বড়বাজারের হোটেল বিধ্বংসী অগ্নিকাণ্ডে মৃত ১৪ ! সমালোচনায় শুভেন্দু সহ বিরোধীরা দ্রুত সাহায্য ঘোষণা মোদীর , প্রশ্ন দায় কার ?
মানুষের ভাষা | কলকাতা | ৩০ এপ্রিল ২০২৫
কলকাতার হৃদয়ে বড়বাজারের মেছুয়াবাজার এলাকা। গতকাল সন্ধেয় এই প্রাণচঞ্চল এলাকারই এক হোটেলে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে বিভীষিকার মৃত্যু হল ১৪ জন মানুষের। ধোঁয়ার দমবন্ধ হয়ে ১৩ জনের মৃত্যু, এক ব্যক্তি পড়ে গিয়ে নিহত। মৃতদের অনেকেই ভিনরাজ্যের শ্রমিক বা পর্যটক। এখনও পর্যন্ত রাজ্য সরকারের তরফে নেই নির্দিষ্ট হেল্পলাইন, নেই সহানুভূতির ছোঁয়া। আর এই চরম ব্যর্থতা নিয়েই উঠছে প্রশ্ন— এই মৃত্যুদের দায় কার?
‘ঋতুরাজ’ হোটেল যেন মৃত্যুপুরী!
৬ নম্বর মদনমোহন বর্মণ স্ট্রিটে ‘ঋতুরাজ’ হোটেল। ৪৭টি ঘর, ৮৮ জন আবাসিক, তাঁদের অনেকেই বাইরের রাজ্য থেকে কর্মসূত্রে এসেছেন। একতলায় দোকান, রান্নাঘর— সেখান থেকেই ধোঁয়ার সূত্রপাত।
তীব্র ধোঁয়া, শুধু একটি সিঁড়ি, কোনও ইমার্জেন্সি এক্সিট না থাকায় বহু মানুষ বেরোতেই পারেননি। প্রাণ বাঁচাতে ছাদে ওঠা, কার্নিসে দাঁড়ানো, সেখান থেকেই পড়ে গিয়ে এক জনের মৃত্যু।
একবার যেন আবার ফিরে দেখা গেল স্টিফেন কোর্ট কিংবা আমরি হাসপাতালের ট্র্যাজেডি। ঘটনা ঘটছে, কমিটি হচ্ছে, রিপোর্ট জমা পড়ছে, কিন্তু কার্যকর প্রতিকার শূন্য!
রাজ্য সরকার নির্বিকার, কেন্দ্রের দ্রুত পদক্ষেপই আশার আলো
রাজ্য সরকারের তরফে এখনও পর্যন্ত নেই নির্দিষ্ট নিয়ন্ত্রণ কক্ষ (Control Room) কিংবা হেল্পলাইন নম্বর।
একটা বার্তাও আসেনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তরফে এই বহিরাগত মৃতদের পরিবারের প্রতি। বিপরীতে, মৃতদের অনেকেই এসেছিলেন তামিলনাড়ু, বিহার, ওডিশা থেকে।
শুভেন্দু অধিকারী এই ঘটনার পরে প্রশ্ন তুলেছেন,
Heartfelt gratitude to Hon'ble PM Shri @narendramodi Ji for your compassion and prompt response to the devastating Kolkata fire tragedy. The ex-gratia of Rs. 2 lakh for the bereaved families and Rs. 50,000 for the injured from PMNRF reflects your deep care. Your support offers… https://t.co/npTqHg43nx
— Suvendu Adhikari (@SuvenduWB) April 30, 2025
“যাঁরা মারা গেছেন তাঁদের অধিকাংশই বাইরের রাজ্যের। তাঁদের পরিবারের খোঁজখবর নেওয়ার জন্য কেন হেল্পলাইন চালু হলো না?”
প্রধানমন্ত্রী মোদীর মানবিক দৃষ্টান্ত
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ঘোষণা করেছেন—
মৃতদের পরিবারপিছু ২ লক্ষ
আহতদের ৫০ হাজার টাকা
(প্রধানমন্ত্রী জাতীয় ত্রাণ তহবিল থেকে)
এই স্নেহস্পর্শে কৃতজ্ঞ দেশবাসী। প্রিয়জন হারানো পরিবারগুলির পাশে দাঁড়িয়েছেন তিনি, যা রাজ্য প্রশাসনের অমানবিক নিষ্ক্রিয়তাকে আরও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে।
শুভেন্দু অধিকারী আরও জানিয়েছেন— কলকাতা পুরসভার BJP কাউন্সিলররা ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়েছেন সাহায্যের জন্য।
বারবার প্রশ্ন ওঠে, কিন্তু প্রতিকার হয় না!
২০১০-র স্টিফেন কোর্ট, ২০১১-র আমরি হাসপাতাল, আর এবার ২০২৫-এ বড়বাজারের হোটেল— প্রতিটি ঘটনার পরই ঘোষণা, কমিটি, প্রতিশ্রুতি। কিন্তু বাস্তবে—
- অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা না থাকা
- জানালা বন্ধ করে রাখা
- ফায়ার এক্সিট না থাকা
- একটি মাত্র সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা
- বাইরের আবাসিকদের কোনও তথ্যনথি না রাখা
এই দায় কে নেবে?
বারবার যে প্রশ্ন ওঠে, রাজ্য প্রশাসন বারবার তা এড়িয়ে যায়।
আজ আবার প্রমাণ হল— দুর্ঘটনা এড়ানো যেত। lives could have been saved। একটা হেল্পলাইন, একটা আগুন নিভানোর উপযুক্ত পথ, একটা দরজা খোলা থাকলেই হয়তো এতগুলি প্রাণ বাঁচত।
মানুষের ভাষা এই প্রশ্ন তোলে— মৃত্যুতে রাজনীতি নয়, দরকার দায়িত্বশীলতা। আজ পশ্চিমবঙ্গ সরকার সেই পরীক্ষায় পুরোপুরি ফেল।
0 মন্তব্যসমূহ