Hot Posts

6/recent/ticker-posts

Ad Code

Recent in Home

Boycot Bangladesh : ধীরে ধীরে ভারতের চক্রব্যূহে বিশ্বাসঘাতক বাংলাদেশ - অপারেশন সিঁদুরের সিঁদুরে মেঘ এবার পূব আকাশে

বিশ্বাসঘাতকতার জবাব! বাংলাদেশকে চক্রব্যূহে আবদ্ধ করছে ভারত, ইউনূসের 'অভিভাবকত্বের' দর্প চূর্ণ



মানুষের ভাষা,  বিশেষ প্রতিবেদন,

সাম্প্রতিক সময়ে ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্ক ক্রমশ তিক্ততার দিকে ধাবিত হচ্ছে। এর মূল কারণ, বাংলাদেশের কিছু নীতি ও কার্যকলাপ যা ভারতের নিরাপত্তা ও স্বার্থের পরিপন্থী বলে মনে করছে নয়াদিল্লি। বিশেষ করে, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনূসের একের পর এক ভারতবিরোধী মন্তব্য এবং জামাত-সহ জঙ্গিগোষ্ঠীগুলির প্রতি তার গোপন সমর্থন ভারতীয় মহলে তীব্র ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। এর ফলস্বরূপ, ভারত গত কয়েক মাস ধরে বাংলাদেশকে ধীরে ধীরে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক দিক থেকে ঘিরে ফেলার নীতি নিয়েছে, যা ইতিমধ্যেই স্পষ্ট হতে শুরু করেছে।


মহম্মদ ইউনূসের সাম্প্রতিক চীন সফর এবং সেখানে উত্তর-পূর্ব ভারতকে 'স্থলবেষ্টিত' আখ্যা দিয়ে বাংলাদেশকে সাগরের 'অভিভাবক' হিসেবে জাহির করার ঔদ্ধত্যপূর্ণ মন্তব্য ভারতের কাছে অত্যন্ত আপত্তিকর ঠেকেছে। ইউনূসের এই ধরনের মন্তব্য শুধু ভারতের আঞ্চলিক অখণ্ডতাকে চ্যালেঞ্জ করাই নয়, বরং উত্তর-পূর্ব ভারতের উন্নয়ন ও সংযোগের প্রচেষ্টাকেও ব্যঙ্গ করার শামিল। নয়াদিল্লি এই ঔদ্ধত্যের যোগ্য জবাব দিতে বদ্ধপরিকর, এবং সেই লক্ষেই একের পর এক পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

Image - India Today


ভারত উত্তর-পূর্বাঞ্চলের পরিকাঠামোগত উন্নয়নের উপর বিশেষ জোর দিয়েছে। মেঘালয়ের শিলং থেকে আসামের শিলচর পর্যন্ত ১৬৬.৮ কিলোমিটার দীর্ঘ চার লেনের একটি উচ্চ-গতির মহাসড়ক নির্মাণ এই অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থায় এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই মহাসড়কটি কলকাতা থেকে মায়ানমার হয়ে ব্যাংকক পর্যন্ত বিস্তৃত একটি আন্তর্জাতিক মহাসড়কের সাথে যুক্ত হবে। এর ফলে উত্তর-পূর্ব ভারতের পণ্য পরিবহনের জন্য বাংলাদেশের উপর নির্ভরশীলতা বহুলাংশে হ্রাস পাবে। ন্যাশনাল হাইওয়ে অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন লিমিটেডের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা স্পষ্ট জানিয়েছেন যে বাংলাদেশের 'স্থলবেষ্টিত' মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় এই শিলং-শিলচর হাইওয়ে তৈরি হচ্ছে এবং ২০৩০ সালের মধ্যে এর কাজ সম্পন্ন হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। এই সড়কটি মিজোরাম, ত্রিপুরা, মণিপুর এবং বরাক উপত্যকার সাথে মেঘালয়ের যোগাযোগ ব্যবস্থাকে আরও উন্নত করবে, যেখানে সাড়ে আট ঘণ্টার যাত্রা মাত্র পাঁচ ঘণ্টায় সম্পন্ন করা সম্ভব হবে।



শুধু সড়কপথই নয়, ভারত জলপথেও বাংলাদেশের উপর নির্ভরতা কমাতে সক্রিয়। বিদেশ মন্ত্রকের 'কালাদান মাল্টি-মোডাল ট্রানজিট ট্রান্সপোর্ট প্রজেক্ট'-এর মাধ্যমে কলকাতা বন্দরকে মায়ানমারের সিট্টে বন্দরের সাথে সড়ক ও জলপথে সংযুক্ত করা হচ্ছে। এই প্রকল্পের অধীনে, উত্তর-পূর্ব ভারত থেকে পণ্য পরিবহনের জন্য শিলিগুড়ি করিডোর বা 'চিকেন নেক'-এর উপর নির্ভরতাও কমবে। মায়ানমারের সিট্টে বন্দর ব্যবহার করে উত্তর-পূর্বাঞ্চল থেকে পণ্য সরাসরি ভারতের বিশাখাপত্তনম, কলকাতা ও পারাদীপে পাঠানো যাবে। এর ফলে বাংলাদেশের দক্ষিণ দিকে সাগরপথে ভারতের আনাগোনা আরও বাড়বে, যা কার্যত বাংলাদেশকে চতুর্দিক থেকে ঘিরে ফেলার একটি সুস্পষ্ট কৌশল। এমনিতেই ভারতের তিন দিক দিয়ে বাংলাদেশ পরিবেষ্টিত, এবং এই নতুন জলপথের সংযোগ বাংলাদেশের উপর ভারতের কৌশলগত নিয়ন্ত্রণ আরও দৃঢ় করবে।



