মানুষের ভাষা ওয়েবডেস্ক
কলকাতা, ৩১ জুলাই: রাজ্য রাজনীতিতে ফের উত্তাল পরিস্থিতি। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক মনোজ আগরওয়াল রাজ্যের সমস্ত জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছেন, গত এক বছরে অনুমোদিত ফর্ম-৬-এর উপর নমুনা ভিত্তিক তদন্ত চালাতে। এই নির্দেশের পেছনে রয়েছে ফর্ম-৬-এর মাধ্যমে ভুয়ো ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তির গুরুতর অভিযোগ। বিরোধী দলনেতা ও বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারীর দাবি, এটি "গণতন্ত্রের ওপর এক ভয়ঙ্কর বিশ্বাসঘাতকতা", যার মূল কাণ্ডারি তৃণমূল কংগ্রেসের দুর্নীতিগ্রস্ত শাসন।
ফর্ম-৬-এর অপব্যবহার: চূড়ান্ত অনিয়মের প্রমাণ
মনোজ আগরওয়াল এক নির্দেশনায় জানিয়েছেন, ফর্ম-৬ অনুমোদনের ক্ষেত্রে ১৯৬০ সালের নির্বাচক নিবন্ধন আইন-এর নিয়ম লঙ্ঘিত হয়েছে। প্রাথমিকভাবে মাত্র ১% ফর্ম-৬ পরীক্ষা করেই দেখা গেছে, দুই নির্বাচন আধিকারিক (ই.আর.ও.) বিপুল সংখ্যক ভুয়ো আবেদন অনুমোদন করেছেন। বি.এল.ও বা বুথ স্তরের অফিসারদের যাচাই ছাড়াই একাধিক আবেদন অনুমোদিত হয়েছে এবং একাধিক আবেদনপত্রে একইরকম নথি সংযুক্ত হয়েছে।
সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয়, এই দুই ই.আর.ও নিজেরাই স্বীকার করেছেন, তারা ফর্ম-৬ অনুমোদনের দায়িত্ব এমন কর্মীদের দিয়েছেন যারা একেবারেই যোগ্য নন—বিডিও অফিসের ডাটা এন্ট্রি অফিসার বা ক্যাসুয়াল স্টাফ।
শুভেন্দু অধিকারীর তীব্র প্রতিক্রিয়া: তৃণমূলের শাসনে গণতন্ত্র হুমকির মুখে
এই ঘটনায় প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখেন:
"পশ্চিমবঙ্গের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের সাম্প্রতিক নির্দেশপত্র গণতন্ত্রের প্রতি এক ভয়াবহ বিশ্বাসঘাতকতার পর্দা ফাঁস করেছে। মমতা ব্যানার্জীর শাসনে ভোটার তালিকায় জালিয়াতির মাধ্যমে ভুয়ো ভোটার যুক্ত করা হচ্ছে এবং অযোগ্য ব্যক্তিদের হাতে নির্বাচন সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব তুলে দেওয়া হচ্ছে।"
তিনি আরো বলেন, " বি.এল.ও -দের দিয়ে জোর করে রেকর্ড জাল করানো, ই.আর.ও.-দের তরফে দায়িত্বহীনভাবে ভোটার তালিকার কাজ অযোগ্য হাতে তুলে দেওয়া, এটা শুধুমাত্র দুর্নীতি নয়—এটা সাধারণ মানুষের ভোটাধিকার লঙ্ঘনের সামিল।"
শুভেন্দু অধিকারী অবিলম্বে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর তদন্ত ও শাস্তির দাবি জানান।
বিজেপির অভিযোগ: ভোট লুঠের প্রস্তুতি নিচ্ছে তৃণমূল
বিজেপির পক্ষ থেকে আরও অভিযোগ উঠেছে, ২০২৬ বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে তৃণমূল কংগ্রেস এক পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রে নেমেছে—নির্বাচনী তালিকায় ভুয়ো ভোটার ঢুকিয়ে ভোট-ব্যবস্থাকে নিজেদের পক্ষে মোড় দেওয়ার চেষ্টা করছে। ফর্ম-৬, ৭ ও ৮-এর অনুমোদনে অস্থায়ী কর্মীদের ব্যবহার করিয়ে গোটা প্রক্রিয়াকে কলুষিত করা হচ্ছে।
তদন্তে নামছে নির্বাচন কমিশন
মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক মনোজ আগরওয়াল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দিল্লি রওনা হয়েছেন, যেখানে তিনি মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমারের সঙ্গে বৈঠক করবেন। বৈঠকে সম্ভাব্য স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন (সার ) বা বিশেষ ভোটার তালিকা সংশোধনের সময় নির্ধারণ ও তার আগে করণীয় বিষয়ে আলোচনা হবে।
ইতিমধ্যে ২০০২ সালের সার -এর তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে, এবং প্রশিক্ষণও শুরু হয়েছে। আগামী ৬-৮ মাসের মধ্যে ভোট হতে পারে বলেই অনুমান। আগরওয়ালের কথায়, "এই প্রশিক্ষণ আবার দেওয়া সম্ভব নয়, এখনই প্রস্তুতি নিতে হবে।"
পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনী ব্যবস্থায় এই মুহূর্তে যে গুরুতর অনিয়ম চলছে, তার ইঙ্গিত স্পষ্ট। একদিকে যেখানে বিজেপি নেতৃত্ব এই দুর্নীতিকে গণতন্ত্রের হত্যার সঙ্গে তুলনা করছেন, অন্যদিকে তৃণমূল কংগ্রেস এই বিষয়ে নীরব। এই নীরবতাই কি অপরাধের প্রমাণ? জনগণের প্রশ্ন এখন একটাই—কতটা ভুয়ো ভোট দিয়ে শাসন টিকিয়ে রাখবে তৃণমূল?
শুভেন্দু অধিকারীর এই সাহসী অবস্থান গণতন্ত্র রক্ষার লড়াইয়ে নতুন বার্তা দিচ্ছে বাংলার জনতাকে।
0 মন্তব্যসমূহ