ভারতের কঠোর কূটনৈতিক বার্তা পাকিস্তানকে: বন্ধ সব বাণিজ্য, সঙ্গে বাতিল ডাক ও বিমান
মনুষ্য ভাষা সংবাদ ডেস্ক |
পাহেলগাঁও হামলার পর থেকে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক ইতিহাসের সথেকে তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। পাহলগাঁওয়ে ভয়াবহ সন্ত্রাসবাদী হামলায় ২৬ জন নিরীহ পর্যটকের মৃত্যুর পর, ভারত কেন্দ্রীয় স্তরে একাধিক কূটনৈতিক পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে। এবার পাকিস্তানের সঙ্গে সমস্ত প্রকার ডাকযোগ ও পার্সেল বিনিময় বন্ধ ঘোষণা করল মোদী সরকার। এর আগে নিষিদ্ধ করা হয়েছে পাকিস্তান থেকে সব ধরনের আমদানি, বাণিজ্যিক কার্যক্রম ও জল সংক্রান্ত চুক্তি।
শনিবার কেন্দ্রীয় যোগাযোগ ও উত্তর-পূর্বাঞ্চল উন্নয়ন মন্ত্রী জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া এক সরকারি বিবৃতিতে জানান, ভারত বিমান ও স্থলপথে পাকিস্তান থেকে আগত সকল ধরনের মেইল ও পার্সেল বিনিময় স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যোগাযোগ মন্ত্রকের অধীনে থাকা ডাক বিভাগ এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করেছে, যার ফলে দুই দেশের মধ্যে সামান্য যে কূটনৈতিক যোগাযোগ অবশিষ্ট ছিল, তাও কার্যত ছিন্ন হয়ে গেল।
সিন্ধু জলচুক্তির স্থগিতাদেশ: ইতিহাসের মোড় ঘোরানো পদক্ষেপ
পুলওয়ামা হামলার পর থেকেই ভারতের মনোভাব ছিল কঠোর। তবে এবার ভারত ১৯৬০ সালের ঐতিহাসিক 'সিন্ধু জলচুক্তি'-ও স্থগিত করে দিয়েছে। এই চুক্তির মাধ্যমে পাকিস্তান সিন্ধু, ঝেলাম ও চেনাব নদীর অধিকাংশ জলের উপর অধিকার পেয়ে আসছিল। এবার ভারতের জল সংরক্ষণ এবং অভ্যন্তরীণ ব্যবহারকে অগ্রাধিকার দিয়ে পাকিস্তানের জল প্রবাহ নিয়ন্ত্রণে আনা হচ্ছে। একে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, 'পাকিস্তানের কৃষি ও জলনির্ভর অর্থনীতির জন্য ধ্বংসাত্মক সিদ্ধান্ত'।
সম্পূর্ণ বাণিজ্য বন্ধ: পাকিস্তানের অর্থনীতিতে ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’
এর আগে কেন্দ্রীয় সরকার পাকিস্তান থেকে সরাসরি ও পরোক্ষভাবে আসা সব ধরনের পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভের (GTRI) প্রতিষ্ঠাতা অজয় শ্রীবাস্তব জানিয়েছেন, এই নিষেধাজ্ঞার ফলে পাকিস্তান থেকে ভারতের আমদানি শূন্যে নেমে আসবে, যেখানে ২০২৪ সালের এপ্রিল থেকে ২০২৫ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ছিল মাত্র ০.৪২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
ভারত থেকে পাকিস্তানে যাওয়া গুরুত্বপূর্ণ রফতানি সামগ্রীর মধ্যে ছিল:
- অর্গানিক কেমিক্যালস – $১৬৪.১৯ মিলিয়ন
- ফার্মাসিউটিক্যালস – $১২০.৮৬ মিলিয়ন
- প্লাস্টিক, ইনঅর্গানিক কেমিক্যালস, মেটাল কম্পাউন্ডস
- খাদ্যসামগ্রী, দুধ, মশলা, গাড়ির যন্ত্রাংশ প্রভৃতি
এই নিষেধাজ্ঞার ফলে পাকিস্তানের ফার্মাসিউটিক্যাল, কেমিক্যাল এবং খাদ্য শিল্পে বিশাল ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।
SAARC ভিসা, ICP এবং কূটনৈতিক কর্মী সংখ্যা হ্রাস
ভারত ইতিমধ্যেই আটারি ইন্টিগ্রেটেড চেক পোস্ট (ICP) বন্ধ করে দিয়েছে এবং SAARC ভিসা ছাড় স্কিম (SVES)-ও স্থগিত করেছে। এছাড়া, পাকিস্তানি নাগরিকদের দ্রুত দেশে ফিরতে বলা হয়েছে এবং উভয় দেশের হাইকমিশন থেকে বেশ কিছু কর্মীকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে।
এক ইঞ্চি জমিও নয়: পাকিস্তানের প্রতি কড়া বার্তা দিল দিল্লি
এই সমস্ত পদক্ষেপগুলিকে বিশ্লেষকরা বলছেন ভারতের তরফ থেকে একটি পরিষ্কার বার্তা — "সন্ত্রাসবাদ ও আলোচনার যুগপৎ চলা অসম্ভব"। ভারতের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব নিয়ে আপোস করার কোন ইচ্ছা নেই বলেই একের পর এক কঠোর সিদ্ধান্তে তা স্পষ্ট হচ্ছে।
0 মন্তব্যসমূহ