Donald Trump: Operation Sindoor-এ মুখোশ খুলে গেলো আমেরিকার - Apple-কে ভারতে উৎপাদন বন্ধের নির্দেশ দিশেহারা ট্রাম্পের

ভারতে অ্যাপল উৎপাদন কমাতে টিম কুককে ট্রাম্পের চাপ, অপারেশন সিন্দুরের পর মার্কিন অস্থিরতা, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি নিয়েও জটিলতা

MANUSHER BHASHA : NATION FIRST -WE STAND WITH THE NATION 

মানুষের ভাষা , ওয়েব ডেস্ক:

দোহা/নয়াদিল্লি: মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক মন্তব্য ভারত ও আমেরিকার মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্ককে নতুন করে জটিলতার দিকে ঠেলে দিল। কাতারের রাজধানী দোহায় এক সাংবাদিক সম্মেলনে ট্রাম্প জানান, অ্যাপল-এর সিইও টিম কুককে তিনি ভারতে উৎপাদন সীমিত করার নির্দেশ দিয়েছেন। 

ট্রাম্পের এই মন্তব্য এমন এক সময়ে এলো, যখন কিছুদিন আগেই ভারতীয় সেনাবাহিনীর "অপারেশন সিন্দুর" পাকিস্তানের উপর মারাত্মক আঘাত হেনেছে, যার ফলে পাকিস্তানের অর্থনীতি এবং সামরিক পরিকাঠামো ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। এই ঘটনার পর থেকেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অস্বস্তিতে ভুগছে বলে মনে করা হচ্ছে।

ট্রাম্পের দাবি, "আমি টিম কুককে বলেছি, আপনারা ভারতে উৎপাদন করছেন, এটা আমি চাই না। ভারত বিশ্বের অন্যতম সর্বোচ্চ শুল্ক আরোপকারী দেশ, তাই সেখানে পণ্য বিক্রি করা খুব কঠিন।" তিনি আরও বলেন, "ভারত নিজেদের দেখভাল করতে সক্ষম।" ট্রাম্পের এই মন্তব্যের মাধ্যমে স্পষ্টতই বোঝা যাচ্ছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতের বাজারে অ্যাপলের উৎপাদন বৃদ্ধি নিয়ে অসন্তুষ্ট।

Hafte mai 2 baar apni aukat dikha di buddhe ne

"I don’t want you building in India" -Trump to Apple. pic.twitter.com/KGpSBHbYJR

— Hindutva Vigilant (@VigilntHindutva) May 15, 2025

অ্যাপল সাম্প্রতিককালে ভারতে আইফোন, আইপ্যাড, ম্যাকবুক, ইয়ারপড সহ বিভিন্ন পণ্য উৎপাদন করছে। তামিলনাড়ু এবং কর্ণাটকে একাধিক উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপন করেছে তারা। গত অর্থবছরে অ্যাপল ভারতে ২২ বিলিয়ন ডলার মূল্যের আইফোন তৈরি করেছে, যা আগের বছরের তুলনায় ৬০ শতাংশ বেশি। যদি অ্যাপল ভারতে উৎপাদন বন্ধ করে, তাহলে এই পণ্যগুলি বিদেশ থেকে আমদানি করতে হবে, যার ফলে ভারতীয় বাজারে অ্যাপলের পণ্যের দাম বাড়তে পারে।

ট্রাম্পের বক্তব্য অনুযায়ী, বুধবারই তিনি টিম কুকের সঙ্গে কথা বলেছেন। ট্রাম্প অ্যাপল কর্তাকে বলেছেন, "আপনি যদি ভারতের দেখভাল করতে চান, তাহলে সে দেশে জিনিস বানাতে পারেন। কারণ, বিশ্বের সবচেয়ে চড়া হারে শুল্ক নেওয়া দেশগুলির মধ্যে একটি ভারত। তাই ভারতে জিনিসপত্র বিক্রি করা খুব কঠিন।"

ভারতে অ্যাপলের উৎপাদন বন্ধ করার কথা বলার সময়, ট্রাম্প ভারত-মার্কিন দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তির প্রসঙ্গও তুলেছেন। তিনি দাবি করেছেন, ভারত নাকি আমেরিকাকে নিঃশুল্ক বাণিজ্য চুক্তির প্রস্তাব দিয়েছিল। ট্রাম্প বলেন, "ওরা (ভারত) আমাদের আক্ষরিক অর্থেই নিঃশুল্ক বাণিজ্য চুক্তির প্রস্তাব দিয়েছিল। আমি টিমকে বলেছি, আমরা আপনাদের সঙ্গে ভালই ব্যবহার করছি। বছরের পর বছর ধরে আপনারা চিনে যে উৎপাদন কেন্দ্র তৈরি করেছেন, তা আমরা সহ্য করেছি। কিন্তু আপনারা ভারতে যে কারখানা তৈরি করছেন, তাতে আমরা আগ্রহী নই। ভারত নিজেই নিজেদের খেয়াল রাখতে পারে।" তবে, ট্রাম্পের এই মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে ভারত এখনও পর্যন্ত সরকারিভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।

