'অন্ধকারে বাংলার ভবিষ্যৎ', 'জঙ্গিবাদের আশ্রয়স্থল', 'পুলিশের চূড়ান্ত ব্যর্থতা' - শুভেন্দু অধিকারীর বিস্ফোরক অভিযোগ!
মানুষের ভাষা, নিজস্ব প্রতিনিধি :
পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে এখন চরম উত্তাপ। একদিকে বিধানসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি, অন্যদিকে একের পর এক দুর্নীতি ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির অভিযোগ। এই পরিস্থিতিতে পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী একটি ইউটিউব সাক্ষাৎকারে রাজ্য সরকার এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে একাধিক বিস্ফোরক অভিযোগ এনেছেন। শিক্ষা ব্যবস্থার বেহাল দশা, অনুপ্রবেশ, আইনশৃঙ্খলা, পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা এবং সংখ্যালঘু নির্যাতনের মতো একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে তিনি সরকারের কড়া সমালোচনা করেছেন। তার এই মন্তব্য রাজ্যের রাজনৈতিক মহলে নতুন করে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। ঠিক কি কি বললেন বিরোধী দলনেতা ? ক্ষোভ ? অভিমান ? কিছুটা অসহায় বোধ করছে কি তিনি ? যাইই হোকনা হোক না কেন যে নির্দিষ্ট অভিযোগ গুলি তুললেন , তা একেবারে নিজের ব্র্যান্ড শুভেন্দুর একরোখা ইমেজকে সামনে রেখেই করলেন। দেখে নেওয়া যাক সেই ক্ষোভের আগ্নেয়গিরির লাভা উদগীরণ।
কলেজে ভর্তি বন্ধ , শিক্ষাব্যবস্থায় চরম নৈরাজ্য: লক্ষ লক্ষ ছাত্রছাত্রীর ভবিষ্যৎ অন্ধকারে
শুভেন্দু অধিকারী তার বক্তব্যের শুরুতেই রাজ্যের শিক্ষাব্যবস্থার বেহাল দশা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, "পশ্চিম বাংলার লক্ষ লক্ষ উচ্চ মাধ্যমিক পাস ছাত্র-ছাত্রীদের ভবিষ্যৎ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্য অন্ধকারে।" তার অভিযোগ, ৭ই মে উচ্চ মাধ্যমিকের রেজাল্ট বেরোনোর পরও আজ পর্যন্ত কোনো কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্স্ট ইয়ারে ভর্তির নোটিফিকেশন হয়নি। শুধুমাত্র সাধারণ পঠনপাঠন নয়, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ভোকেশনাল, আইটিআই, কারিগরি শিক্ষা – কোনো ক্ষেত্রেই ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু হয়নি।
ওবিসি সংরক্ষণ বিতর্ক:
শুভেন্দু অধিকারী এই অচলাবস্থার মূল কারণ হিসেবে ওবিসি সংরক্ষণ বিতর্ককে দায়ী করেছেন। তিনি বলেন, "ওবিসি রিজার্ভেশনের জন্য ১১১টা কমিউনিটিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বেআইনিভাবে ওবিসি করেছেন।" তার দাবি, এর মধ্যে ১০৭টা মুসলিম জনগোষ্ঠী, যা ইতিমধ্যেই কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ বাতিল করেছে। হাইকোর্ট স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে যে, ২০১০ সালের পরের সমস্ত ওবিসি সার্টিফিকেট বাতিল। সুপ্রিম কোর্টও এই রায়ের ওপর কোনো স্থগিতাদেশ দেয়নি, ফলে বিষয়টি বিচারাধীন। পরবর্তী শুনানির তারিখ ১৫ই জুলাই সুপ্রিম কোর্টে নির্ধারিত আছে।
