প্রবীর রায়চৌধুরী
নমস্কার! এই মুহূর্তে আমাদের চারপাশে ঠিক কী ঘটছে? অশিক্ষা, তার সঙ্গে অস্ত্র এবং তারই সঙ্গে যদি অর্থ যোগ হয়, তাহলে তার পরিণতি কী হতে পারে? অনর্থ !!!! এই আলোচনা যত এগোবে, আপনারা বুঝতে পারবেন যে এই অবস্থাগুলো একদিনে তৈরি হয়নি; ধীরে ধীরে দিনের পর দিন ধরে কিন্তু একটি সমাজ ব্যবস্থা তৈরি হয়। এটা এমন না যে হঠাৎ করে কালকে সকালে কোনো নতুন কিছু তৈরি হয়ে গেল। কোথায় আছে রোম একদিনে তৈরী হয়নি।
দায় চাপানোর রাজনীতি এবং শিক্ষার বেহাল দশা
রাজনৈতিক দলগুলো সারাক্ষন একে অপরের ওপর দোষারোপ করতে থাকে। কোনো খারাপ ঘটনা ঘটলে আপনারা দেখতে পাবেন যে টিভি শো’গুলোতে একজন বলে, "আমি এটা করিনি, ও আগে করেছে।" মনে পড়ে যায় আমাদের স্কুলে ছোটবেলায় ক্লাসরুমের কথা—মাস্টার মশাই জিজ্ঞাসা করছেন, "কে এই কাজটা করেছে?" আর একজন বলছে, "স্যার, আমি ভেঙাইনি, ও আগে ভেঙ্গিয়েছে।" আবার ও বলল, "না স্যার, আমি আগে ভেঙাইনি, ও আমার দিকে চোখ কটমট করে তাকিয়েছে।" প্রতিটা টিভি শো দেখি আর হাসি। আপনারাও ভেবে দেখবেন।
প্রথম কথাটা হলো অশিক্ষা। এই মুহূর্তে আমাদের পশ্চিমবঙ্গেই যদি ধরি, যেখানে বাস করছি, সেখানে নানান রকম শিক্ষার দুর্নীতি, শিক্ষার কেলেঙ্কারি—এই সমস্ত খবরের কাগজ ও টিভিতে দেখতে পাচ্ছি। অবশ্যই সেগুলোর তদন্ত চলছে, এবং আদালতেও সেগুলির বিচার প্রক্রিয়া চলছে। কিন্তু একটু ভেবে দেখুন, আমাদেরও যখন শৈশব ছিল, আমাদের বাবাদের যখন শৈশব ছিল, এই পশ্চিমবঙ্গে কত মনীষী জন্মগ্রহণ করেছেন —আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়, রবীন্দ্রনাথ, নজরুল থেকে শুরু করে সত্যেন্দ্রনাথ বসু—তাঁদের শেষ নেই। তাই বলা হতো রত্নগর্ভা বঙ্গভূমি। কিন্তু এতো অনেক আগের কথা , এনাদের কথা যদি বাদ ও দিই, আমাদের শৈশব থেকে আমরা কতটুকু দেখতে পেলাম? কারণ ওই যে বললাম, "ও আগে করেছে, এ বলবে ও আগে করেছে"—এর তো কোনো শেষ হবে না।
এই মুহূর্তটাকেও নিয়ে যদি ভাবি, আমাদের চারপাশের বিভিন্ন ধরনের এই যে সরকারি কাজকর্ম, এই সরকারি কাজকর্মের শিক্ষকদের কাজ অনন্য , তাদের কাজ বাচ্চাদের মনস্তত্ত্ব গঠন করা , বাচ্চাদের শিক্ষার মাধ্যমে ভালো করে বেড়ে ওঠা, সেটা লক্ষ্য করা —এই শিক্ষা ব্যবস্থার জায়গাটাই অন্যান্য কাজকর্মগুলোর সাথে, অন্যান্য প্রকল্পগুলোর সাথে কতটা আন্তরিকভাবে যত্ন নেওয়া হয়েছে? শুধু ক্যাটাগরি করলেই তো হলো না। গরিব ঘরের বাচ্চা আর সচ্ছল ঘরের বাচ্চা, বিষয়টা এটা