মহম্মদ ইউনূসের বিতর্কিত মন্তব্যের পাশাপাশি, বাংলাদেশে জামাত-সহ বিভিন্ন জঙ্গিগোষ্ঠীর ক্রমবর্ধমান কার্যকলাপ এবং তাদের প্রতি ইউনূসের  গোপন সমর্থন ভারতের উদ্বেগের কারণ। বিভিন্ন গোয়েন্দা সূত্রে খবর, ইউনূসের ছত্রছায়ায় বাংলাদেশে ভারতবিরোধী কার্যকলাপ ক্রমশ বাড়ছে, যা ভারতের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য একটি বড় হুমকি। এই পরিস্থিতিতে, ভারত বাংলাদেশকে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিকভাবে দুর্বল করে জঙ্গিগোষ্ঠীগুলির আর্থিক সহায়তা বন্ধ করতে চাইছে। স্থল ও জলপথে বিকল্প যোগাযোগ ব্যবস্থা তৈরি করার পাশাপাশি, ভারত বাংলাদেশের সাথে বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রেও ধীরে ধীরে কঠোর নীতি অবলম্বন করছে। বাংলাদেশি পণ্যের প্রবেশে নিয়ন্ত্রণ আরোপ এবং ভারতীয় পণ্যের উপর অযৌক্তিক শুল্ক ধার্য করার মতো পদক্ষেপগুলি সেই নীতিরই অংশ।



গত কয়েক মাসে ভারত ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশের উপর অর্থনৈতিক চাপ বৃদ্ধি করেছে। উত্তর-পূর্বের স্থলবন্দরগুলিতে বাংলাদেশি পণ্যের প্রবেশে কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছে। তৈরি পোশাক, প্লাস্টিক, মেলামাইন, আসবাবপত্র, জুস, কার্বোনেটেড পানীয় এবং প্রক্রিয়াজাত খাবারের মতো গুরুত্বপূর্ণ পণ্যগুলির আমদানি এখন কলকাতা বা ন्हाভা শেভা বন্দরের মাধ্যমে ঘুরপথে করতে হচ্ছে, যার ফলে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের পরিবহন খরচ অনেক বেড়ে গেছে। পূর্বে বাংলাদেশের ৯৩ শতাংশ রপ্তানি এই স্থলপথগুলির মাধ্যমেই ভারতে প্রবেশ করত। প্রতি বছর প্রায় ৭৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পোশাক ভারতে রপ্তানি করে বাংলাদেশ, এবং এই নতুন নিষেধাজ্ঞার ফলে তাদের আরএমজি সেক্টর মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে। ভারতীয় কর্মকর্তারা এই পদক্ষেপকে "ন্যায্য বাণিজ্য" নিশ্চিত করার দিকে একটি পদক্ষেপ হিসেবে উল্লেখ করেছেন, কারণ বাংলাদেশ ভারতের উত্তর-পূর্বের বাজারে অবাধ প্রবেশাধিকার ভোগ করে, অথচ ভারতীয় রপ্তানির ক্ষেত্রে বিভিন্ন বাধা আরোপ করে।



শুধু তাই নয়, বাংলাদেশ ভারতীয় পণ্য পরিবহনের জন্য প্রতি টন প্রতি কিলোমিটার ১.৮ টাকা চার্জ করে, যা তাদের অভ্যন্তরীণ হারের দ্বিগুণেরও বেশি। ভারতীয় কর্মকর্তাদের মতে, বাংলাদেশ পারস্পরিক সুবিধা ছাড়া বাজারের প্রবেশাধিকার আশা করতে পারে না। বহু বছর ধরে ভারত সমান সুবিধা ছাড়াই ছাড় দিয়েছে, এবং এই নতুন সিদ্ধান্ত সেই ভারসাম্য পুনরুদ্ধার করবে।


অন্যদিকে, বাংলাদেশ এখনও উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলির সীমান্তবর্তী আইসিপিগুলিতে ভারতীয় রপ্তানির উপর বন্দর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে চলেছে। বাংলাদেশের অযৌক্তিকভাবে উচ্চ ট্রানজিট চার্জ উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলির শিল্প বিকাশের ক্ষেত্রে একটি বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা কার্যত ভারতীয় মূল ভূখণ্ডে তাদের প্রবেশাধিকারকে সীমিত করে।


ভারতের এই সুচিন্তিত কৌশল বাংলাদেশকে ধীরে ধীরে অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল করে তুলবে এবং একই সাথে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিকল্প যোগাযোগ ব্যবস্থা তৈরি করে দেশটির উপর কৌশলগত নির্ভরতা কমিয়ে আনবে। মহম্মদ ইউনূসের ঔদ্ধত্যপূর্ণ মন্তব্য এবং জঙ্গিগোষ্ঠীর প্রতি তার সমর্থন ভারতের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে যে গভীর ফাটল তৈরি করেছে, এই পদক্ষেপগুলি তারই প্রতিফলন। 'গার্ডিয়ান' সাজার স্বপ্ন দেখা বাংলাদেশ এখন নিজেই ভারতের তৈরি করা এক 'চক্রব্যূহে' আবদ্ধ হতে চলেছে, যেখানে প্রতিটি পদক্ষেপ তাদের জন্য আরও কঠিন হয়ে উঠবে। ভারতের এই কঠোর নীতি ভবিষ্যতে দুই দেশের সম্পর্ককে কোন দিকে নিয়ে যায়, সেটাই এখন দেখার বিষয়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

Comments

Ad Code