এই পরিস্থিতিতে ছাত্র-ছাত্রীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে তিনি উদ্বিগ্ন। তিনি বলেন, "আমাদের কোমলমতি ছাত্রছাত্রী তাদের ভর্তি কি হবে, তাদের ভর্তি কিভাবে হবে?" শুভেন্দু অধিকারীর মতে, একদিকে মুসলিম ভোটব্যাংক ক্ষুব্ধ হবে যদি হাইকোর্টের রায় মেনে চলতে হয়, আর অন্যদিকে ছাত্র-ছাত্রীদের ভবিষ্যৎ নষ্ট হচ্ছে। তিনি অভিযোগ করেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছেন। বিরোধী দলনেতা হিসেবে তিনি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য চিন্তিত এবং অবিলম্বে রাজ্যের শিক্ষা দপ্তর ও উচ্চ শিক্ষা দপ্তরকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ভর্তির বিজ্ঞপ্তি এবং ফর্ম বিতরণ বা অনলাইন প্রক্রিয়া চালু করার দাবি জানিয়েছেন।
অনুপ্রবেশ ও আইনশৃঙ্খলা: মুখ্যমন্ত্রীকে তীব্র আক্রমণ
অনুপ্রবেশ এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে শুভেন্দু অধিকারী মুখ্যমন্ত্রীকে তীব্র আক্রমণ করেছেন। তিনি বলেন, বিরোধী দল হিসেবে বিজেপি দীর্ঘদিন ধরে অনুপ্রবেশ নিয়ে কথা বলছে, কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী বরাবরই বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (BSF)-কে কাঠগড়ায় তুলেছেন। আজ মুখ্যমন্ত্রী নিজেই বলছেন যে পুলিশেরও দায়িত্ব আছে, অর্থাৎ রাজ্যেরও দায় আছে। এই বিষয়ে শুভেন্দু অধিকারী প্রশ্ন তোলেন, "তাহলে এতদিন উনি উল্টো বলে আসছেন, কার সাথে উনি?" তার মতে, মুখ্যমন্ত্রী ভোটের রাজনীতির কথা বলছেন এবং নিজের অবস্থান পরিবর্তন করছেন।
মুখ্যমন্ত্রীর অতীতের মন্তব্য:
শুভেন্দু অধিকারী মুখ্যমন্ত্রীর অতীতের কিছু মন্তব্যের উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, মুখ্যমন্ত্রী আগে বলেছেন যে ভুটান থেকে জল এসে উত্তরবঙ্গে বন্যা হয়, আসাম থেকে লোক এসে সার্ভে করছে ও তথ্য সংগ্রহ করছে, আর বিহার ও ঝাড়খণ্ড থেকে লোক এসে এখানে আইন-শৃঙ্খলার অবনতি করছে। এই মন্তব্যের প্রেক্ষিতে শুভেন্দু অধিকারী কটাক্ষ করে বলেন, "উনি (মমতা) একটা ধোয়া তুলসি পাতা!" তিনি আরও বলেন যে, মুখ্যমন্ত্রী বোঝাতে চেয়েছেন যে, রাজীব কুমার (পুলিশ ডিজি) আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন এবং চিফ সেক্রেটারি-এর মতো উচ্চমানের আমলা ভারতবর্ষে আর নেই। শুভেন্দু অধিকারী অতীতের ডেঙ্গু পরিস্থিতির উদাহরণ টেনে আনেন, যেখানে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন যে বাংলাদেশের মশা বসিরহাট ও বনগাঁয় ঢুকে গেছে।
ভোটার তালিকায় জালিয়াতি ও 'সরষের ভূত':
ভোটার তালিকায় কারচুপি এবং 'সরষের ভূত' প্রসঙ্গে শুভেন্দু অধিকারী তৃণমূল কংগ্রেসকে সরাসরি নিশানা করেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন সরষের মধ্যে ভূত আছে, কিন্তু শুভেন্দু অধিকারী পাল্টা বলেন, "এই সরষের মালিক সরকার, এটা তৃণমূলের সরকার।" তিনি ভবিষ্যদ্বাণী করেন যে, এই মামলা কোথায় যায়, তা সবাই দেখবে। তার দাবি, শুধু ডিস্ট্রিক্ট ম্যানেজার নয়, কাকদ্বীপের এসডিও মধুসূদন মণ্ডল-এর মতো গোটা রাজ্যে ১০০ জনের বেশি বিডিও এবং এসডিও, যারা এআরও (Assistant Electoral Registration