জগন্নাথধামে জাঁকজমক, জমায়েত আর জল্পনা, — দিঘায় মমতার মহাউদ্বোধন ও দিলীপের সঙ্গে ‘ধর্ম-দর্শন’ আড্ডা!
অক্ষয়তৃতীয়ার শুভ লগ্নে সমুদ্র শহর দিঘা যেন পরিণত হয়েছিল রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক চাঁদের হাটে। রাজনীতির ঢেউ, ধর্মের ভক্তি আর সাংস্কৃতিক তামাশা একসাথে মিশে তৈরি করল এক অভিনব দৃশ্যপট — দিঘার নতুন জগন্নাথ মন্দিরের শুভ উদ্বোধন।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে দ্বার উন্মোচনই নয়, সস্ত্রীক বিজেপি সাংসদ দিলীপ ঘোষের সঙ্গে জমিয়ে আড্ডা, নিজের লেখা গানে সুরারোপিত অনুষ্ঠান, আর সোনার ঝাঁটার উপহার — সব মিলিয়ে এ যেন ভোটপূর্ব ‘ধর্মীয় কূটনীতি’র নিখুঁত নাট্যবিন্যাস!
মন্দির নয়, যেন নতুন তীর্থ-রাজনীতি
২৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে, ২০ একর জমিতে নির্মিত এই জগন্নাথধাম মন্দিরের পরিচালনার দায়িত্ব গিয়েছে ইসকনের হাতে। অথচ এই মন্দির এখন হয়ে উঠেছে শুধু তীর্থ নয়, বরং রাজনীতির ‘ধর্মীয় বার্তা’র বাহক।
অতীতে যাঁরা রাজ্যে মন্দির রাজনীতির জন্য বিজেপিকে কটাক্ষ করেছেন, সেই মুখ্যমন্ত্রীই আজ নিজ হাতে দ্বার খোলেন। জগন্নাথের আরতিতে অংশ নেন। এবং যেন এক প্রকার বার্তা দেন, ‘হিন্দুত্ব এখন আর একচেটিয়া নয়!’
সোনার ঝাঁটা ও ব্যক্তিগত অনুদান: ধর্মে দান, রাজনীতিতে কৌশলী
মুখ্যমন্ত্রীর ব্যক্তিগত তহবিল থেকে সোনার ঝাঁটার জন্য ৫ লক্ষ ১ টাকা দান — এমন বার্তা নির্বাচনের মুখে স্পষ্ট ইঙ্গিত দেয় যে, মমতার রাজনীতি এখন এক নতুন মোড়ে। ধর্ম আর সংস্কৃতির মিশেলে তৈরি হচ্ছে এক রাজনৈতিক ব্যঞ্জনা, বিরোধী বিজেপি-কে কৌশলী চ্যালেঞ্জ করে।
গান, নাচ, নচিকেতা ও নন্দনযাত্রা
মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রীর লেখা গানে সুর দিয়ে গাইলেন জিৎ, নচিকেতা, শ্রীরাধা। রূপঙ্কর ও ইমনের পর নৃত্য পরিবেশন করল ডোনা গঙ্গোপাধ্যায়ের দল। অতিথি তালিকায় বাংলা বিনোদন জগতের তারকাদের মিছিল। যেন নির্বাচনকে সামনে রেখে 'Soft Power'-এর পূর্ণ মহড়া।
দিলীপ-মমতা আড্ডা: রাজনীতি নাকি রসায়ন?
সবচেয়ে চমকপ্রদ ছিল — মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সস্ত্রীক দিলীপ ঘোষের দীর্ঘ আড্ডা। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ধর্মীয় অনুষ্ঠান হলেও এই সৌজন্য সাক্ষাৎ আদতে রাজনীতির নয়া চাল। আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে ভোট বিভাজন আটকাতে তৃণমূলের পক্ষ থেকে ‘soft signal’ কি তবে বিজেপির একটি অংশের প্রতি?
Ex National Vp of BJP, Shri Dilip Ghosh along with his wife Rinku Mazumdar met CM Mamata Banerjee after offering Puja at the newly inaugurated Jagannath Temple.
— Sourav || সৌরভ (@Sourav_3294) April 30, 2025
If everything goes well, we will see Dilip Ghosh attending the Ratha Yatra festival in Digha this time with CM Mamata. pic.twitter.com/OfT8eYxwIW
বক্তৃতায় বার্তা: "এই মন্দির সকলের"
সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে মমতা বললেন, "এই মন্দির আগামী হাজার বছর ধরে তীর্থস্থান ও পর্যটনস্থল হিসাবে বিস্তার লাভ করবে। এটি সকলের জন্য। তাই রবীন্দ্রনাথের ভাষায় বলছি — ‘সবারে করি আহ্বান।’” এই বক্তব্যে কৌশলে জাতীয়তাবাদ, ধর্মীয় সাম্য এবং বাংলার সাংস্কৃতিক গর্বকে জোর দেওয়া হল।
এই উদ্বোধন নিছক এক ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, এটি ছিল এক রাজনৈতিক মঞ্চ — যার নেপথ্যে রয়েছে একাধিক বার্তা। সাংস্কৃতিক আয়োজন, ধর্মীয় আচার, সোনার দান ও রাজনৈতিক শত্রুকে সৌজন্যে মুড়ে আপন করে তোলার প্রচেষ্টা — মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই কূটনৈতিক চাল বাংলা রাজনীতির রং ও রসদে নতুন মাত্রা যোগ করল।
একদিকে জগন্নাথ, অন্যদিকে ভোটনাথ — দিঘার মন্দির উদ্বোধন যেন এক ‘রাজনৈতিক রথযাত্রা’র সূচনা করল।
আপনার কী মত? মমতার এই পদক্ষেপ কি কৌশলী রাজনীতি, না কি আসলেই ‘সবার জন্য ধর্ম’?