Hot Posts

6/recent/ticker-posts

Ad Code

Recent in Home

গান্ধীমূর্তির পাদদেশে আন্দোলন তুঙ্গে: এসএসসি চাকরিহারাদের দাবি-দাওয়া নিয়ে উত্তাল শহর, এবার লক্ষ্য যন্তরমন্তর

গান্ধীমূর্তির পাদদেশে আন্দোলন তুঙ্গে: এসএসসি চাকরিহারাদের দাবি-দাওয়া নিয়ে উত্তাল শহর, এবার লক্ষ্য যন্তরমন্তর


নিজস্ব প্রতিনিধি ● কলকাতা

চাকরি হারানোর যন্ত্রণা, প্রতিশ্রুতির অপেক্ষা এবং ন্যায়বিচারের দাবিতে ফের উত্তাল শহর কলকাতা। এসএসসি দুর্নীতিকাণ্ডে চাকরি হারানো শিক্ষক-শিক্ষিকারা এবং শিক্ষাকর্মীরা শনিবার সকাল থেকেই গান্ধীমূর্তির পাদদেশে অবস্থান বিক্ষোভে বসেছেন। তাঁদের একটাই দাবি—যোগ্যদের সম্মানের সঙ্গে চাকরিতে পুনর্বহাল। এর আগে বৃহস্পতিবার থেকে এসএসসি ভবনের সামনে তিন চাকরিহারা অনশন শুরু করেন। দুইপ্রান্তে দুই ভিন্ন কর্মসূচি, কিন্তু বক্তব্য অভিন্ন—ন্যায় চাই, স্বীকৃতি চাই, আর কোনও আশ্বাস নয়।



শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক, আশ্বাস মিললেও সন্তুষ্ট নন আন্দোলনকারীরা

শুক্রবার বিকাশ ভবনে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু, এসএসসি চেয়ারম্যান এবং চাকরিহারাদের প্রতিনিধিদের মধ্যে প্রায় আড়াই ঘণ্টা দীর্ঘ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে চাকরিহারাদের তরফে তিনটি প্রধান দাবি জানানো হয়—যোগ্য ও অযোগ্য প্রার্থীদের তালিকা আইনি সিলমোহর দিয়ে প্রকাশ করতে হবে, ২২ লক্ষ পরীক্ষার্থীর ওএমআর শিটের মিরর ইমেজ প্রকাশ করতে হবে এবং তালিকা প্রকাশের পূর্বে সবরকম আইনি পরামর্শ গ্রহণ করে তাঁদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।


এসএসসি চেয়ারম্যান এবং শিক্ষামন্ত্রী উভয়েই আশ্বাস দেন যে, আগামী ২১ এপ্রিলের মধ্যে তালিকা প্রকাশের উদ্যোগ নেওয়া হবে। ওএমআর শিটের প্রসঙ্গে জানানো হয়, সিবিআই-এর দেওয়া ডেটার ভিত্তিতে যদি আইনি ভাবে কোনও বাধা না থাকে, তবে সেগুলিও প্রকাশ করা হবে।

তবে চাকরিহারাদের বক্তব্য—এটি শুধুমাত্র একটি মৌখিক আশ্বাস। তালিকা প্রকাশের তারিখ ধার্য হলেও, চাকরি ফেরতের বিষয়ে কোনও স্পষ্ট প্রতিশ্রুতি এখনও পাওয়া যায়নি। তাই তাঁরা গান্ধীমূর্তির পাদদেশে বিক্ষোভ চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তে অনড় রয়েছেন। আন্দোলনকারীদের মধ্যে থাকা এক শিক্ষক বলেন, “স্বস্তি পেতে চাই না, চাই স্থায়ী সমাধান। শুধু তালিকা নয়, চাই চাকরির নিশ্চয়তা।”


দিল্লিমুখী আন্দোলন: যন্তরমন্তরে কর্মসূচি ১৬ এপ্রিল

শুধু কলকাতা নয়, আন্দোলনের আঁচ ছড়িয়ে পড়ছে জাতীয় রাজধানীতেও। আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন, আগামী ১৬ এপ্রিল থেকে তাঁরা দিল্লির যন্তরমন্তরে অবস্থান বিক্ষোভ শুরু করবেন। প্রায় ১৫০ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং শিক্ষাকর্মী এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করবেন। তাঁদের মতে, রাজ্যে ন্যায়বিচার না পেলে কেন্দ্রের দ্বারস্থ হওয়া ছাড়া উপায় নেই।


মুখ্যমন্ত্রী ও বিরোধীদের মুখোমুখি অবস্থান


বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এই ইস্যুতে তীব্র সমালোচনায় মুখর হন। তিনি বলেন, “৭ হাজারকে যোগ্য বলে কার্ড দেওয়া হয়েছে, তাহলে বাকিদের অযোগ্য বলার মানে কী? এই তালিকা কীসের ভিত্তিতে তৈরি?” পাশাপাশি তিনি অভিযোগ করেন, সরকার দুর্নীতিগ্রস্তদের রক্ষা করতে গিয়ে নির্দোষ চাকরিপ্রার্থীদের বলি দিচ্ছে। তিনি ঘোষণা করেন, আগামী ২১ এপ্রিল তিনি নিজে এক লক্ষ অনুগামী নিয়ে নবান্ন অভিযানে যাবেন, পতাকা ছাড়াই।

এদিকে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বৈঠক শেষে জানান, সরকার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে চায় এবং আন্দোলনকারীদের আইনি পরামর্শ মেনে একটু সময় দেওয়া উচিত। তিনি বলেন, “আমরা চাই, শিক্ষকেরা স্কুলে ফিরে যাক। আন্দোলন যদি করতে হয়, সে-ও গণতান্ত্রিক অধিকার। তবে সরকার চায় আলোচনার মাধ্যমে সমাধান।”


আন্দোলনের ভবিষ্যৎ

গান্ধীমূর্তির পাদদেশে আন্দোলনকারীদের মুখে এখন একটাই কথা—“লড়াই থামবে না, যতক্ষণ না ন্যায় মেলে।” তাঁদের দাবি, প্রতিটি পরীক্ষার্থীর ওএমআর শিটের মিরর ইমেজ প্রকাশ হোক, এবং যোগ্য প্রার্থীদের একটি নিরপেক্ষ তালিকা বেরিয়ে আসুক। এ আন্দোলন রাজনৈতিক নয়, এটি সম্মান ও ন্যায়ের দাবিতে এক মানবিক লড়াই।


চলতি সপ্তাহজুড়ে কলকাতা ও দিল্লি—দুই মঞ্চেই নজর থাকবে এই আন্দোলনের দিকে। আপাতত ২১ এপ্রিল সরকার কীভাবে প্রতিশ্রুতি পালন করে, তার দিকেই চেয়ে আছে রাজ্যের হাজার হাজার চাকরিহারা মানুষ। তাদের মনে শুধু একটাই প্রশ্ন—যোগ্য হয়ে যদি চাকরি না মেলে, তবে যোগ্যতার মানে কী?

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

Comments

Ad Code