Officer) এবং ইআরও (Electoral Registration Officer) হিসেবে কাজ করেছেন, তারা ধরা পড়বেন। তিনি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেন, "আমরা এই মামলাটাকে কতদূর নিয়ে যাই কি করি শুধু দেখতে থাকুন।" অরুণ গোরাইয়ের মতো নাম উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভোটার তালিকা থেকে হিন্দু বাদ দেওয়ার চক্রান্তের এগুলি 'হিমশৈলের চূড়ামাত্র'। এই জন্যই তো ভাইপো (অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়) ৭ লক্ষ ভোটে দু'নম্বরি করে জিতেছিল বলেও তিনি অভিযোগ করেন।
মুর্শিদাবাদ দাঙ্গা: পুলিশি নিষ্ক্রিয়তা, কাউন্সিলর ও বিধায়কের জড়িত থাকার অভিযোগ
মুর্শিদাবাদের সাম্প্রতিক দাঙ্গা নিয়ে কলকাতা হাইকোর্ট নিযুক্ত সিট (SIT)-এর রিপোর্ট প্রসঙ্গে শুভেন্দু অধিকারী বিস্ফোরক মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, সিটের রিপোর্টে পরিষ্কার বলা হয়েছে যে, ঘটনার সময় পুলিশ নিষ্ক্রিয় ছিল, এমনকি তারা আক্রান্তদের কোনো সাহায্যও করেনি। শুভেন্দু অধিকারী মন্তব্য করেন, "লজ্জা থাকলে পুলিশ মন্ত্রীর (মুখ্যমন্ত্রী) পদত্যাগ করা উচিত।" তিনি জোর দিয়ে বলেন, " আমরা যা বলি আজকে হাইকোর্ট নিযুক্ত সিট সেই কথা বলছি।"
তৃণমূল কংগ্রেসের জড়িত থাকার অভিযোগ:
শুভেন্দু অধিকারী সরাসরি অভিযোগ করেন, "পরিষ্কার বলেছে মেহবুব আলম TMCকাউন্সিলর, পরিষ্কার বলেছে এমএলএ দাঙ্গা লাগিয়ে এলাকা ছেড়েছেন। পরিষ্কার তৃণমূল কংগ্রেস স্পন্সরড এবং অর্গানাইজড হিন্দু কিলিং।" তার দাবি, দেশের মধ্যে ১৯৪৭-এর পর প্রথম হিন্দু পলায়ন মানুষ দেখেছে এবং বেছে বেছে হিন্দুদেরকে আক্রান্ত করা হয়েছে, টার্গেট করা হয়েছে। তিনি বলেন, "প্রমাণিত হয়েছে হিন্দু পলায়ন।" শুভেন্দু অধিকারীর মতে, ১৬% হিন্দু থাকে এবং এই সরকার তাদের হিন্দু শূন্য করতে চায়। তিনি বলেন, "তাই এই হিন্দু বিরোধী সরকার এদের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই চলছে।"
তিনি আরও চাঞ্চল্যকর দাবি করেন যে, মুখ্যমন্ত্রী বাগডোগরা যাবে বলে সুধাকর বলে যে পুলিশ কমিশনার আছে, তাকে দিয়ে সিভিল ড্রেসে (জিন্স আর টিশার্ট পড়িয়ে) বিজেপির পতাকা ও ব্যানার খুলিয়েছেন। তিনি নিজে সোমবার গিয়ে এটা দেখে এসেছেন বলেও দাবি করেন। শুভেন্দু অধিকারী বলেন, "আজকে ধ্বজ খুলিয়েছে মমতা ব্যানার্জী এবং তার পুলিশ কমপ্লিটলি হিন্দু বিরোধী।" এই কারণেই তিনি হিন্দুদের প্রতি আহ্বান জানান, "হিন্দু হিন্দু ভাই ভাই হিন্দু যদি বাংলায় বাঁচতে চাও বিভেদ ভুলে এক হও এবং মমতা তার সরকারকে তাড়াও। নইলে হিন্দু শূন্য হয়ে যাবে বাংলায়।"
জঙ্গিদের আশ্রয়স্থল: সীমান্ত সুরক্ষা ও তৃণমূলের ভূমিকা
শুভেন্দু অধিকারী রাজ্যের সীমান্ত সুরক্ষা এবং জঙ্গিদের উপস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশাসনিক সভা থেকে বলছেন যে খেয়াল রাখবেন জঙ্গি যেন না ঢোকে, আসাম থেকে দারুদ থেকে লোক আসছে, ডিটেল নিয়ে যাচ্ছে, কেউ ডিটেল দেবে না। এই মন্তব্যের জবাবে শুভেন্দু অধিকারী প্রশ্ন তোলেন, "এটা কি ? ডিটেল দেবে না মানে জঙ্গিদের প্রটেকশন দিতে চাইছে?"