হতে পারতো। কিন্তু আমাদের সমাজ, আমাদের সংবিধান নাকি বলে, "তোমরা জাতপাত মেনো না।" আবার আমাদের সমাজেই কিন্তু বিভিন্ন ক্যাটাগরি রয়েছে—শিক্ষা থেকে শুরু করে কর্ম পর্যন্ত সবটাই জাতপাতে, আর্থিক সুবিধা, কোটা অর্থাৎ সংরক্ষণ—এই সমস্ত চালু রয়েছে। একদিকে সংবিধানের কথা বলে, আবার সেই... এটা তো সুপ্রিম কোর্টেও হয়েছিল, এই কোটা, সংরক্ষণ ইত্যাদি নিয়ে অনেক মামলা-টামলা হয়েছিল। তাঁদের মতো জ্ঞানী, আমি আপনি নই। কিন্তু যে সমাজটাতে জাতপাত, বর্ণ বৈষম্য এগুলো না থাকার কথা, সেই সমাজটাতেই এই বিন্যাসটা চোখে পড়ে এবং সেই বিন্যাসটা শিক্ষাতেও রয়েছে। নিয়োগ সেই বিন্যাসের মাধ্যমেই হচ্ছে। তাহলে কিছু কিছু জায়গা, যেগুলো সব মানুষ বলে যেমন চিকিৎসা, শিক্ষা, যেখানে মেধাটাই শেষ কথা হওয়া উচিত, সংরক্ষণটা নয়—সেটা নিয়ে আর ভাবা হবে কবে?
শিক্ষাব্যবস্থায় পচন এবং বিচার ব্যবস্থার মন্থরতা
তেমনি শিক্ষার পরিকাঠামো এখনো প্রচুর গ্রামাঞ্চলে, এই ২০২৪-২৫ সালের এই পৃথিবীতে, যেখানে প্রযুক্তিতে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এসে গেছে, যেখানে আমরা আধুনিক প্রযুক্তির উড়ালপুল বানাচ্ছি, রাস্তা বানাচ্ছি, প্রচুর বিভিন্ন রকম উন্নয়ন করছি, যেকোনো সরকার হোক না কেন, সেখানেই কিন্তু প্রত্যন্ত গ্রামগুলোতে বিল্ডিং আছে, বিল্ডিং এর রং আছে, সবকিছু আছে । শুধু পশ্চিমবঙ্গ না, অন্যান্য রাজ্য ধরেই বলছি— সবার আগে কী হওয়া উচিত? কেন এখনো পর্যন্ত আমাদের স্কুলগুলোতে পরিকাঠামোগুলো অত্যাধুনিক নয়? কেন সরকারি স্কুলগুলিতে স্মার্ট ক্লাস এখনো আসেনি? মানে স্কুলগুলোতে এখনো কেন বিভিন্ন ধরনের ভিডিও লেকচার, বিভিন্ন ধরনের অ্যানিমেশনের মাধ্যমে, বিভিন্ন ধরনের আনন্দদায়ক কিছুর মাধ্যমে বাচ্চাদের লেখাপড়া শেখানো হবে না? শিক্ষানীতি নিয়ে বড় বড় বিভিন্ন কমিটি তৈরি হয়, তাতে প্রচুর বড় বড় পুরস্কার পাওয়া মানুষজন থাকেন, তারপর এই সমস্ত হয়। আর পরীক্ষা—একদম ক্লাস ওয়ান থেকে শুরু করে উঁচু ক্লাস পর্যন্ত এবং হালে এই সমস্ত কম্পিটিটিভ পরীক্ষা—সবজায়গায় টিচারদের সেটিং! কল্পনাতীত ব্যাপার, কী সেটিং! সেই টিচারের কোচিংয়ে পড়তে হবে তবে সেই বাচ্চা ভালো নম্বর পাবে। অন্য বাচ্চা খুব মন দিয়ে সেলফ স্টাডি করে যদি পড়ে, সে দেখবে তাকে হেরে যেতে এগোচ্ছে। সে আশা রাখলো, "ঠিক আছে, স্কুলে তো আমাকে টিচাররা একটু পক্ষপাতিত্ব করে আমাকে কম নাম্বার দেন, যতই ভালো লিখি না কেন, অন্তত আমার