Hot Posts

6/recent/ticker-posts

Ad Code

Recent in Home

বিয়ের ফুলের সাথে জোড়াফুল ? দিলীপের আচরণে ক্ষুব্ধ RSS : দলে একঘরে দিলীপ ঘোষ কি তৃণমূলের পথে ?

দিলীপ-মমতার সাক্ষাৎ: আরএসএসের ক্ষোভ, বিজেপিতে অঘোষিত একঘরে হওয়ার পথে কি প্রাক্তন সভাপতি?

মানুষের ভাষা



দিলীপ ঘোষ—বাংলার রাজনীতির এক চেনা মুখ। বিজেপির সর্বকালের সফলতম রাজ্য সভাপতি হিসেবে তাঁর পরিচিতি আজও অটুট। ২০১৯-এর লোকসভা ভোটে বিজেপির ১৮টি আসন জয় এবং ২০২১-এর বিধানসভা ভোটে ৭৭টি আসন ছিনিয়ে আনার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনিই। কিন্তু আজ, সেই দিলীপ ঘোষই যেন নিজ দলের অভ্যন্তরেই অস্বস্তির কারণ হয়ে উঠেছেন।

সম্প্রতি দিঘার জগন্নাথ ধাম মন্দিরের দ্বারোদঘাটনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর সৌজন্য সাক্ষাৎ ঘিরে রাজ্য রাজনীতিতে তীব্র আলোড়ন শুরু হয়েছে। দলবিরোধী আচরণের অভিযোগে দিলীপ ঘোষের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বিজেপি-আরএসএস উভয় পক্ষই। শুধু তাই নয়, এই ঘটনায় সংঘের অন্দরেও জোরালো আলোচনার সূত্রপাত হয়েছে।

আরএসএসের অসন্তোষ, বিজেপির কড়া বার্তা

সূত্রের খবর, দিলীপ ঘোষের আচরণে আরএসএস-এর শীর্ষ নেতারা রীতিমতো ক্ষুব্ধ। ২ মে (শুক্রবার) বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে.পি. নাড্ডা ও আরএসএসের সহ-সাধারণ সম্পাদক অরুণ কুমারের মধ্যে এই বিষয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়। সেখানে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, আপাতত দিলীপ ঘোষকে দলের কোনও কর্মসূচি বা বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো হবে না। এমনকি, তিনি নিজে কোনও অনুষ্ঠান করলে বিজেপির কোনও নেতা বা কর্মী তাতে অংশ নিতে পারবেন না।

এই নির্দেশ এখন দলের রাজ্য নেতৃত্বের মাধ্যমে নিচুতলার কর্মীদের কাছেও পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। যদিও প্রকাশ্যে দল এই বিষয়ে মুখ না খুললেও, দিলীপ ঘোষকে একঘরে করে রাখার এক প্রকার 'অঘোষিত' সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়ে গিয়েছে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।

‘ঠোঁটকাটা’ দিলীপ, মমতার সঙ্গে হাস্যোজ্জ্বল আলাপ

দিঘায় মমতার সঙ্গে সাক্ষাৎ শুধু রাজনৈতিক সৌজন্য না কি ভিন্ন বার্তা—এই নিয়ে রাজনীতির অন্দরমহলে তুমুল জল্পনা চলছে। বিজেপির একাংশ বলছে, দিলীপ ঘোষের এই ভঙ্গিমা ভোটের মুখে দলের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত করছে। তাঁকে নিয়ে দলীয় মহলে দ্বিধা ও বিতর্ক দিন দিন বেড়েই চলেছে।

আরএসএস ও বিজেপির যৌথ অন্দর থেকে শোনা যাচ্ছে, দিলীপ ঘোষের সাম্প্রতিক কার্যকলাপে উভয় পক্ষই বিরক্ত। জলধর মাহাতো-সহ রাজ্যের সংঘ নেতৃত্বও নাকি এখন দিলীপের থেকে ‘নিরাপদ দূরত্ব’ বজায় রাখার পক্ষে।

‘আমি থাকব বিজেপিতেই’, দাবি দিলীপের, তবে দলের দূরত্ব প্রকট

এই মুহূর্তে দিলীপ ঘোষও থেমে নেই। তিনি যেমন প্রকাশ্যে জানাচ্ছেন, "আমি বিজেপিতেই আছি ও থাকব," তেমনই পাল্টা হুঁশিয়ারি দিতেও ছাড়ছেন না। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, "গত তিন বছর ধরে আমি কি দলের কোনও কর্মসূচিতেই থাকি? আমি নিজের কর্মসূচি নিজেই তৈরি করি।"

তাঁর কথায়, তিনি এখন রাজনৈতিক নয়, বরং সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যাচ্ছেন এবং সকাল থেকে বিভিন্ন মানুষ দেখা করতে এলে তাদের সময় দিচ্ছেন।

তবে এ কথার মধ্য দিয়েই অনেকটা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে তাঁর সঙ্গে দলের দূরত্ব। তাঁর বক্তব্য, দলের তরফ থেকে কোনও দায়িত্বরূপ কর্মসূচি নেই বলেই তিনি ব্যক্তিগত উদ্যোগেই সক্রিয় থাকছেন।

তৃণমূলে যাওয়ার জল্পনা জোরাল

রাজনীতির চর্চায় আরও একটি বড় প্রশ্ন উঠে এসেছে—তবে কি দিলীপ ঘোষ এবার তৃণমূল কংগ্রেসের দিকেই ঝুঁকছেন? মমতার সঙ্গে তাঁর হাস্যোজ্জ্বল সাক্ষাৎ, দলে কোণঠাসা অবস্থান এবং শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে শীতল সম্পর্ক মিলিয়ে এই জল্পনা অমূলক নয় বলেই মনে করছেন অনেকেই।

দলের অন্দরেও এখন দুটি স্পষ্ট মেরু—একদিকে শুভেন্দু, অন্যদিকে দিলীপ। আর এই ভাগাভাগির ফলে বিজেপির ভেতরে ক্ষয় ধরেছে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

ভোটের বছরেই এইরকম অন্তর্দ্বন্দ্ব বিজেপির জন্য কতটা ক্ষতিকর হবে, তা সময়ই বলবে। তবে এটুকু নিশ্চিত যে দিলীপ ঘোষকে ঘিরে রাজনৈতিক উত্তাপ থামার কোনও লক্ষণ নেই। মমতার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ একদিকে যেমন রাজনৈতিক সৌজন্য, অন্যদিকে তা বিজেপির অন্তর্দ্বন্দ্বকেও নগ্ন করে তুলেছে। এখন দেখার, গেরুয়া শিবির আদৌ তাঁকে ক্ষমা করবে, না কি তাঁকে রাজনৈতিকভাবে একঘরে করে দিতে চূড়ান্ত পদক্ষেপে এগোবে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

Comments

Ad Code