সাম্প্রতিক কিছু গ্রেফতারির উদাহরণ :
হরিয়হরপাড়া, মুর্শিদাবাদে আসাম এসটিএফ সাতশেখ নামে এক ব্যক্তিকে ধরেছে। শুভেন্দু প্রশ্ন তোলেন, "উনি কি বলতে চাইছেন আসাম এসটিএফের এখানে আসা উচিত হয়নি? তাহলে সাতশেখ থাকতো।"
সাত জাভেদ মুন্সি নামে এক ব্যক্তিকে, যিনি আরডিএ (RDA) বানায় এবং কাশ্মীরের জঙ্গি, তাকে ক্যানিং থেকে কাশ্মীরের এসটিএফ ধরে নিয়ে গেছে। শুভেন্দু অধিকারীর দাবি, সে গোসাবা দিয়ে তৃণমূলের সাহায্যে বাংলাদেশে পালাতে চেয়েছিল।
তিনি আরও বলেন, "পশ্চিমবঙ্গে ৫৪০ কিলোমিটার এলাকায় বেড়া নেই, জমি দেয়নি মমতা ব্যানার্জী তাই শুধু হিন্দু বিরোধী নয়, শুধু চুরি দুর্নীতি নয়, জঙ্গিদের হাত তৈরি হয়েছে এখানে।" তিনি তৃণমূলের নেতাদের জঙ্গিবাদের সঙ্গে যোগ থাকার অভিযোগও তোলেন। তিনি বলেন, "উনি (মমতা) কাকে তাড়াবেন, উনার এমএলএ মনিরুল ইসলাম আরেকটা নিষিদ্ধ সংগঠন বিএফ প্যারেডে হাঁটে। উনি রাজ্যসভায় কাকে পাঠিয়েছিলেন? হাসান আহমেদ ইমরান সিমির লোক। সিমি রাজ্য সিমি হচ্ছে ব্যান অর্গানাইজেশন।" তার অভিযোগ, তৃণমূলের মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লাহ প্রকাশ্যে ইউনূসকে সাপোর্ট করেন এবং বলেন "১৫ মিনিটে কলকাতাকে টাইট করব"। বিধানসভায় তিনি বলেন, "আপনারা দুই আমরা দুই , আমাদের চার।" তিনি আরও বলেন, মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, "আমি সৌভাগ্য যে আমি আমার ইসলাম ধর্মে জন্মেছি। দাওয়াতে বলে দেন, ৫০% লোককে উর্দুতে কথা বলার আহ্বান করেন।" এমনকি পাকিস্তানের ডন পত্রিকার সাংবাদিককে নিয়ে গিয়ে ইকবালপুর মোমিনপুরে বলেন, "ইহা ভি মিনি পাকিস্তান হ্যায়।" এই সমস্ত মন্তব্যগুলিকে শুভেন্দু অধিকারী জঙ্গিবাদ এবং বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তির প্রতি তৃণমূলের পরোক্ষ সমর্থনের ইঙ্গিত বলে দাবি করেন।
পুলিশের ভাবমূর্তি সংকট ও মুখ্যমন্ত্রীর 'ইমেজ বিল্ড আপ' চেষ্টা
পুলিশের ভূমিকা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর আজকের প্রশ্ন তোলা প্রসঙ্গে শুভেন্দু অধিকারী বলেন, এটি কেবল 'ইমেজ বিল্ড আপ'-এর চেষ্টা। তিনি বলেন, "পুলিশের আপনারা লাইভ করে নেবেন, ইমেজ বিল্ড আপ।" তার দাবি, গত এক মাসে সিভিক ভলেন্টিয়ার এবং পুলিশ মিলে ২০ জায়গায় জনগণের হাতে ধরা পড়েছে।
