দিলীপের তলে তলে এতো? এক বছর ধরে দিলীপের 'ছায়াসঙ্গী' জিয়ারুল হক, কে এই ব্যক্তি?
বড়সড় সিন্ডিকেটের 'পর্দাফাঁস'?
সৌমিত্র বললেন বাঁকুড়ায় ঢুকতে দেবোনা
বিশেষ প্রতিবেদন , নিজস্ব সংবাদদাতা , মানুষের ভাষা :
সূত্র - EVM News
বিয়ে করেই কি রাজনৈতিক ভোলবদল? যাঁর নাম শুনলেই আগে মুখে 'মমতা' অ্যালার্জি ছিল, সেই দিলীপ ঘোষকেই এবার রাজ্য সরকারের আমন্ত্রণে দিঘায় জগন্নাথ মন্দিরের উদ্বোধনে সস্ত্রীক উপস্থিত হতে দেখা গেল। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে এক টেবিলে বসে হাস্যোজ্জ্বল আলাপচারিতাও করলেন তিনি। আর তারপর থেকেই তোলপাড় বিজেপির অন্দরে।
তবে বিতর্ক শুধু দিলীপকে ঘিরেই নয়। লাইমলাইটে উঠে এসেছেন তাঁর এক বছরের বেশি সময়ের ‘ছায়াসঙ্গী’ জিয়ারুল হক। সম্প্রতি একের পর এক ছবি ভাইরাল— দিলীপ ঘোষের সঙ্গে সরকারি অফিস, মন্দির উদ্বোধন, এমনকি ইডেন গার্ডেন্সে আইপিএল খেলা দেখা পর্যন্ত, সর্বত্র উপস্থিত এই জিয়ারুল হক। অভিযোগ উঠেছে, কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে দিলীপবাবুকে নিয়ে গিয়ে অফিসারদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন তিনি, পরে নিজেই গিয়ে সেই অফিসারদের সঙ্গে কাজের ব্যাপারে আলোচনাও করছেন। সন্দেহ জোরালো হয়েছে, জিয়ারুল একটি বড়সড় সিন্ডিকেট চালাচ্ছেন।
দলীয় সূত্র জানাচ্ছে, কেন্দ্রীয় দপ্তরের টেন্ডার থেকে শুরু করে নিয়োগ প্রক্রিয়া— সর্বত্র জিয়ারুল হকের প্রভাব এবং সক্রিয়তা স্পষ্ট। এই ব্যক্তিকে ঘিরে প্রশ্ন বাড়ছে দিলীপ ঘোষের ভূমিকা নিয়েও। তিনি ঠিক কী স্বার্থে এত জায়গায় জিয়ারুলকে সঙ্গে রাখছেন, তা নিয়েও চাপানউতোর চরমে।
এদিকে দিলীপ ঘোষের জগন্নাথ মন্দিরে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে হাসিমুখে উপস্থিতি নিয়ে দলের অন্দরেই উঠেছে প্রশ্ন। বিষ্ণুপুরের বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খাঁ তো একপ্রকার হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেই ফেললেন— “দিলীপ ঘোষকে বাঁকুড়ায় ঢুকতে দেব না।” তিনি আরও বলেন, “আমি দল বদলেছি, জানি কীভাবে বদল করতে হয়। তুমি নিজের চরকায় তেল দাও। কুনাল ঘোষ এখন দিলীপ ঘোষের পিএ হয়েছেন! কে কাকে পেমেন্ট দিচ্ছে, তাও জানি না।”
সৌমিত্র দিলীপ ঘোষের ব্যক্তিগত জীবন ও সম্পত্তি নিয়েও সরাসরি আক্রমণ শানান। বলেন, “আপনি আরও দু-তিন জনের সঙ্গে ফেঁসে গিয়েছেন বলেই এখানে বিয়ে করেছেন। দিল্লিতে আপনার অ্যাসেট কোথায় আছে আমরা জানি না।”
তিনি আরও বলেন, “আপনার চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন উঠবে না? আমাদের জীবন উচ্ছিষ্টভোগী নয়। আপনি বলছেন আমি চারটে বিয়ে করেছি, আমি গর্ব করে বলি— যাঁকে বিয়ে করেছি তিনি একজন বিজেপি কর্মীর বিধবা স্ত্রী। আমি ভালো কাজ করেছি।”
চাকরি দুর্নীতির প্রসঙ্গ টেনে সৌমিত্র খাঁ প্রশ্ন তোলেন, “যে প্রসন্ন ধরা পড়েছিলেন, তার বাড়িতে আপনার কাগজ কীভাবে গেল?” পাশাপাশি দিলীপবাবুর জনপ্রিয়তা নিয়েও কটাক্ষ করে বলেন, “বিধায়ক পদে জিততে পারবেন কিনা সন্দেহ আছে। আমি দল চেঞ্জ করা লোক, তিনটে দল বদল করেছি। জানি কী করতে হয়।”
সব মিলিয়ে দিলীপ ঘোষের আচমকা ভোলবদল, ‘ছায়াসঙ্গী’ জিয়ারুল হক এবং দলের অন্দরেই বিদ্রোহের সুর— বিজেপিতে তীব্র চাঞ্চল্যের বাতাবরণ তৈরি করেছে। প্রশ্ন উঠছে— শুধুই ভোলবদল? নাকি পর্দার আড়ালে চলা বড়সড় সিন্ডিকেটের 'পর্দাফাঁস'?
চলবে কি বিজেপির ভিতরেই আরও দ্বন্দ্ব? নাকি সামনে আসবে আরও বিস্ফোরক তথ্য?
0 মন্তব্যসমূহ