পাকিস্তানের বেলুনে পিন ফোটাতেই হাওয়া বেরিয়ে গেলো বাংলাদেশের - চিন্ময়কৃষ্ণ দাসের জামিন ঢাকায়
চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের মুক্তি ও বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক
বিশেষ প্রতিবেদন
অবশেষে ৬ মাস পর জামিন পেলেন রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে গ্রেফতার হওয়া সন্ন্যাসী চিন্ময় কৃষ্ণ দাস। বুধবার ঢাকার হাইকোর্টের বিচারপতি আতোয়ার রহমান খান ও আলি রেজার বেঞ্চ এই জামিন মঞ্জুর করেন।
চিন্ময় কৃষ্ণ দাস—এক সময়ের ইসকনের নেতা, এখন বাংলাদেশের সংখ্যালঘু হিন্দু অধিকার রক্ষার অন্যতম মুখ। চট্টগ্রামের পুণ্ডরিক ধামের প্রধান ও ‘বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতন জাগরণ জোট’-এর সক্রিয় সদস্য তিনি। গত ২৫ নভেম্বর ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তাঁকে গ্রেফতার করে বাংলাদেশ পুলিশ।
ভারত-বাংলাদেশ কূটনৈতিক সম্পর্কে প্রভাব
তারপর থেকে বাংলাদেশে উত্তেজনার পারদ চড়তেই থাকে। একদিকে দেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর অত্যাচার, অন্যদিকে চিন্ময়ের বিরুদ্ধে ‘বাংলাদেশের পতাকা অবমাননা’ ও ‘রাষ্ট্রদ্রোহ’-এর অভিযোগ। চট্টগ্রামের সমাবেশে গেরুয়া পতাকা উত্তোলন নিয়ে তৈরি হয় তীব্র বিতর্ক।
কিন্তু এই গ্রেফতারিকে কেন্দ্র করে ভারতের মধ্যেই যে সুনামি উঠবে, তা হয়তো কেউ ভাবেনি। কলকাতা, মুম্বই, পুণে সহ দেশের নানা প্রান্তে সন্ন্যাসী চিন্ময়ের মুক্তির দাবিতে রাস্তায় নামে মানুষ। বিষয়টি সরাসরি ভারত-বাংলাদেশ কূটনৈতিক সম্পর্কে প্রভাব ফেলে।
#WATCH: ঢাকা হাইকোর্টে চিন্ময় প্রভুর জামিন মঞ্জুর।
— TV9 Bangla (@Tv9_Bangla) April 30, 2025
সব খবর: https://t.co/Z9cGg0kjDs
#ChinmoyKrishnaDas | #Bangladesh | #BangladeshUnrest | #MDYunus | #MuhammadYunus pic.twitter.com/2Og1mxoBwd
শেখ হাসিনা সরকারের পতন- হিন্দুদের উপর অত্যাচার
বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর পরিস্থিতি আরও স্পর্শকাতর হয়ে ওঠে। অন্তর্বর্তী সরকার যে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ, তা ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। ভারতের হিন্দু সমাজ এবং সন্ন্যাসী মহলে অসন্তোষ জমতে শুরু করে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী প্রশাসনের তরফে এই ঘটনাকে গুরুত্ব সহকারে দেখা হয়। সূত্র বলছে, পাকিস্তানের উপরে ভারতের সম্ভাব্য ‘সার্জিকাল স্ট্রাইক’-এর প্রস্তুতির মধ্যেই বাংলাদেশের রাজনৈতিক শিবিরে কম্পন শুরু হয়।
তিন দিক থেকে ঘেরা ভারত—পূর্বে যদি বাংলাদেশ হয়, পশ্চিমে পাকিস্তান। দুই প্রতিবেশী দেশেই মৌলবাদ, সংখ্যালঘু নিপীড়ন ও ভারত-বিরোধী মনোভাব দীর্ঘদিন ধরেই ভারতকে চিন্তায় রেখেছে।
বাংলাদেশে এবার আর তোষণ নীতির দিন নেই—মোদি সরকারের বার্তা স্পষ্ট। বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর অত্যাচার এবং চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের মতো এক সন্ন্যাসীর উপর রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে গ্রেফতার ভারতকে কড়া অবস্থান নিতে বাধ্য করে।
এই প্রেক্ষাপটে আলোচনায় উঠে এসেছে নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের ভূমিকা। অভিযোগ, দেশের মধ্যে ধর্মনিরপেক্ষতার মুখোশ পরে হিন্দু-বিরোধী নীতিকে পরোক্ষ মদত দিয়েছেন তিনি। তাঁর মতো ব্যক্তিত্বদের নীরবতা এবং রাজনৈতিক মঞ্চে কার্যত মৌলবাদীদের প্রশ্রয়ই বাংলাদেশের বর্তমান অসহায় পরিণতির অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের জামিনের ফলে আপাতত উত্তেজনা কিছুটা প্রশমিত হলেও, ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক নতুন এক সন্ধিক্ষণে এসে দাঁড়িয়েছে। শেখ হাসিনার পতনের পর ‘নতুন বাংলাদেশ’-এ ভারতের উপস্থিতি কতটা গুরুত্ব পাবে, তা সময়ই বলবে। তবে হিন্দু সন্ন্যাসীর জামিন এক ধরনের প্রতীকী জয়—যা ভবিষ্যতের দক্ষিণ এশীয় রাজনীতির মোড় ঘোরাতে পারে।
চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের মুক্তি শুধু একজন ব্যক্তির নয়, গোটা দক্ষিণ এশিয়ার হিন্দু সম্প্রদায়ের স্বরক্ষার প্রশ্নে এক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। ভারত যদি পাকিস্তানকে কড়া জবাব দিতে পারে, তবে বাংলাদেশও জানে—ভারতের হিন্দু জনমতকে অবজ্ঞা করা আর সহজ নয়।