বোর্ডের পরীক্ষা, তারপরের বোর্ডের পরীক্ষা, তারপর কম্পিটিটিভ পরীক্ষা—এখানে আমাকে কেউ আর আটকে রাখতে পারবে না।" না, তাও হয় না। দাবি তুলছি এখান থেকে, তদন্ত হোক—মাধ্যমিক থেকে শুরু করে উচ্চ মাধ্যমিক থেকে শুরু করে অন্যান্য সমস্ত পরীক্ষাগুলোর ক্ষেত্রে নম্বর কারচুপির তদন্ত হোক। ভাবের ঘরে চুরি করে থাকলে চলবে না। কারণ সেখানেও আজকে কখনোই ভাববেন না যে একটি নির্দিষ্ট এখনকার কোনো সরকার নিয়ে আমি বলছি, বহুদিন ধরে এটাই চলছে। তাহলে সেই জায়গাটাতে দীর্ঘদিন ধরে যে বাচ্চাগুলো বড় হচ্ছে, সে ক্লাসরুম থেকে দুর্নীতি দেখতে দেখতে বড় হচ্ছে। সে আরো কী দেখছে এখনকার দিনে? মাস্টার মশাইরা মোবাইল নিয়ে, মোবাইল গেম নিয়ে ইত্যাদি নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। আমার নিজের চোখে দেখা স্কুল আছে, সেই স্কুলে আমি গিয়ে প্রতিবাদও জানিয়েছি বহুবার। সেখানকার স্থানীয় মানুষজন প্রতিবাদ জানিয়েছেন। মাস্টার মশাই স্কুলে আসেন, মাস্টার মশাই দুটো, আড়াইটে এরকম সময় তার বাড়িতে ফেরার ট্রেন ধরে বেরিয়ে যাবেন, যেখানে স্কুল ছুটি হওয়ার সময় সাড়ে চারটে।সেই মাস্টারমশাই চলে যাওয়ার ফলে কি হয়? অর্ধেক এর বেশি ক্লাস মাস্টারমশাই না থাকার কারণ হয়না। বাচ্চারা খেলে বেড়ায়,পড়াশোনা আর হয়না। মানে ওটা শুধুই যেন একটা চাকরি বা ওটা একটা ব্যবসার ক্ষেত্র, এরকম একটা ব্যাপার—সেবা নয়।
শিক্ষা নিয়ে আমি অনেকটা বলে ফেললাম, এ বলা শেষ হবে না। এরপরের অংশটা কী? ভেবে দেখুন সেই সমাজটাতে সেই বাচ্চাগুলো যখন বড় হচ্ছে, কর্মের জায়গায় যখন কম্পিটিটিভ এক্সামে যাচ্ছে, এই ধরনের প্রশ্ন ফাঁস—আজকে কি একটি নির্দিষ্ট সরকারের হাত থেকে? না, এ আগেও হয়েছে, এখনো হচ্ছে, আগামীতে কী হবে কেউ জানে না। আদালত শুধু তদন্তই করে যাচ্ছে , সেই তদন্তের কোনো শেষ নেই । আদালতকে অনুরোধ করবো, এই মন্থর অবস্থা নিয়ে আমি বারবার এই শো’গুলোতে বলছি, বিচার ব্যবস্থা মন্থর হতে হতে প্রায় স্তব্ধ হয়ে যাওয়ার পর্যায়ে পৌঁছে গেছে।
অস্ত্র ও অর্থ: রাজনীতির হাতে তরুণ প্রজন্ম
যখন এই দুর্নীতি দেখে বড়ো হয়ে ওঠা বাচ্চার হাতে কর্ম থাকছে না, সেই বাচ্চাটি যখন শিক্ষায় শিক্ষিত হলো না, তখন তাদেরই হাতে এই রাজনৈতিক দলগুলি তুলে দিচ্ছে অস্ত্র, এবং এই তরুণ সমাজ কেই তারা ব্যবহার করছে তাদের বিভিন্ন অসাধু উদ্দেশ্য সাধনে। এবং অস্ত্র খুব সহজলভ্য। কেন বলছি? এটা প্রমাণ করা লাগবে না। যেকোনো একটা ভোট-টোট কিছু একটা