মানুষের ভাষা ওয়েবডেস্ক
একটি নিছক হানিমুন ট্রিপ থেকে শুরু, আর তার শেষ এক ভয়ঙ্কর মৃত্যুর গল্পে—এ যেন সিনেমার থেকেও রোমহর্ষক বাস্তব কাহিনি! মেঘালয়ের পাহাড়ি গিরিখাতে উদ্ধার হল সদ্য বিবাহিত রাজা রঘুবংশীর মৃতদেহ, গায়ে একের পর এক ধারালো আঘাতের চিহ্ন। তদন্তে উঠে এল স্ত্রীর ষড়যন্ত্রের ছক—মূল অভিযুক্ত সোনম রঘুবংশী, যিনি তার স্বামীকে সোনা পরিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন মধুচন্দ্রিমার ছলে মৃত্যুর ফাঁদে!
সোনায় মোড়া মৃত্যু রহস্য!
নিহত রাজা রঘুবংশীর মা উমা রঘুবংশী জানিয়েছেন, সোনম রাজাকে মধুচন্দ্রিমার আগে বলেছিলেন যেন তিনি নিজের সমস্ত দামি সোনার গয়না পরে যান—যার মূল্য প্রায় ₹১০ লাখ! গলায় সোনার চেন, হাতে হীরের আংটি, এবং ব্রেসলেট পরেই রওনা দেন রাজা। অথচ, তার মৃতদেহ থেকে সেই গয়নাগুলিই ছিল নিখোঁজ। এই হানিমুন এর জন্য টিকেট, হোটেল বুকিং সবই নাকি করেছিল সোনম। এমনকি কোনো রকম ফেরার টিকিট কাটান সে। পরিবারকেও জানায়নি তাদের ফেরার কোনো নির্দিষ্ট তারিখ। সন্দেহ ঘনীভূত হতে থাকে—এই কি তবে গয়নার লোভে পরিকল্পিত খুন?
অটপসিতে দেখা গেছে, রাজার মাথায় দু’টি গুরুতর ধারালো আঘাত—একটি সামনে থেকে, আরেকটি পেছন থেকে। তীব্র রক্তক্ষরণেই মৃত্যু হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে অনুমান। এই ঘটনার কিছুদিন আগে, ২২ মে, দম্পতি মাওলাখিয়াত গ্রামে পৌঁছন একটি ভাড়ার স্কুটারে করে। ২৪ তারিখে ওই স্কুটারটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়া যায় শিলং-সোহরা রাস্তার ধারে একটি ক্যাফের সামনে। শুরু হয় তল্লাশি, আর ২ জুন গভীর গিরিখাতে পাওয়া যায় রাজার মৃতদেহ।
রাজার মৃতদেহ উদ্ধারের পর দিনই কাছাকাছি পাওয়া যায় রক্তমাখা একটি দা। এরপর আরও একটি প্রমাণ—একটি রেইনকোট, যা দম্পতির সঙ্গে মেলে, পাওয়া যায় মাওকমা গ্রামে। সন্দেহ দৃঢ় হয় পুলিশের মধ্যে যে এটি নিছক দুর্ঘটনা নয়, বরং ঠান্ডা মাথায় রচিত এক হত্যার গল্প।
হঠাৎ গাজীপুরের ধাবায় স্ত্রী!
ঘটনার নাটকীয় মোড়—সোনম হঠাৎ করেই হাজির হন উত্তরপ্রদেশের ঘাঁজিপুরে এক ধাবায়। জানিয়ে দেন, তার ওপর ডাকাতির চেষ্টা হয়েছিল, অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলেন, কিভাবে সেখানে পৌঁছেছেন মনে নেই! তবে মেঘালয় পুলিশের দাবি, তিনি কোনো নিরীহ ভিক্টিম নন, বরং এই হত্যাকাণ্ডের মূল ষড়যন্ত্রী। এমনকি অভিযোগ উঠেছে, তিনি পেশাদার খুনিদের ভাড়া করেছিলেন স্বামীকে খুন করার জন্য।
মেঘালয়ের উপমুখ্যমন্ত্রী প্রেসটন টাইন্সং জানিয়েছেন, এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত চারজন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে। “সোনমকে শিলংয়ে আনা হচ্ছে তদন্তের স্বার্থে,” ANI-কে জানিয়েছেন টাইন্সং।
একটি প্রেম, একটি বিয়ে, একটি হানিমুন—সবকিছু কি পরিকল্পিত এক খুনের মোড়কে ঢাকা? সোনা, লোভ, ষড়যন্ত্র, নাকি অন্য কোনো অজানা কারণ?
0 মন্তব্যসমূহ