পুরো বই মুহৃর্তে তৈরী হয়ে যাবে - এই একটা মাত্র উপায়েপরীক্ষার আগের মুহূর্তে:
টেনশনকে বিদায় জানিয়ে কৌশলের জয়
প্রবীর রায় চৌধুরী -
দেখো, আজ আমি তোমাদের কাছে এসেছি একটা খুব জরুরি কথা বলার জন্য। সেটা হল, এই যে পরীক্ষার সময়টা আসছে, এই সময় টেনশন নামক একটা জিনিস আমাদের মধ্যে বাসা বাঁধে। আর এই টেনশনটা যদি তোমরা করো, তাহলে কিন্তু সব শেষ হয়ে যাবে। তোমরা হয়তো ভাবছো, আমি তো বলেই দিলাম টেনশন করতে নেই, কিন্তু এটাকে ফেলব কী করে? টেনশনটা আসলে শুরু হয় কোথা থেকে? ওটা শুরু হয় এই ভাবনা থেকে যে পরীক্ষায় কী প্রশ্ন আসতে পারে। এই "পরীক্ষায় কী প্রশ্ন আসতে পারে?" – এটাই এখনকার সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। আর এই "কী আসতে পারে, কী আসতে পারে" এই ভাবতে গিয়েই কিন্তু আসল টেনশনটা তৈরি হয়।
এতদিন যা পড়েছ, সেটাই হাতিয়ার
কী প্রশ্ন আসতে পারে, সেই নিয়ে এত দুশ্চিন্তা করার কী আছে বলো তো? আমরা তো এতদিন ধরে এত কিছু প্রস্তুতি নিয়েছি। সেই প্রস্তুতিগুলো আমাদের কী সাহায্য করবে? আমরা তো বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন পড়েছি। তাহলে এই টেনশনের মেঘ সরিয়ে, মাথা ঠান্ডা রেখে পরীক্ষায় ভালো নম্বর পাওয়াটাই এখন আমাদের প্রধান কাজ। আমি কিন্তু হতাশ হওয়ার পাত্র নই। আমি সেই মানুষ যে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত চেষ্টা করার কথা বলে। অনেকে হয়তো বলবে, "ওহ, শর্ট কোশ্চেন তো সবাই পারে না। সবাই যদি পারত, তাহলে তো অন্য কিছু হয়ে যেত।" এই ধরনের কথা আমি একদম বলতে রাজি নই।
অল্প সময়েও ভালো ফল সম্ভব
আমি বরং তোমাদের জিজ্ঞাসা করব, আপনারা কোথা থেকে জানলেন যে একটি ছেলে বা একটি মেয়ে অল্প সময়েও দারুণ ফল করতে পারবে না? কেন সে শর্ট কোশ্চেন পারবে না? তাকে তো, তোমাদের তো বইয়ের পাতা খুঁটিয়ে তুলে এনে শর্ট কোশ্চেন কিভাবে করতে হয়, লং কোশ্চেন কিভাবে লিখতে হয়, তার উপরে আমি অনেকগুলো ক্লাস নিয়েছি। পারলে সেই ক্লাসগুলো একটু দেখে নিও। আর আজকের এই ক্লাসে আমি তোমাদের একটা বিশেষ কথা বলব। অনেকে আমাকে জানিয়েছ যে স্যার, হাতে তো আর বেশি সময় নেই। এর মধ্যে আমি আর কী করে সবটা গুছিয়ে নিতে পারি? মনে হচ্ছে এখনও অনেক কিছুই বাকি। তাদের জন্য, আর যাদের প্রস্তুতি ভালো আছে, তাদের সেই প্রস্তুতি আরও মজবুত করার জন্য আমি কিছু কথা বলব।