হোক, চতুর্দিকে বোম ফাটছে, গুলি চলছে। আরে মশাই, অস্ত্রগুলো আসলো কোথা থেকে? সারা বছর তার মানে ওই অস্ত্রগুলো কোথাও না কোথাও থাকে তো? কোথায় থাকে? তাহলে এই অশিক্ষার হাতে আসলো অস্ত্র। আর তার সঙ্গে যদি আসে অফুরন্ত অর্থ? তখন কি হবে? অনর্থ !!! কিন্তু এই অর্থ যোগান দেবে কে? রাজনীতি এবং রাজনৈতিক দল। বিভিন্ন প্রয়োজনে তাদের যখন প্রয়োজন হবে এবং যেকোনো শাসকদলই হোক না কেন, সে একটু তাদেরকে বেশি কাজে লাগাবে। অন্যান্য দলগুলো লাগানোর চেষ্টা করবে। পুলিশকে কাজে লাগাতে? কে পুলিশকে কাজে লাগায় না? যে শাসক হবে সেই পুলিশকে কাজে লাগাবে। তাহলে পুলিশি ব্যবস্থা নিয়ে ভাবার দরকার আছে যে পুলিশি ব্যবস্থা রাজনীতির হাত থেকে নিরপেক্ষ অবস্থা তৈরি হবে কিভাবে? নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ সংস্থা হয়েও নাকি সে প্রভাবিত হয়ে যায়। মানে শুধুমাত্র ভোটার আইডি বা এপিক—এই জায়গাগুলো বলছি না। এরকম অনেক স্বশাসিত সংস্থা আছে দেশে, কিন্তু থেকেও যেন কোনো লাভ নেই। রাজ্য সরকারেও আছে, কেন্দ্রীয় সরকারেও আছে। মানে রাজ্য সরকারের থেকে কাজ করে এরকম, তারাও প্রভাবিত হয়ে যান। স্বয়ং বিচারপতিরা, তাদের সম্পর্কে বিভিন্ন রকমের অভিযোগ উঠে যায়, তার কোনো আওয়াজও আর হয় না। এই আগের কয়েকটা শো’তে আমি বলেছি যে বিচারপতিকে নিয়ে কথা, কুকথা, গালমন্দ সবকিছু চলে, কিন্তু সেগুলোরও কোনো তদন্ত হয় না। আবার শুনেছি যে বিচারপতিরা নাকি বা বিচার ব্যবস্থা এইভাবেও যদি বলি যে সমাজে সংবিধান লঙ্ঘিত হলে, এরকম পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছলে বা ভয়ঙ্কর কোনো অপরাধ হলে তারা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে বিভিন্ন মামলা দায়ের করে সেটা তদন্ত করে তার বিচার করে তার প্রতিকার করতে পারেন। দেখা যায় না, দুঃখের বিষয় দেখা যায় না। মামলার ভারে ভারে এই বিচার ব্যবস্থা মূহ্যমান হয়ে পড়েছে।
সেটিং-এর রমরমা: এক অসুস্থ সমাজ
তাহলে আসলো অর্থ, এই রাজনৈতিক দলদের অঢেল অঢেল অর্থ। এবং সেই অঢেল অঢেল অর্থ দিয়ে এই ধরনের যুবসমাজকে ব্যবহার করা হচ্ছে। এবং সেই যুবসমাজ সেই অর্থ নিয়ে আস্তে আস্তে বেড়ে উঠে আরো বয়স্ক হচ্ছে, আরো বিভিন্ন রকম কাজকর্ম, কর্মক্ষেত্রের বিভিন্ন রকম জায়গা—সেই পরিসরটা তাদের, সেই সাম্রাজ্য তৈরি করছে। এবং ভেবে দেখুন, যদি এরকমটা হয় যে একটি জায়গায় আমাকে কোনো একটা ডকুমেন্ট, আমার নিজের কোনো একটা পেপার তৈরি