Hot Posts

6/recent/ticker-posts

Ad Code

Recent in Home

এবার বিদেশি সাইবার চক্রের প্রতারণার জালে কলকাতাবাসী, টার্গেট সল্টলেকের বাসিন্দারা : তদন্তে প্রকাশ চাঞ্চল্যকর তথ্য

 


মানুষের ভাষা ওয়েবডেস্ক 

সল্টলেক, নিউ টাউন ও কলকাতার বিভিন্ন এলাকার শতাধিক মানুষকে লক্ষাধিক টাকা প্রতারণার ফাঁদে ফেলে দেওয়া ‘ডিজিটাল অ্যারেস্ট’ চক্রের হদিস মিলল দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে সক্রিয় আন্তর্জাতিক সাইবার গ্যাংয়ের সঙ্গে। তদন্তে উঠে এসেছে এমনই বিস্ফোরক তথ্য।

বিধাননগর পুলিশ জানিয়েছে, প্রতারণার শিকারে পরিণত হওয়া অধিকাংশ ঘটনায় সূত্র মিলেছে ক্যাম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ডে পরিচালিত একটি চীনা নিয়ন্ত্রিত সাইবার চক্রের সঙ্গে। এই চক্রে ভারত, পাকিস্তান, নেপাল এবং বাংলাদেশ থেকে লোক নিয়োগ করা হচ্ছে এবং তাঁদের মাধ্যমে ভারতীয়দের টার্গেট করা হচ্ছে।

বিদেশ সফরে প্রস্তুত তদন্তকারী দল

একজন শীর্ষ পুলিশ কর্তা জানিয়েছেন, “আমরা স্পষ্টভাবে চিহ্নিত করেছি যে একাধিক বিদেশি সাইবার গ্যাং এই প্রতারণায় জড়িত এবং টাকা পাচারের রুট গেছে চীনা কার্টেল পর্যন্ত। তাই ক্যাম্বোডিয়া ও ভিয়েতনামে একটি তদন্তকারী দল পাঠানোর প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।”

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বিদেশি প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করার জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রক (MEA) এবং ইন্টারপোল-এর সাহায্য চাওয়া হয়েছে।

ফাঁদে পড়ছেন ভারতীয়রাই

পুলিশ জানিয়েছে, এই চক্রগুলি প্রথমে দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের মানুষকে আকর্ষণীয় চাকরির টোপ দিয়ে নিয়ে যায়। পরে তাঁদের জোর করে প্রতারণামূলক কল সেন্টারে কাজ করানো হয়। সম্প্রতি, ক্যাম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ড থেকে ৬০০ জন ভারতীয়কে ফিরিয়ে আনা হয়েছে, যাঁরা এখন তদন্তে সহায়তা করছেন।

ডিজিটাল অ্যারেস্ট: কল্যাণীতে প্রথম সাজা

ভারতের ইতিহাসে প্রথম ডিজিটাল অ্যারেস্ট মামলায় কল্যাণীর আদালত সম্প্রতি ৯ জন অপরাধীকে যাবজ্জীবন সাজা দিয়েছে। রানাঘাটের এক বাসিন্দাকে ভয় দেখিয়ে ১ কোটি টাকা আদায় করেছিল তারা। তদন্তে জানা যায়, ভিডিও কলগুলি ক্যাম্বোডিয়া থেকে করা হলেও ব্যবহৃত হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর ছিল একটি ভারতীয় টেলিকম সংস্থার।

এই চক্রটি বাংলা ও হিন্দিতে অত্যন্ত সাবলীল হওয়ায়, বহু সাধারণ মানুষ প্রতারণার শিকার হয়েছেন। তাদের লক্ষ্য ছিলেন মূলত বয়স্ক ও প্রযুক্তি সম্পর্কে অজ্ঞ লোকেরা।

মিউল অ্যাকাউন্ট, ক্রিপ্টোকারেন্সি ও টেলিগ্রাম চ্যানেল

প্রতারণার টাকা প্রথমে বিভিন্ন ভারতীয় অ্যাকাউন্টে পাঠানো হতো, যেগুলিকে বলা হয় ‘মিউল অ্যাকাউন্ট’— অর্থাৎ যাদের অ্যাকাউন্ট ভাড়া নেওয়া হতো কমিশনের বিনিময়ে। এরপর সেই টাকা রূপান্তরিত হতো ক্রিপ্টোকারেন্সি USDT (Tether)-এ এবং বিভিন্ন বিদেশি অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দেওয়া হতো। এই গোটা কার্যকলাপ টেলিগ্রাম চ্যানেল ও চীনা মেসেজিং অ্যাপ ব্যবহার করে নিয়ন্ত্রণ করা হতো। OTP ও ব্যাঙ্কিং তথ্য হাতিয়ে নেওয়ার জন্য সফটওয়্যার টুল ব্যবহার করে সেগুলি বিদেশে অবস্থানরত হ্যান্ডলারদের কাছে পাঠিয়ে দিত, যাতে তারা দূর থেকেই অ্যাকাউন্টে ঢুকতে পারে।

বিদেশে পাচার হওয়া টাকা কোথায়?

পুলিশ জানিয়েছে, প্রতারিত টাকা ক্যাম্বোডিয়া, সিঙ্গাপুর, চীন ও নেপালের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ঘুরে যায়, যার ফলে ভারতীয় প্রশাসনের পক্ষে টাকা ট্র্যাক করা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়ে।

প্রশাসনের বার্তা

বিধাননগর পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, “এই প্রতারক চক্রগুলি অত্যন্ত পেশাদার। এদের ধরতে আন্তর্জাতিক সমন্বয় অত্যন্ত জরুরি। সাধারণ মানুষকে প্রযুক্তিগত সতর্কতা অবলম্বন করার আবেদন জানানো হচ্ছে।”

বিশেষ পরামর্শ: কোনও অজানা নম্বর থেকে ভিডিও কল বা হুমকিমূলক বার্তা এলে সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় থানায় অথবা সাইবার সেলে অভিযোগ জানান।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

Comments

Ad Code