প্রশ্নের সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতাও
প্রথম কথা যেটা আমি বলব, সেটা হল প্রশ্ন নিয়ে। প্রশ্নের সঙ্গে তোমাদের একটা ভালো সম্পর্ক থাকা দরকার। আমরা এতদিন ধরে কত রকমের প্রস্তুতি নিয়েছি। স্কুলের শিক্ষকেরা তোমাদের পড়িয়েছেন, কোচিং ক্লাসে বা প্রাইভেট টিউটররা যারা আছেন, তাঁরা তোমাদের যথেষ্ট সাহায্য করেছেন। তাঁরা তোমাদের বইয়ের ভেতরের জিনিস মোটামুটি ধরিয়ে দিয়েছেন। এখন হাতে আর কয়েক দিন। যাদের প্রস্তুতি একটু কম হয়েছে, তাদের জন্য এই সময়টা আরও গুরুত্বপূর্ণ। আমি এই ক্লাসে বারবার সেই কম প্রস্তুতি নেওয়া ছেলেমেয়েদের কথাই বলছি – কিভাবে তোমরা এই সময়টাকে কাজে লাগিয়ে সুন্দর একটা রেজাল্ট করতে পারো।
পুরনো প্রশ্নপত্র: সেরা পথপ্রদর্শক
তোমাদের এতদিন পর্যন্ত যা তৈরি হয়েছে, সেটাকে ঝালিয়ে নেওয়ার জন্য এখন পর্যন্ত যারা প্রশ্নের সঙ্গে আলোচনা করোনি – মানে পুরনো প্রশ্নপত্র দেখোনি, সেটা হতে পারে গত ১০ বছরের, ৫ বছরের বা ৬ বছরের প্রশ্নপত্র, কিংবা টেস্ট পেপারের প্রশ্ন – হাতের কাছে যা পাও, সেটাই একবার দেখো। এখন হয়তো প্রত্যেকটা প্রশ্নের উত্তর খুঁটিয়ে দেখা বা লেখার প্র্যাকটিস করার মতো সময় নেই। তাই অন্তত প্রশ্নগুলো পাশে রাখো আর বই থেকে সেই সম্পর্কিত বিষয়গুলো একবার চোখ বুলিয়ে যাও। অনেক সহায়ক বইও বাজারে পাওয়া যায়, সেগুলোর থেকেও প্রশ্ন দেখতে পারো। মানে, প্রশ্নটা দেখো টেস্ট পেপার বা পুরনো কোশ্চেন পেপার থেকে, আর উত্তরটা পড়ো বই থেকে। এখন যদি তোমরা লিখতে বসে প্র্যাকটিস করতে যাও, তাহলে অনেক সময় নষ্ট হবে। তার জন্য আমি এর আগে দুটো-তিনটে ক্লাস নিয়েছি, যেখানে মক টেস্ট কখন দেবে, কিভাবে দৈনিক রুটিন তৈরি করবে, সেইসব নিয়ে আলোচনা করেছি।
প্রযুক্তির ব্যবহার: স্মার্ট প্রস্তুতি
তবে আজ আমি তোমাদের একটা মোক্ষম জিনিসের কথা বলব – কিভাবে অত্যন্ত কম সময়ে তোমরা তৈরি হতে পারবে, আর তার জন্য তোমাদের হাতের ফোনটাই কাজে লাগবে। এই যে তোমরা আমার ক্লাস দেখছো, তার মানে তোমাদের কাছে একটা স্মার্টফোন আছে। আমাদের হাতে যদি এই প্রযুক্তি থাকে, তাহলে আমরা কেন সেটা ব্যবহার করব না আমাদের কাজকে সহজ করার জন্য? কেন ব্যবহার করব না যাতে মাথার পুরো চাপটা হালকা হয়ে যায় আর তোমরা আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে পরীক্ষা দিতে পারো?
