Hot Posts

6/recent/ticker-posts

Ad Code

Recent in Home

চাঞ্চল্যকর তথ্য : চালু হয়েছিল RAT | এয়ার ইন্ডিয়া ১৭১ দুর্ঘটনার ফুটেজ এ র‍্যাম এয়ার টারবাইন, বাড়াচ্ছে দ্বয়িত ইঞ্জিন বিকলের আশংকা


 লন্ডনগামী এয়ার ইন্ডিয়া ১৭১ বিমানে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনার পর, এখনো তদন্ত চলছে। তবে শেষ মুহূর্তের এক ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে বিশেষজ্ঞ ও পাইলটরা বলছেন, বিমানে জরুরি ‘র‍্যাম এয়ার টারবাইন ’ (RAT) সক্রিয় হয়েছিল, যা সাধারণত দ্বৈত ইঞ্জিন বিকল হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সক্রিয় হয়। এই তথ্যই ইঙ্গিত দিচ্ছে এক চাঞ্চল্যকর সম্ভাবনার দিকে—দুইটি ইঞ্জিনই ব্যর্থ হয়ে পড়েছিল।

RAT কী এবং কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ?

RAT বা র‍্যাম এয়ার টারবাইন হলো একটি ছোট, দুই-ব্লেডবিশিষ্ট প্রপেলার, যা কোনো বড় ধরনের বৈদ্যুতিক বা হাইড্রলিক ত্রুটি দেখা দিলে বা উভয় ইঞ্জিন ব্যর্থ হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিমানের নিচ থেকে বেরিয়ে আসে। এটি তৎক্ষণাৎ বিমানকে বিদ্যুৎ ও হাইড্রলিক শক্তি সরবরাহ করে জরুরি ব্যবস্থাপনায় সহায়তা করে। 



অভিজ্ঞ মার্কিন পাইলট ক্যাপ্টেন স্টিভ শাইবনার  এক ভিডিওতে জানান, “বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনারে RAT কেবলমাত্র তিনটি ঘটনার জন্য সক্রিয় হয় — বৃহৎ বৈদ্যুতিক ব্যর্থতা, বৃহৎ হাইড্রলিক ব্যর্থতা অথবা উভয় ইঞ্জিন বিকল হলে।”

এক প্রত্যক্ষদর্শীর মোবাইল ফোনে ধারণ করা ১৮ সেকেন্ডের একটি ঝাপসা ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে বিমানটি খুব নিচু দিয়ে বাড়ির ছাদের উপর দিয়ে উড়ছে এবং ধীরে ধীরে উচ্চতা হারাচ্ছে। শেষে একটি আগুন ও ধোঁয়ার স্ফোটে ভেঙে পড়ে। ভিডিওতে বিমানটির তলদেশ থেকে একটি ছোট প্রপেলার বেরিয়ে আসতে দেখা যায়, যা পাইলটরা RAT বলে নিশ্চিত করছেন।

শাইবনার বলেন, “ভিডিওতে যে ছোট ছিদ্র এবং ধূসর দাগ দেখা গেছে, তা RAT-এর উপস্থিতি নিশ্চিত করে। শব্দটিও গুরুত্বপূর্ণ—এটি এমন একটি হাই পিচ শব্দ যা একপ্রপেলার বিমান উড়ে যাওয়ার মতো শোনায়।”

ভারতের দুই পাইলটও ভিডিও দেখে বলেন, RAT সক্রিয় হওয়ার মানে হলো ইঞ্জিন দুটিই হয়তো ব্যর্থ হয়েছিল। ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান পাইলটসের সভাপতি ক্যাপ্টেন সি.এস. রান্ধায়া ,  বলেন, “এটি তদন্তকে জটিল করে তোলে। দুই ইঞ্জিন কিভাবে একসাথে বিকল হলো?”



সাধারণত দুটি ইঞ্জিনের জন্য পৃথক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা থাকে, তাই একইসাথে উভয় ইঞ্জিন বিকল হওয়া অত্যন্ত দুর্লভ ঘটনা। তবে ক্যাপ্টেন মোহন রান্ধাওয়ান, একজন উড্ডয়ন নিরাপত্তা পরামর্শক বলেন, “পাখির ধাক্কা, জ্বালানিতে দূষণ, বা রানওয়ে থেকে কোনো বস্তুর ইঞ্জিনে ঢুকে যাওয়া — এই সবই সম্ভাব্য কারণ হতে পারে।”

বিমানটির ফ্লাইট ডাটা রেকর্ডার এবং ককপিট ভয়েস রেকর্ডার এর বিশ্লেষণ থেকেই বেরিয়ে আসবে প্রকৃত কারণ। ভারতের তদন্ত দল ছাড়াও ইউএস ন্যাশনাল ট্রান্সপোর্টেশন এন্ড সেফটি বোর্ড -এর বিশেষজ্ঞরা তদন্তে অংশ নেবেন।

বিমানটি টেকঅফের মাত্র ৩২ সেকেন্ডের মধ্যেই ভেঙে পড়ে। রান্ধায়া বলেন, “প্রশিক্ষণে পাইলটদের ৫,০০০-৩০,০০০ ফুট উচ্চতায় দ্বৈত ইঞ্জিন বিকলের অনুশীলন করানো হয়। কিন্তু ৬০০ ফুটের মতো নিচু উচ্চতায় এ রকম ঘটনা কল্পনাও করা হয় না।”

তিনি আরও যোগ করেন, “ইঞ্জিন আবার চালু হতে সাধারণত ৯০ সেকেন্ড সময় লাগে — যা এই ঘটনায় ছিল না।”

এয়ার ইন্ডিয়া-১৭১ এর একমাত্র জীবিত যাত্রী জানান, টেকঅফের কিছু পরেই তিনি একটি জোরালো বিস্ফোরণ এবং প্লেনের আলো দপদপ করতে দেখেন। শাইবনার বলেন, “এই শব্দ এবং আলো দপদপ করাও RAT সক্রিয় হওয়ার সম্ভাবনাকে আরও জোরালো করে।”

এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনার আসল কারণ এখনো অনুসন্ধানের পর্যায়ে। তবে RAT-এর সক্রিয়তা, ভিডিও ফুটেজ ও শব্দ বিশ্লেষণ করে অনেক পাইলটই এখন দ্বৈত ইঞ্জিন বিকলের তত্ত্বের দিকে ঝুঁকছেন।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

Comments

Ad Code