শুভেন্দু অধিকারী সম্প্রতি এক 'বীরাঙ্গনা' মহিলার সাহসী পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করেন, যিনি বরানগর পুলিশকে কার্যত 'নেকেড' করে দিয়েছেন, অর্থাৎ তাদের দুর্নীতিকে প্রকাশ্যে এনেছেন। তিনি বলেন, "এই বীরাঙ্গনা মহিলা যেভাবে বরানগর পুলিশকে কার্যত যেভাবে তার সাহসের পরিচয় দিয়ে নেকেড করে দিয়েছেন মানে তাদের এই যে চর্যবৃত্তিকে ওপেন করে দিয়েছেন।" এই ঘটনাটি লক্ষ লক্ষ মানুষের কাছে পৌঁছেছে বলে শুভেন্দু অধিকারী দাবি করেন। তার মতে, মুখ্যমন্ত্রী এই ভিডিও ক্লিপটি লক্ষ লক্ষ লোকের কাছে পৌঁছেছে বুঝতে পেরেই রাজীব কুমারকে বসিয়ে রেখে পুলিশকে ড্যামেজ করছেন নিজের ইমেজ বিল্ড আপের জন্য। তিনি সরাসরি অভিযোগ করেন, "১৪ বছর পুলিশ মন্ত্রী আর চোরেদের রানীর নাম হচ্ছে মমতা ব্যানার্জী। যে যত চুরি করবে - ভোট চুরি হতে পারে, কয়লা চুরি হতে পারে, গরু পাচার হতে পারে, পাথর চুরি হতে পারে, গাড়ি থেকে তোলা তোলা হতে পারে।"
হলদিয়া থেকে ১১টি মাল বোঝাই ট্রাক ছিনতাইয়ের ঘটনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, "গত এক মাসে ১১টা লোডেড ট্রাক হলদিয়া ছিনতাই হলো, আপনারা এই খবর রাখেন না করেনও না।"
ভোটার তালিকা, আধার কার্ড ও অনুপ্রবেশ: তৃণমূলের বিরুদ্ধে সরাসরি অভিযোগ
ভোটার তালিকা এবং আধার কার্ড জালিয়াতি নিয়ে শুভেন্দু অধিকারী তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে সরাসরি অভিযোগ তোলেন। তিনি বলেন, "আধার কার্ড এপিক লিংক নিয়ে যে মামলা কলকাতা পুলিশ করেছিল, তা ইডি নিয়েছে , আপনারা জানেন, অনেক ধরা পড়েছে।" তার মতে, এই ধরনের ঘটনায় ফেমা অ্যাক্টের আওতায় সমস্ত এজেন্টকে সাফ করে দেওয়া উচিত। তিনি দাবি করেন, "সব এজেন্টের আর এজেন্টের ৯৯ ভাগ বিশেষ শান্তি বাহিনীর লোক ওরা আর নইলে তৃণমূলের লোক, মমতার শান্তির ছেলে সব।"
অনুপ্রবেশ নিয়ে বারবার অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি আবারও মুখ্যমন্ত্রীকে কাঠগড়ায় তোলেন। তিনি বলেন, মুখ্যমন্ত্রী বারবার শুধু বিএসএফকে কাঠগোড়ায় তুলেছেন, কিন্তু আজকে দেখা গেল যে পুলিশেরও দায়িত্ব আছে। শুভেন্দু অধিকারী তার আগের অভিযোগের পুনরাবৃত্তি করে বলেন, "আবার বারে বারে বলছি ইমেজ বিল্ড আপ, প্রত্যেকদিন সিভিক ভলেন্টিয়ার টাকা নিচ্ছে, ধরা পড়ছে, জলপাইগুড়িতেও ধরা পড়েছে।"
কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্ক ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিদেশ সফর
কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্ক এবং মুখ্যমন্ত্রী অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিদেশ সফর নিয়েও শুভেন্দু অধিকারী তীব্র কটাক্ষ করেন। তিনি বলেন, "যাকে হাইকোর্ট সুপ্রিম কোর্ট থেকে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি নিয়ে যেতে হয়, তিনি আর যাই হোক ভারতকে প্রতিনিধিত্ব করতে পারেন না।" শুভেন্দু অধিকারী বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মোদিজির সরকার এবং সংসদীয় ব্যবস্থার সঙ্গে তার তুলনা ঠিক