করতে গেলে আমাকে কী করতে হবে? একটি ফর্ম ফিলাপ করতে হবে, একটি অফিসে যেতে হবে। সেই অফিসে গিয়ে সেই ফর্মটি জমা দেব। সেখানকার নিয়ম অনুযায়ী আমি সেখানে লাইন দিয়ে দাঁড়াবো। তারপরে সেখানে সেটা যা হোক একটা প্রসেস হবে, হয়ে আমার ত্রুটি থাকলে সেটাকে সংশোধন করতে বলবে, অথবা ত্রুটি না থাকলে আমার সেই কাজটা নির্দিষ্ট সময়ে, সেই কাজটা আমি মানে আমার কোনো সার্টিফিকেট হোক, আমার কোনো লাইসেন্স হোক, আমার যা হোক একটা কিছু আমি সেটা হাতে পাবো। ব্যাপারটা সেই জায়গায় নেই।
আজকে এইভাবে যদি... মজা নয় যদিও, কিন্তু ঘটনাটা বাস্তব—হাসপাতালে ভর্তি হতে গেলে সেটিং লাগছে, শ্মশানে প্রিয়জনকে দাহ করতে গেলে সেটিং করতে হচ্ছে! খুবই দুঃখের ব্যাপার, চোখে দেখা এগুলো। যখন পুরো দাহ হয়ে যাবে, তারপরে যখন তাকে অস্থি দেবে, সেখানেও যারা দায়িত্বে থাকবেন সেই দাহকার্যে তারা টাকা চাইবেন, মোটা টাকা। আপনার জামাকাপড় দেখে, পোশাক পরিচ্ছদ, আচার-আচরণ দেখে এক একটা রেট তৈরি হবে। এটা তো ছেড়েই দিলাম। তাহলে এটা কোথায় যাচ্ছে? যদি আপনি দেখেন যে না ঠিক আছে, আপনার হাতেও উপার্জনের পয়সা আছে এবং আপনি দেখছেন যে ঠিক আছে, আমি ৫০০ টাকা দিয়ে দিলে আমার কাজটা ১০০ জনের আগে হয়ে চলে আসবে, সবাই দিচ্ছে সেইভাবে। আবার পাচ্ছেও বিভিন্ন রকম সরকারি ভর্তুকি প্রকল্প, বিভিন্ন রকম ভাবে, কারণ এই মুহূর্তে সরকারি চাকরির মাইনেটা প্রচুর, প্রচুর মাইনে। তাহলে এই একটা অসাম্য তৈরি হয়ে যাচ্ছে। একটা শ্রেণি যারা সৎ উপার্জন করে, নিয়ম মেনে চলার চেষ্টা করছে তারা পেরে উঠছে না। আর একটা শ্রেণি যা খুশি তাই করার শ্রেণীতে পরিণত হয়ে যাচ্ছে এবং সেটা সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে গেছে সমাজে।
গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ এবং প্রতিকারের উপায়
কে চায় বলুন তো নিয়ম মেনে কাজ করতে, যখন খুব সহজে একটু টাকা দিলে যেকোনো কাজ সঙ্গে সঙ্গে হয়ে যায়। একটু মানে যেকোনো কাজ করতে যান, আপনার চেনাশোনা কাউকে লাগবে—সেই ডিপার্টমেন্টে হোক, কোনো রাজনৈতিক দলের হোক, একটা প্রভাবশালী কারোর একটা চেনাশোনা থাকতে হবে। তবে আপনার কাজটা হবে। এইভাবে চললে চলুক না। ওই নেতার কাছে বা নেত্রীর কাছে যেকোনো কারোর কাছে যেতে গেলে কী হচ্ছে? না, আপনার ২০০ টাকা খরচা হচ্ছে, সেখানে গিয়ে ২০০ টাকা দিলে আপনাকে সেই কাজটা নিয়ে আর অফিসেও যেতে হচ্ছে না, কখনো কখনো পার্টি অফিসেই হয়ে যাচ্ছে। তাহলে