অ্যাপল একটি মার্কিন বহুজাতিক সংস্থা হলেও, তাদের বেশিরভাগ পণ্যই এতদিন ধরে আমেরিকার বাইরে তৈরি হয়ে এসেছে। সিএনবিসি-এর একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, অ্যাপলের ৮০ শতাংশেরও বেশি পণ্য চীনে তৈরি হয়। অ্যাপলের ৮০ শতাংশ আইপ্যাড এবং অর্ধেকেরও বেশি কম্পিউটার চীনে তৈরি হয়।

ভারতীয় বাজারের সম্ভাবনার কথা বিবেচনা করে অ্যাপলও দীর্ঘদিন ধরে ভারতমুখী হয়েছে। সম্প্রতি টিম কুক ঘোষণা করেছিলেন, জুন ত্রৈমাসিকে আমেরিকার বিক্রির জন্য বেশিরভাগ আইফোন ভারতেই তৈরি হবে। এই পরিস্থিতিতে ট্রাম্পের মন্তব্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।

ভারতীয় বাজারে মার্কিন পণ্যের উপর চড়া শুল্কের অভিযোগ এর আগেও তুলেছেন ট্রাম্প। গত ২ এপ্রিল, তিনি মার্কিন বাজারে ভারতীয় পণ্যের উপর ২৬ শতাংশ শুল্ক ঘোষণা করেছিলেন। যদিও এক সপ্তাহের মধ্যেই তিনি চীন ছাড়া বাকি সব দেশের উপর শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত ৯০ দিনের জন্য স্থগিত রাখেন। এই ৯০ দিনের মধ্যে ভারত ও আমেরিকা দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি চূড়ান্ত করতে চাইছে। এই পরিস্থিতিতে ট্রাম্পের মন্তব্য নতুন করে বিতর্ক সৃষ্টি করেছে।

ভারত ও আমেরিকার মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য নিয়ে ইতিমধ্যে বেশ কয়েক দফা আলোচনা হয়েছে। মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধিদল ভারত থেকে ঘুরে গিয়েছে, ভারতীয় প্রতিনিধিদলও আমেরিকায় গিয়েছে। এপ্রিলের শেষে ট্রাম্প বলেছিলেন, "ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য নিয়ে কথাবার্তা দারুণভাবে এগোচ্ছে। আমার ধারণা যে, ভারতের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করতে চলেছি।"

তবে, সাম্প্রতিক ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের আবহে ট্রাম্পের কিছু মন্তব্য বিতর্ক সৃষ্টি করেছিল। ট্রাম্প দাবি করেছিলেন, তিনি ভারত ও পাকিস্তানকে সংঘর্ষ বন্ধ না করলে বাণিজ্য বন্ধ করার হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন। এই কারণেই নাকি তিনি দুই দেশকে সংঘর্ষবিরতিতে রাজি করিয়েছিলেন। তবে, ভারত এই দাবি অস্বীকার করেছে। ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রক স্পষ্ট জানিয়েছে, ৭-১০ মে (ভারত-পাক সংঘর্ষের সময়ে) আমেরিকার সঙ্গে বাণিজ্য নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।

ট্রাম্পের এই মন্তব্যকে মুখোশ খুলে পড়া বলে রাজনৈতিক মহল মনে করছেন।  পাকিস্তানে আমেরিকা সামরিক পরিকাঠামো ছিল, যা অপারেশন সিন্দুরে ব্যাপকভাবে ধ্বংস হয়েছে এবং আমেরিকার চোরাগোপ্তা পাকিস্তানকে মদত দেওয়াটা সারা বিশ্বের কাছে উন্মুক্ত হয়ে গেছে।  তাই দিশাহারা ট্রাম্প ও আমেরিকার প্রশাসনের এখন শ্যাম রাখি না কুল রাখি অবস্থা - এমনই ধারণা সামরিক ও অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞদের অনেকের।

ভারতের বাজার অ্যাপলের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, এবং এখানে উৎপাদন কমালে অ্যাপলের ব্যবসায় বড় ধরণের প্রভাব পড়তে পারে। ট্রাম্পের এই মন্তব্য ভারত-মার্কিন বাণিজ্য সম্পর্কের মধ্যে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে, এবং ভবিষ্যতে এই সম্পর্ক কোন দিকে মোড় নেয়, সেটাই এখন দেখার বিষয়।