নিজের শিক্ষক হও: অডিও রেকর্ডিং টেকনিক
শোনো কিভাবে এটা করবে। তোমরা যে বইটা পড়ছো, তাতে মোটামুটি শর্ট কোশ্চেন কী, লং কোশ্চেন কী, কোনটা ইম্পর্টেন্ট, সেটা এতদিন ধরে আমার ক্লাস দেখে হোক বা তোমাদের শিক্ষকদের থেকে জেনে গেছো। প্রথম কাজ হল, সেই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলো চিহ্নিত করা। দ্বিতীয়ত, সেগুলো হয়তো তোমাদের খাতায় লেখাও আছে বা বইতে দাগানো আছে। এবার তৃতীয় কাজটা মন দিয়ে শোনো। ধরো একটা সাবজেক্টের কথা বলছি। সেই সাবজেক্টে কিছু অংশ তোমাদের দারুণ তৈরি আছে। কিছু অংশ তোমরা বিভিন্ন বই, প্রশ্নপত্র ঘেঁটে বুঝতে পেরেছ যে এগুলো ইম্পর্টেন্ট এবং তোমাদের ভালোমতো আয়ত্তে আছে। আবার কিছু অংশ এমনও আছে যেগুলো ইম্পর্টেন্ট, কিন্তু তোমাদের ঠিকঠাক তৈরি নেই।
শর্ট কোশ্চেন আয়ত্তে আনার সহজ উপায়
এবার যেটা করো। আমি তো তোমাদের ডেইলি রুটিন দিয়েছি। আরে বাবা, এখনও তো ১০ দিন সময় আছে! ১০ দিন মানে অনেক সময়। এখনও কিছুই শেষ হয়ে যায়নি। রেজাল্টের আকাশ-পাতাল তফাত করে দেওয়া যাবে। কী করতে হবে? যখন তোমরা পড়তে বসছো, প্রথমে শর্ট কোশ্চেনগুলোকে টার্গেট করো। তোমাদের কাছে যে টেস্ট পেপার আছে বা পুরনো বছরের প্রশ্নপত্র আছে বা সহায়িকা বই আছে, সেগুলোর মাল্টিপল চয়েস হোক বা এক-দুই নম্বরের শর্ট কোশ্চেনগুলো – এগুলোর কী করবে? হ্যাঁ, দু-একটা সাবজেক্টের ক্ষেত্রে একটু আলাদা হবে, যেমন ইংরেজি, অঙ্ক। সেগুলোর ব্যাপারেও আমি পরে বলছি।
রেকর্ড করো আর শোনো: জাদু দেখবে
দেখো, এখন তোমরা বাড়িতে পড়ছো। এই মুহূর্তে কী করো? পাশে ফোনটার রেকর্ডারটা অন করে দাও। মুখের কাছে বা হেডফোন থাকলে সেটা মুখের কাছে নিয়ে নাও। নিয়ে ওখানে যা পড়ছো, সেটা রেকর্ড হতে থাকুক। তুমি যে শর্ট কোশ্চেনটা পড়ছো, সেটার উত্তরগুলো গড়গড় করে পড়ে যাও। যদি প্রশ্নটাও পড়তে ইচ্ছে না করে, শুধু উত্তরগুলোই তাড়াতাড়ি পড়ে যাও। উত্তরগুলো রেকর্ড হয়ে যাক। এই যে তুমি রেকর্ড করছো, মানে যা পড়ছো, তার মধ্যে কিছু জিনিস দেখবে তোমার খুব ভালো মনে আছে, আবার কিছু জিনিস তেমন মনে নেই। রেকর্ডটা হয়ে গেলে, পুরো বইয়ের যত শর্ট কোশ্চেন আছে, ওই রেকর্ডটাকে একটু পজ করে করে একটা চ্যাপ্টার উল্টাও আর আবার করো। দেখবে, মোটামুটি ১৫-২০ মিনিটের মধ্যে পুরো বইয়ের শর্ট কোশ্চেনগুলো রেকর্ড হয়ে যাবে। একটু সময় এদিক-ওদিক হতে পারে, সেটা তোমাদের বলার স্পিডের উপর নির্ভর করবে।
লং কোশ্চেনও হোক অডিওর বন্ধু
