Hot Posts

6/recent/ticker-posts

Ad Code

Recent in Home

ছিঃ! কর্নেল সোফিয়া কুরেশীকে নিয়ে নর্দমার ভাষা বিজেপি মন্ত্রীর : অবিলম্বে ক্ষমা চান- সুপ্রীম কোর্ট ।দলীয় নীরবতা কি মোদীর মুখ উজ্জ্বল করলো ? #Col Sofiya Qureshi

ছিঃ!

সোফিয়া কুরেশীকে নিয়ে নর্দমার ভাষা বিজেপি মন্ত্রীর', 

দলীয় নীরবতা কি মোদীর মুখ উজ্জ্বল করলো ? 

 মানুষের ভাষা , বিশেষ প্রতিবেদন , প্রবীর রায় চৌধুরী :





প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর 'সবকা সাথ, সবকা বিকাশ, সবকা বিশ্বাস' স্লোগান কি শুধুমাত্র রাজনৈতিক মঞ্চের অলঙ্কার? 'অপারেশন সিন্দুর'-এর সাফল্যের পর, যখন দেশবাসী সেনাবাহিনীর ঐক্য ও পরাক্রম দেখল, তখন মধ্যপ্রদেশের বিজেপি মন্ত্রী কুনওয়ার বিজয় শাহের 'নর্দমার ভাষা' প্রমাণ করে, মোদীর নীতির প্রতি তার দলের একাংশের চরম অবজ্ঞা। এই ঘটনা শুধু কর্নেল সোফিয়া কুরেশীকে অপমান করেনি, বরং দেশের সংবিধান, সামরিক বাহিনী এবং সর্বোপরি মোদীর নীতিকে প্রশ্নচিহ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে।


'অপারেশন সিন্দুর'-এর পর, যখন প্রধানমন্ত্রী মোদী দেশের ঐক্য ও নারীশক্তির পরাক্রমের বার্তা দিতে কর্নেল সোফিয়া কুরেশীকে সামনে নিয়ে এলেন,  তার সেই পদক্ষেপের পিছনে জাত -ধর্মের উর্দ্ধে উঠে সবাই ভারতবাসী এই বার্তা সুস্পষ্ট ছিল - অপারেশন সিন্দুর নামকরণেও ছিল গভীর বার্তা - দেশের মা-বোনের মাথার সিঁদুর যারা মুছে দিয়েছে - তাদের পৃথিবী থেকে মুছে ফেলা হবে।অবশ্যই পাহেলগাঁও হামলা ব্যতিক্রমী , কারণ , সেখানে হিন্দুদের সনাক্ত করে করে হত্যা করেছিল সন্ত্রাসবাদীরা।  সেই জন্যই তো গর্জে উঠেছিল কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারিকা।  কর্নেল কুরেশি ও কর্নেল ভমিকা সিং কে টিভির পর্দায় অপারেশন সিঁদুরের নেতৃত্ব দিতে দেখে দেশবাসী গর্বিত বোধ করেছিল। কিন্তু বিজয় শাহের মতো নেতার 'অসভ্য' মন্তব্য সেই গর্বে কালিমা লেপন করেছে। প্রশ্ন উঠছে, প্রধানমন্ত্রী মোদীর নীতি কি তার দলের নেতারা পুরোপুরি মানেন ? সারা পৃথিবীকে বার্তা দেওয়ার জন্য মোদী সোফিয়া কুরেশীকে সামনে নিয়ে এসেছিলেন, অথচ তার দলের এই নেতার মন্তব্য ও আচরণ ঠিক তার নীতির উল্টো , এতে বিজেপি ও স্বয়ং মোদীর কতটা সম্মান বৃদ্ধি হলো ? 

মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্ট যখন বিজয় শাহের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করার নির্দেশ দিল, তখন সুপ্রিম কোর্টও তার মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা করে। প্রধান বিচারপতি বি আর গাভাইয়ের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ স্পষ্ট ভাষায় বলে, "সাংবিধানিক পদে থাকা ব্যক্তির দায়িত্বশীল আচরণ করা উচিত। তিনি কী ধরনের মন্তব্য করছেন? একজন মন্ত্রীর এমন মন্তব্য করা কি উচিত?"


