধতা ধর্মীয় মূল্যবোধের মার্জিত উপস্থাপন

ভট্টাচার্য তাঁর ভাষণেহিন্দু ভাই ভাইস্লোগানকে ব্যাখ্যা করেন এই বলে

যাঁরা ভারতে বসবাস করছেন, তাঁরাই হিন্দু। আমাদের এই বক্তব্যে কোনো বিভেদ নেই।

এটি একটি সমন্বয়বাদী শিক্ষাব্যঞ্জক বক্তব্য, যা একদিকে দেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতি শ্রদ্ধা জানায়, আবার অন্যদিকে বিভাজনের রাজনীতিকে প্রতিহত করে।

 

তিনি মঞ্চে কালীমাতার একটি প্রতিকৃতি উন্মোচন করে বলেন

কালী কলকাতা ওয়ালি। আমরা সবাই এই কথাটি জানি। কালী এবং কলকাতা সমার্থক।

এর মাধ্যমে তিনি বাংলার ঐতিহ্য, বিশ্বাস এবং সাংস্কৃতিক শিকড়ের সঙ্গে দলের সংযোগ স্থাপন করলেন অত্যন্ত মার্জিতভাবে।

 

শিক্ষার শক্তিতে গঠিত নেতৃত্ব

শমীক ভট্টাচার্য কেবল একজন রাজনৈতিক নেতা নন, তিনি একজন শিক্ষিত, বিশ্লেষণী মনোভাবসম্পন্ন চিন্তাশীল মানুষ। তাঁর প্রতিটি বাক্যে ফুটে ওঠে তার পড়াশোনার ভিত্তি, ভাষার সংযম, এবং রাষ্ট্রনায়কোচিত স্থিতধী মনোভাব। এইসব গুণ তাঁকে বাংলারভদ্রলোক রাজনীতিরপুনর্জাগরণের অন্যতম মুখ করে তুলছে।

 শমীক ভট্টাচার্যের এই প্রথম সাংবাদিক সম্মেলন নিছক এক রাজনৈতিক আনুষ্ঠানিকতা ছিল নাএটি ছিল এক নৈতিক, সাংস্কৃতিক রাজনৈতিক শিক্ষার পাঠ। একটি রাজনৈতিক সংগঠনের নেতৃত্ব যখন এমন শিক্ষিত, বিনয়ী অথচ দৃঢ়চেতা মানুষের হাতে যায়, তখন দল যেমন উপকৃত হয়, তেমনি গণতন্ত্রও আরও পরিণত মার্জিত হয়ে ওঠে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

Comments

Ad Code