এইভাবে শর্ট কোশ্চেন বা এমসিকিউ-এর একটা ফাইল তৈরি করলে। এবার লং কোশ্চেনের পালা। তোমরা এতদিন ধরে এই পরীক্ষাটা দেওয়ার জন্য কিছু লং কোশ্চেন তো বেছে নিয়েছ। ধরা যাক, তিনটে কোশ্চেন আসবে, তার মধ্যে থেকে একটা লিখতে হবে। সেই বিষয়ের জন্য তোমরা হয়তো দশটা কি পাঁচটা প্রশ্ন সিলেক্ট করেছ বা তৈরি করেছ। এবার কী করো? সেই পার্টিকুলার সাবজেক্টের (আমি এখন একটা সাবজেক্টের কথাই বলছি, পরে অন্য সাবজেক্টের ক্ষেত্রে আসছি) লং কোশ্চেনগুলো বা ছোট-মাঝারি যে প্রশ্নগুলো আছে, জাস্ট ওটা পড়ে রেকর্ড করে নাও। ধরো টিকা বা ব্যাখ্যার ফাইল তৈরি করে নাও। কয়েকটা হোক না কেন, ১০টা প্রশ্ন তুমি উত্তরসহ পড়ছো। আরে বাবা, তোমরা তো কিছু করছো না! তোমরা তো এমনিও পড়ছো। পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই মাইক্রোফোনটা অন করে রেখে দিচ্ছ। ব্যাস, রেকর্ডটা হয়ে যাক। এই রেকর্ডটা যে কত বড় উপকার দেবে, তা তোমরা পরে বুঝতে পারবে।
তিন ফাইলে প্রস্তুতি: সময় বাঁচিয়ে সেরা ফল
তাহলে লং কোশ্চেন, মিডিয়াম কোশ্চেন, শর্ট কোশ্চেন – সব তৈরি হয়ে গেল তিনটে অডিও ফাইলে। এই অডিও ফাইলটা যখন তোমরা এমনি ঘুরছো-ফিরছো, তখন কানে লাগিয়ে শোনো। আরে বাবা, তোমরা তো ফোন ঘাঁটাঘাঁটি করতেই ভালোবাসো! তাহলে এইবার সেই ফোনটাকেই নিজের জীবনের কাজে লাগাও। প্রযুক্তিকে কাজে লাগাও। এটা একটা শর্টকাট পদ্ধতি। টেকনোলজি তো মানুষের কাজকে সহজ করার জন্যই। কঠিন কাজকে সহজ করে দেয়। আমি এখানে তোমাদের সঙ্গে সেই কঠিন জিনিসগুলোকেই একটু সহজ করার চেষ্টা করছি, যতটুকু আমার সাধ্যে আছে।
পড়া ও শোনা: দ্বিগুণ উপকার
তাহলে এক একটা বইয়ের তিনটে করে অডিও ফাইল হয়ে গেল, বা হয়তো একটু বেশিও হতে পারে, তিন-চারটে বা পাঁচটা ফাইল। কী হবে এতে? পড়া যেমন উপকার দেয়, এই পড়াটাই যখন তোমরা কানের মধ্যে শুনবে, জাস্ট ফাইলটা অন করে কানে গান শোনার মতো করে শোনো। একবার করে দেখো, কতটা উপকার পাবে। যখন পরীক্ষা শুরু হবে, তখন দেখবে সেই জিনিসগুলো আপনাআপনি মনে পড়ে যাচ্ছে। পড়া এবং শোনা – এই দুটো জিনিস একসঙ্গে হলে তার বিরাট উপকার হয়। হ্যাঁ, আমি কখনোই বলছি না যে এখন আর বই খুলতে হবে না। তোমরা তো অবশ্যই 100% পড়বে। আর যে ফাঁকা সময়টুকু পাচ্ছ, সেই সময়টাতে, বিশেষ করে যে অংশটা তোমাদের ভালোভাবে তৈরি নেই, বা যে প্রশ্নটা তোমাদের তেমন জানা নেই, সেই অংশের অডিও ফাইলটা কানে দিয়ে শুনতে থাকো।
অঙ্ক, বিজ্ঞান ও ইতিহাসের জন্য বিশেষ টিপস
