Hot Posts

6/recent/ticker-posts

Ad Code

Recent in Home

ভগবান শিবের গৃহপতি অবতার : ক্ষুধা কি ? কোন কর্ম সৎ কর্ম ? জীবনে সুখ সমৃদ্ধির রাস্তা দেখান স্বয়ং মহাদেব

 ভগবান শিবের গৃহপতি অবতার 

ভগবান শিবের গৃহপতি অবতার

Who is the avatar of Grihapati Shiva?

-স্বামী আত্মযোগানন্দ 

ভগবান বিষ্ণুর যেমন অসংখ্য অবতার রয়েছে, তেমনি ভগবান শিবেরও বিভিন্ন অবতার হয়েছে। এইসব অবতারের মধ্যে অন্যতম হলেন "গৃহপতি" অবতার। আজ আমরা জানব ভগবান শিবের এই গৃহপতি রূপের কাহিনী।

নর্মদা নদীর তীরে ধর্মপুর নামে এক নগর ছিল। সেখানে ঋষি বিশ্বানর এবং তাঁর পত্নী শুচিশ্মতী বাস করতেন। অনেকদিন পর্যন্ত তাঁদের কোনো সন্তান ছিল না। একদিন শুচিশ্মতী তাঁর স্বামীকে বললেন—

"স্বামী, আমার ইচ্ছে, আমাদের এমন একটি পুত্র হোক, যিনি স্বয়ং ভগবান শিবের মতো হবেন।"

পত্নীর এই ইচ্ছা পূরণ করতে ঋষি বিশ্বানর কাশীতে গমন করেন এবং সেখানে ভগবান শিবের ভীরেশ লিঙ্গের উপাসনা করে কঠোর তপস্যা শুরু করেন।

একদিন, তপস্যার মধ্যেই ঋষি বিশ্বানর দেখলেন—ভীরেশ লিঙ্গের মধ্যে এক কিশোরের রূপে স্বয়ং শিব আবির্ভূত হয়েছেন। তিনি সেই বালক রূপী শিবের পূজা করেন। তাঁর গভীর ভক্তি ও সাধনার ফলে শিবজী প্রসন্ন হন এবং আশীর্বাদ দেন—

"আমি তোমার পত্নী শুচিশ্মতীর গর্ভে জন্ম নেব।"

পরবর্তী সময়ে, ভগবান শিব শুচিশ্মতীর গর্ভে পুত্ররূপে আবির্ভূত হন। জন্মের পরে পিতামহ ব্রহ্মাজী তাঁর নাম রাখেন—"গৃহপতি"।

গৃহপতির ভবিষ্যদ্বাণী

গৃহপতির বয়স ধীরে ধীরে বাড়ছিল। একদিন দেবর্ষি নারদ ঋষি বিশ্বানরের আশ্রমে আসেন এবং গৃহপতিকে দেখে বলেন—

"মুনিবর, এই বালক সব গুণে সম্পন্ন; কিন্তু তার বারো বছর বয়সে সে বিদ্যুৎ বা অগ্নির দ্বারা ভয় বা বিপদের সম্মুখীন হবে।"

এই কথা শুনে বিশ্বানর ও শুচিশ্মতী চিন্তিত হয়ে পড়েন। তাঁদের উদ্বিগ্ন দেখে গৃহপতি বলেন—

"মা-বাবা, আপনি দুঃখ করবেন না। আমি মহামৃত্যুঞ্জয় ভগবানের আরাধনা করব এবং মহাকালকে প্রসন্ন করব।"


গৃহপতির তপস্যা ও ইন্দ্রের পরীক্ষা

গৃহপতি এরপর কাশীতে গমন করেন, এবং বিশ্বনাথ শিবলিঙ্গ দর্শন করে এক শুভ মুহূর্তে একটি নতুন শিবলিঙ্গ প্রতিষ্ঠা করেন। সেই শিবলিঙ্গের উপাসনা করতে থাকেন তিনি।

কয়েকদিন পরে দেবরাজ ইন্দ্র আবির্ভূত হন ও বলেন—"গৃহপতি, আমি তোমার আরাধনায় প্রসন্ন হয়েছি, বর চাও।"

কিন্তু গৃহপতি উত্তর দেন— "আমি আপনার কাছে কিছু চাই না। আমার একমাত্র বরদাতা হলেন ভগবান শিব।"

এই কথা শুনে ইন্দ্র রাগান্বিত হয়ে গৃহপতির উপর আক্রমণ করতে উদ্যত হন। ঠিক তখনই ভগবান শিব স্বয়ং আবির্ভূত হন এবং বলেন—

"গৃহপতি, ইন্দ্রের মাধ্যমে আমি-ই তোমার পরীক্ষা নিচ্ছিলাম, এবং তুমি সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছ। এখন থেকে তোমার উপর মৃত্যুর দেবতা যমরাজেরও কোনো প্রভাব থাকবে না। তুমি যে শিবলিঙ্গ স্থাপন করেছ, সেটি ‘অগ্নীশ্বর’ নামে খ্যাত হবে। এই লিঙ্গের দর্শনে কেউ অগ্নি বা বিদ্যুৎ দ্বারা ভীত হবে না।"

আধ্যাত্মিক শিক্ষা

আমাদের দেহে যে জঠরাগ্নি (ক্ষুধার আগুন) আছে, সেটিই ভগবান শিবের গৃহপতি অবতার। আমরা যখন ক্ষুধার্ত হই, তখন যে অন্ন আহার করি, তা আমাদের দেহ পুষ্ট করে এবং প্রাণে প্রশান্তি দেয়।

এই কাহিনী থেকে আমরা শিখি যে—জঠরাগ্নি বা ক্ষুধা মেটানোর জন্য যে কোনো কাজ করি না কেন, সেটি যেন ধর্ম ও ন্যায়ের পথে হয়। অর্থাৎ, জীবিকা অর্জনের জন্য সৎ উপায় বেছে নিতে হবে, অন্যায় বা প্রতারণা নয়। কোনো কাজ যদি ঈশ্বরকে খুশি করার উদ্দেশ্যে হয় এবং অন্যের অমঙ্গল না করে, তবেই সেটি প্রকৃত ধর্মের কাজ হবে।

এইভাবেই ভগবান শিবের গৃহপতি অবতার আমাদের জীবনচর্চার জন্য একটি পবিত্র ও নৈতিক দিশা প্রদান করেন।

হর হর মহাদেব! 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

Comments

Ad Code