আদালত বিজয় শাহের মন্তব্যকে 'দায়িত্বজ্ঞানহীন', 'অগ্রহণযোগ্য' এবং 'সংবেদনশীলতাহীন' বলে অভিহিত করে। বিচারপতি গাভাই বলেন, "এই দেশ যখন এমন একটি পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তখন তিনি (মন্ত্রী) কী বলছেন, তা তার জানা উচিত।" আদালত আরও বলে, "সাংবিধানিক পদে থাকা ব্যক্তিদের সংযম বজায় রাখা উচিত... একজন মন্ত্রীর প্রতিটি বাক্য দায়িত্বের সঙ্গে উচ্চারণ করা উচিত।"


সুপ্রিম কোর্টে বিজয় শাহের আইনজীবী যখন বলেন, মন্ত্রী ক্ষমা চেয়েছেন এবং তার বক্তব্য ভুল বোঝা হয়েছে, তখন আদালত আরও কঠোর হয়। প্রধান বিচারপতি বলেন, "আপনি জানেন আপনি কে, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কিছু হবে না।" আদালত বিজয় শাহকে মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্টের কাছে ক্ষমা চাইতে বলে।



এই ঘটনা প্রমাণ করে, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্যের বিরুদ্ধে দেশের বিচারব্যবস্থা কতটা কঠোর। কর্নেল সোফিয়া কুরেশীর বিরুদ্ধে বিজয় শাহের মন্তব্য শুধু তাকে ব্যক্তিগত আক্রমণ নয়, বরং দেশের সংবিধান এবং সামরিক বাহিনীর প্রতি চরম অবজ্ঞা।



মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্ট রাজ্য পুলিশকে এই মামলায় ঢিলেঢালা এফআইআর দায়ের করার জন্য তীব্র ভর্ৎসনা করেছে। আদালত স্পষ্ট করে, এফআইআর-এ এমন কোনো উপাদান নেই যা একটি অপরাধ গঠন করতে পারে। আদালত আরও বলে, এই এফআইআর সহজেই বাতিল করা যেতে পারে। আদালত পুলিশকে নির্দেশ দেয়, এফআইআর সংশোধন করে হাইকোর্টের নির্দেশের ১২ নম্বর অনুচ্ছেদের সমস্ত বিবরণ স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে।


বিজয় শাহের মন্তব্য শুধুমাত্র রাজনৈতিক মহলেই নয়, সাধারণ মানুষের মধ্যেও তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে এই মন্তব্যকে 'অপমানজনক, লজ্জাজনক এবং অশ্লীল' বলে অভিহিত করেছেন এবং তার অবিলম্বে বরখাস্তের দাবি জানিয়েছেন।


আরও আশ্চর্যজনক বিষয় হলো, এত কিছু ঘটার পরেও বিজেপি কেন এই মন্ত্রীকে দল থেকে বহিষ্কার করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করল না? কেন আদালত পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হলো? এই নীরবতা কি দলীয় শৃঙ্খলা এবং মোদীর নীতির প্রতি অবজ্ঞার পরিচায়ক নয়?


কর্নেল সোফিয়া কুরেশী, যিনি 'অপারেশন সিন্দুর'-এর অন্যতম মুখ ছিলেন, তিনি শুধুমাত্র একজন সেনা আধিকারিক নন, বরং দেশের গর্ব। তার প্রতি বিজয় শাহের মন্তব্য শুধুমাত্র তাকে অপমান করেনি, বরং দেশের প্রতিটি নাগরিকের আত্মসম্মানে আঘাত হেনেছে।


বিজয় শাহের মন্তব্য প্রমাণ করে, মোদীর 'সবকা সাথ, সবকা বিকাশ, সবকা বিশ্বাস' নীতির বাস্তবায়ন কতটা কঠিন। এই ঘটনা প্রমাণ করে, রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার এবং দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্যের বিরুদ্ধে দেশের বিচারব্যবস্থা কতটা কঠোর।


কর্নেল সোফিয়া কুরেশীকে মানুষের ভাষা স্যালুট জানায়। তার সাহস ও নিষ্ঠা দেশের প্রতিটি নাগরিকের জন্য অনুপ্রেরণা। এই ঘটনার মাধ্যমে দেশের বিচারব্যবস্থা তার নিরপেক্ষতা প্রমাণ করেছে। এখন দেখার, বিজেপি এই ঘটনায় কী পদক্ষেপ নেয়।


বিজয় শাহের মন্তব্য শুধু একটি রাজনৈতিক বিতর্ক নয়, বরং দেশের সংবিধান, সামরিক বাহিনী এবং সর্বোপরি মোদীর নীতির প্রতি একটি বড় প্রশ্নচিহ্ন। এই ঘটনা প্রমাণ করে, রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার এবং দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্যের বিরুদ্ধে দেশের বিচারব্যবস্থা কতটা কঠোর।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

Comments

Ad Code