অঙ্কের ক্ষেত্রে এই জিনিসটা একটু মুশকিল, কারণ অঙ্ক তো মুখে পড়ে মুখস্থ করার বিষয় নয়। কাজেই অঙ্কের ক্ষেত্রে তোমাদের প্র্যাকটিস করতে হবে। তবে অঙ্কের মধ্যে তোমরা এটা করতে পারো – কিছুটা যদি কল্পনা করতে পারো, যেমন উপপাদ্যটাকে সামনে রাখা রয়েছে আর কানেও ওটা বাজছে। এটা খানিকটা সাহায্য করতে পারে। তবে অঙ্কের সবচেয়ে বড় কথা হল, ফর্মুলাগুলো। অঙ্কের ফর্মুলাগুলো, ভৌতবিজ্ঞানের ফর্মুলাগুলো, ভৌতবিজ্ঞানের রিঅ্যাকশনগুলো, ইতিহাসের সাল-তারিখগুলো – এগুলো তোমরা এভাবে রেকর্ড করে বারবার শুনতে পারো।
বাংলা সাহিত্য: আর ভুল হবে না
আর বাংলার ক্ষেত্রে? কোন গল্প বা কবিতা কে লিখেছেন, সেটা মনে রাখতে অসুবিধা হয়? বা কবিতার কোন লাইন কোথা থেকে এসেছে, বুঝতে পারো না? তোমরা যদি গল্প বা কবিতাটা একবার রিডিং পড়ে যাও, আর তারপর রেকর্ডিং শোনো, তাহলে কোন জায়গা থেকে কোন লাইন আসলে তোমাদের আর ভুল হবে না। কোন কবি বা লেখক লিখেছেন, আর তার প্রসঙ্গটাই বা কী, সেটা তোমাদের আর ভুলে যাওয়ার কোনও চান্স নেই।
লং কোশ্চেনের পয়েন্ট মনে রাখার কৌশল
তেমনি আমি লং কোশ্চেনের উত্তর পয়েন্ট ধরে কিভাবে লিখতে হয়, তার অনেকগুলো ক্লাস নিয়েছি। সেই ক্লাসগুলো একটু দেখো। তাহলে সেই পয়েন্টগুলো যদি তোমাদের মনে থাকে, সেই পয়েন্টগুলোর একটা রেকর্ড করে নিয়ে শুনলে, দেখবে তোমাদের মনে রাখার মতো যা যা দরকার, সেগুলো খুব সহজে আয়ত্তে এসে যাচ্ছে। যাদের মনে হচ্ছে হাতে খুব কম সময় আছে, কিভাবে তাড়াতাড়ি প্রস্তুতি নেবে, তাদের জন্য এটাই সেরা উপায় – যা পড়বে, মুখ দিয়ে বলো, রেকর্ড করো এবং সঙ্গে সঙ্গে শুনতে থাকো। দেখবে একবার-দুবার-তিনবার শুনলেই পুরো জিনিসটা জলের মতো পরিষ্কার হয়ে যাবে। আর পরীক্ষার হলে বসে সেগুলো অবশ্যই মনে পড়বে। কারণ আমরা দেখা এবং শোনা – এই দুটো জিনিস যখন একসঙ্গে করি, তখন সেটা আমাদের মনে বেশি থাকে। তবে বইটা অবশ্যই চোখের সামনে রাখবে। যখন শুনছো, পারলে বইয়ের পাতা উল্টে দেখো। দেখবে কত সুন্দর প্রস্তুতি হয়ে যাচ্ছে।
চেষ্টা করো, জয় তোমারই হবে
এই ক্লাসে আমি এই কয়েকটা জিনিসই তোমাদেরকে বোঝানোর চেষ্টা করলাম। যাদের হাতে কম সময় আছে, যাদের প্রস্তুতি এখনও দুর্বল, তাদের জন্য আমি বারবার বলছি – এই পদ্ধতিটা একবার চেষ্টা করে দেখো। আর যাদের প্রস্তুতি ভালো আছে, তারাও একবার এটা ট্রাই করে দেখতে পারো, হয়তো আরও বেশি উপকার পাবে। এর সঙ্গে আরেকটা কথা বলব – এখন কিন্তু ওই চ্যাট করা, গেম খেলা – এই জিনিসগুলো একদম বন্ধ করো। এখনকার প্রতিটা মুহূর্ত তোমাদের নিজেদের জন্য, নিজেদের ভবিষ্যতের জন্য ডেডিকেট করো। একদম অল্প