এইটা যদি খুব সহজে ঘরে বসে সেই লোকটা এসে, "দাদা, এ নাও সার্টিফিকেট, কাজ হয়ে গেছে ।" কিভাবে হলো? সে ছেড়ে দিন। আবার আপনি ধরুন, শুনতে খুব খারাপ লাগবে, আপনার পেপার ডিস্টার্ব আছে, আপনার কাজটা হওয়ার নয়। আপনি দেখছেন, "ঠিক আছে, ৫০০ দিলে, ১০০০ দিলে ওটাই আমার ঠিকঠাক হয়ে চলে আসবে। সব সেটিংটা ঠিক আছে, নেতা ধরা আছে, অফিসার ধরা আছে, নিচের স্টাফ ধরা আছে, যে করবে ধরা আছে, প্রত্যেককে টুকটুক করে দেওয়া হয়ে গেছে, আমার কাজটা হয়ে গেছে।" কে চায় বলুন তো কঠোর আইনি ব্যবস্থা, আইনের শাসন কে চায় প্রয়োগ করতে? কেউ চাইবে না, এভাবে সুন্দর চলছে তো।
তাহলে এর এটাকে আটকানোর উপায়টা কী আছে? যার হাতে অর্থ নেই সে বিচার ব্যবস্থার সম্মুখীন হতে পারবে না, তার সঙ্গে রাজনৈতিক ক্রোধ আছে, তার হাতে অস্ত্রও নেই, সে নিরস্ত্র, সে কথাও বলতে পারবে না, একটু প্রতিবাদও করতে পারবে না। কিন্তু তার আছে শিক্ষা, হয়তো সে শিক্ষা নিয়ে চুপচাপ বসে ভাবতে থাকবে চারপাশটা কী হবে। এই অস্ত্র, এই অশিক্ষা, তার সঙ্গে অস্ত্র আর তার সঙ্গে অর্থ—একদম দুর্দান্ত মিশেল। এই মিশেলের ফল কী হচ্ছে? অন্ধকার, অবিচার, অরাজকতা—এটাই হওয়ার। এটা ছাড়া আপনারা ভেবে বলুন, এই তিনটে যদি এক জায়গায় হয়, একটা সমাজে সমান সমান এগুলো ছাড়া আর কিছু হওয়া সম্ভব কি? আর সেখানে বুদ্ধি খাটিয়ে যে মানুষ কাজ করবে, শিক্ষাকে নিয়ে যে এগোতে চাইবে, সৎ ভাবে যে বাঁচতে চাইবে, তারা তো সংখ্যালঘিষ্ঠ হয়ে যাবে, সংখ্যায় কম হয়ে যাবে। তাহলে গণতন্ত্রের নিয়ম কী? যার সংখ্যা বেশি সেই জিতবে। তাহলে এর উল্টোটা কী করা যায়? এর কি কোনো প্রতিকার আছে? না কি এর তাই চলতে থাকবে?
শিকড় থেকে পরিবর্তন
যেকোনো রাজনৈতিক দলের মূল যে অংশটা—জনগণ। আজকে একে ভোট না দিয়ে হয়তো ওকে ভোট দিল, কিন্তু এই মানসিকতার পরিবর্তন কি কিছু ঘটবে? এই সিস্টেমটার পরিবর্তন কি কিছু ঘটবে? যদি ঘটাতে হয়, শিকড় থেকে ধরা উচিত। তাহলে আগে সেই শিক্ষার জায়গায় যাওয়া উচিত বলে আমার মনে হয়। আপনাদের কী মনে হয়? আপনারাও কমেন্টে জানান। মানুষের ভাষা সকলের মনের কথা বলে, আপনারও মনের কথা আজকের এই এপিসোডে। আমরা সমস্ত জিনিস মানুষের কাছ থেকে শুনে, চারিপাশের সমাজ থেকে শুনে এই এপিসোডগুলোতে তুলে ধরবার চেষ্টা করছি। আপনারাও আপনাদের মতামত তুলে ধরুন। সমাজটা সমৃদ্ধ হোক। দেখা হচ্ছে আপনাদের সঙ্গে আবার সামনের এপিসোডে। এখনকার মতো এই পর্যন্ত। নমস্কার।
0 মন্তব্যসমূহ