করেন না। তার মতে, নরেন্দ্র মোদি গণতন্ত্রে সিস্টেম মেনটেইন করেন। তিনি উদাহরণ দেন, এখানকার বিরোধী দলনেতার মর্যাদা নেই, কিন্তু রাহুল গান্ধীকে নরেন্দ্র মোদি বিরোধী দলনেতার মর্যাদা দিয়েছেন। কংগ্রেসের যখন লোকসভার জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক সাংসদ ছিল না, তখনও অধীর চৌধুরীকে তিনি বিরোধী দলনেতার মর্যাদা দিয়েছেন। এই প্রসঙ্গে শুভেন্দু অধিকারী বলেন, "এটা হচ্ছে নরেন্দ্র মোদি। ডেমোক্রেসিতে তিনি সিস্টেম মেনটেইন করেন। যেটা বাংলায় হয় না।"
তিনি বাঙালি হিসেবে লজ্জিত বোধ করেন যে, "এমন একজন ভারতকে রিপ্রেজেন্ট করতে যাচ্ছে যাকে পাসপোর্ট ইডির কাছে জমা রাখতে হয়। কোর্ট থেকে অনুমতি নিয়ে বাইরে যেতে হয়। এইরকম একটা টেন্টেড স্টাম্পড চোরকে , যার সম্পত্তি ইডি সিজ করে, অকশন করে নিয়ে যায়।"
তিনি অভিযোগ করেন যে, ভাইপো এবং তার পারিবারিক কোম্পানি, পিসির আনুকূল্যে যেভাবেই হোক প্রতিনিধি দলে ঢুকে পড়েছেন ।
ভোটের বাজনা ও পরিবর্তনের ডাক
শুভেন্দু অধিকারী জোর দিয়ে বলেন যে, সামনেই ভোট এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের বিদায় ঘণ্টা বেজে গেছে। তিনি বলেন, "ভোট সামনে সামনে বর্ষা তারপরে দুর্গা মায়ের পুজো কালীপুজো তারপরে শীত। শীতের পরেই শীতের জামা খুলতে না খুলতেই ভোটের বাজনা।" তিনি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলেন, "গতবারে এই জেলা মমতাকে হারিয়েছে এবারে গোটা বাংলা উনাকে প্রাক্তন করবে। সবাই রেডি নো ভোট টু মমতা নো ভোট মমতা।"
আইএনটিটিইউসির (INTTUC) সভাপতির পরিবর্তন করে কোর কমিটি করা হয়েছে বলে শুভেন্দু অধিকারী বলেন, "কোনো লাভ হবে না, সব চাকর, সব চাকর বাকর।"
শুভেন্দু অধিকারীর এই বিস্ফোরক অভিযোগগুলি পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক অঙ্গনে এক গভীর আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। শিক্ষাব্যবস্থার সংকট থেকে শুরু করে আইনশৃঙ্খলা, দুর্নীতি, অনুপ্রবেশ এবং পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা – প্রতিটি ইস্যুতেই তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনার তির ছুঁড়েছেন। তার দাবিগুলি যদি সত্য হয়, তাহলে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, প্রশাসনিক স্বচ্ছতা এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সুরক্ষা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন উঠে আসে। আগামী বিধানসভা নির্বাচনের আগে এই অভিযোগগুলি শাসক দলের জন্য এক কঠিন চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে এবং ভোটারদের মনে কী প্রভাব ফেলবে, তা সময়ই বলবে।
0 মন্তব্যসমূহ