সময় আছে। খারাপ ছেলে বা ভালো ছেলে বলে কিছু হয় না। যে চেষ্টা করবে, সেই ভালো রেজাল্ট করবে, একদম সোজা কথা। খারাপ ছাত্র-ছাত্রী বলে কিছু হয় না, যে চেষ্টা করবে, সেই ভালো ছাত্র-ছাত্রী। আর আসল কথা হল, এই কদিনে তোমরা এমন কিছু করতে পারো, যদি এই শর্টকাট টেকনিকগুলো কাজে লাগাও। আমার আগের ক্লাসগুলো একটু দেখো, আর এই পদ্ধতিটা প্রয়োগ করো। এমন হতেই পারে, তোমরা একটা দারুণ কিছু করে দেখালে সবাইকে। দেখিয়ে দাও যে "হ্যাঁ, আমিও পেরেছি। আমি পিছিয়ে ছিলাম, আমি দুর্বল ছিলাম, কিন্তু দেখো, আমার কত সুন্দর রেজাল্ট!" জীবনে একবার দেখিয়ে দাও।
তো, এই ক্লাসে আমি প্রবীর রায় চৌধুরী এতক্ষণ তোমাদের সঙ্গে ছিলাম। তোমরা যারা নতুন এসেছো, যাদের কেউ তেমনভাবে পড়াশোনা দেখিয়ে দেওয়ার নেই, সেরকম ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য তোমরা একটু শেয়ার করো, তোমাদের কেমন লাগলো সেটা জানিও। আর খুব ভালো করে পড়াশোনা করো। প্রতিটা মুহূর্তকে এখন কাজে লাগাও। প্রত্যেকটা মুহূর্তকে কাজে লাগাও, অকাজে সময় নষ্ট করো না। এই পড়াশোনার কাজের মধ্যেই আনন্দ খুঁজে পাও। আর টেনশন দেখবে, এই জিনিসগুলো করা মানেই তোমার সব তৈরি। যদি তৈরি হয়ে গিয়ে থাকে, তাহলে আবার টেনশন কিসের? নরমালভাবে যাবে, লিখবে আর চলে আসবে। টেনশন জিনিসটাকে আগে হটিয়ে দাও। টেনশন থাকলে ও তোমাকে কোনও উপকার করবে না। বরং, টেনশন নামক ভদ্রলোক শুধু নেগেটিভ কথা বলবে – "এটা পারো না", "ওটা আসেনি", "কী প্রশ্ন আসতে পারে" – এইসবগুলো হচ্ছে টেনশন। টেনশন জিনিসটা সরিয়ে দাও। ওরে বাবা! এত বড় জীবনের বিরাট বড় পরীক্ষা দিতে যাচ্ছ, এসব চিন্তা মাথা থেকে হঠাও। এটা একটা নরমাল পরীক্ষা, যেখানে কিছু প্রশ্ন আসবে আর তোমায় সেগুলোর উত্তর লিখতে হবে। ব্যাস! কিছু প্রশ্ন আসবে, আর সেই প্রশ্নগুলোর উত্তর তোমায় লিখতে হবে। এর বাইরে তো আর কিছু ব্যাপার না। ক্লাস ওয়ান থেকে টেন পর্যন্ত কত পরীক্ষা দিয়েছো! এটাও সেই একই রকম। একই পেন, একই খাতা, একই নাম লিখতে হবে, রোল নম্বর লিখতে হবে, প্রশ্নের উত্তর লিখতে হবে। ব্যাস! হ্যাঁ, এই সময়টাতে একটু ভালো করে চেষ্টা করো। মন দিয়ে সুন্দর করে চেষ্টা করো। যা তৈরি থাকবে, অবশ্যই পারবে। অবশ্যই অবশ্যই অবশ্যই পারবে। তুমিও পারবে, তুমিও জিতে দেখিয়ে দাও। চলো, এই ক্লাস এই পর্যন্তই। তোমাদের সঙ্গে অনেকক্ষণ সময় কাটালাম। তো, দেখা হচ্ছে আবার সামনের ক্লাসে। নজর রেখো।
কিভাবে পরীক্ষায় ভাল নম্বর স্কোর করবেন- টিপস এবং কৌশল,
0 মন্তব্যসমূহ