ভারতের 'কুশ' প্রতিরক্ষা বর্ম: ইসরায়েলের আয়রন ডোম, আমেরিকার প্যাট্রিয়ট এবং রাশিয়ার S-400-কে টক্কর দেবে!
মানুষের ভাষা , বিশেষ প্রতিবেদন , নিউজ ডেস্ক :
ভারতের নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, যার নাম 'কুশ' ডিফেন্স সিস্টেম, যদি পুরোপুরি তৈরি হয়ে যায়, তাহলে এটি রাশিয়ার S-400-কেও কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেবে। এই ব্যবস্থার আগমনে ভারতের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী হবে। এর ফলে পাকিস্তান ও চীনের মতো দেশগুলো আতঙ্কে থাকবে। 'অপারেশন সিন্দুর'-এ S-400 নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছিল, যা পাকিস্তানের বিমান হামলা ব্যর্থ করে দিয়েছিল। এবার দেশীয় S-400 নামে পরিচিত 'কুশ' ডিফেন্স সিস্টেমের কারণে চীনও যেকোনো ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার আগে দু'বার ভাববে।
কী এই 'কুশ' প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা?
'কুশ' হলো ভারতের একটি প্রকল্প, যাকে এক্সটেন্ডেড রেঞ্জ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম (ERADS) নামেও ডাকা হয়। এটি প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থা (DRDO) দ্বারা তৈরি ভারতের একটি সম্পূর্ণ দেশীয় আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। এর প্রধান উদ্দেশ্য হলো একটি দীর্ঘ পাল্লার ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা তৈরি করা, যা ড্রোন, বিমান এবং ক্ষেপণাস্ত্রের মতো আকাশপথের হুমকি মোকাবিলা করতে পারবে। যদিও ভারতের কাছে রাশিয়া থেকে আনা S-400 ডিফেন্স সিস্টেম রয়েছে, তবে যেভাবে এখন যুদ্ধগুলো হচ্ছে, তাতে যেকোনো দেশকে সব সময় প্রস্তুত থাকতে হবে। অন্য দেশের ওপর নির্ভরতা কমানো জরুরি। এমন পরিস্থিতিতে ভারতের এই দেশীয় S-400 ডিফেন্স সিস্টেম খুবই কার্যকর হতে পারে।
DRDO Set to Conduct First Test of Project Kusha’s M-1 Missile, Advancing India’s Indigenous Air Defense Capabilitieshttps://t.co/RrnFlJ7dLH pic.twitter.com/ZctaPa1sL7
— idrw (@idrwalerts) May 29, 2025
S-400 থেকে কতটা আলাদা 'কুশ'?
কৌশলগত এবং সামরিকভাবে দুর্বল অঞ্চলগুলোকে ব্যাপক আকাশ সুরক্ষা দেওয়ার জন্য তৈরি এই ব্যবস্থা ২৫০ কিলোমিটার দূরে যুদ্ধবিমান আকারের লক্ষ্যবস্তু এবং ৩৫০ কিলোমিটার দূরে বড় বিমানকে ভূপাতিত করতে পারে। একটি গণমাধ্যম রিপোর্টে বলা হয়েছে, এটি নির্ভরযোগ্য আঞ্চলিক আকাশ সুরক্ষায়ও সক্ষম। এতে একবার ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করলে লক্ষ্যবস্তু ধ্বংস করার সম্ভাবনা ৮০ শতাংশের কম নয় এবং একই সময়ে একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করলে ৯০ শতাংশের কম নয়। S-400 দীর্ঘ, মাঝারি এবং স্বল্প পাল্লার হুমকি মোকাবিলা করতে পারে, যখন 'প্রজেক্ট কুশ'-এর লক্ষ্য শুধুমাত্র দীর্ঘ পাল্লার আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন করা।
ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র
'প্রজেক্ট কুশ'-এর মূল ভিত্তি হলো ভারতের নিজস্ব দীর্ঘ পাল্লার ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র (LR-SAM) তৈরি করা, যা রাশিয়ার S-400 ট্রায়াম্ফ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সমতুল্য। ইসরায়েলের প্রধান মহাকাশ ও বিমান সংস্থা ইসরায়েল অ্যারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিজের সঙ্গে যৌথভাবে তৈরি এই 'কুশ' প্রকল্প ২০২২ সালের মে মাসে নিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রিসভা কমিটি দ্বারা অনুমোদিত হয়েছিল। এই মোবাইল LR-SAM সিস্টেমে দীর্ঘ পাল্লার নজরদারি এবং ফায়ার কন্ট্রোল রাডার থাকবে, যার সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের ইন্টারসেপ্টর ক্ষেপণাস্ত্র থাকবে, যা ১৫০ কিমি, ২৫০ কিমি এবং ৩৫০ কিমি দূরত্বে শত্রুর লক্ষ্যবস্তু ধ্বংস করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে।
২০২৯ সালের মধ্যে দেশের সীমান্তে মোতায়েন হবে 'কুশ'
ভারতের 'কুশ' আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ২০২৮-২০২৯ সালের মধ্যে দেশের সীমান্তে মোতায়েন করার পরিকল্পনা রয়েছে। এটি শত্রুর আক্রমণ, যুদ্ধবিমান, ড্রোন, ক্রুজ এবং ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রসহ সব ধরনের আক্রমণ ট্র্যাক এবং ধ্বংস করতে সক্ষম হবে। 'কুশ' মোতায়েনের পর ভারত সেইসব গুরুত্বপূর্ণ দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হবে, যাদের নিজস্ব দীর্ঘ পাল্লার আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে। বর্তমানে ভারতের কাছে নিজস্ব দেশীয় ভেরি-শর্ট রেঞ্জ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম রয়েছে। ভারত ২০১৮ সালে রাশিয়া থেকে S-400 এর চুক্তি করেছিল, এই চুক্তির অধীনে ভারত ৪০ হাজার কোটি টাকা দিয়ে ৫টি S-400 কিনেছিল। এর বেশিরভাগই চীনা সীমান্তে মোতায়েন রয়েছে।
দেশীয় S-400 নিখুঁতভাবে শত্রুকে আঘাত করে
'কুশ' ডিফেন্স সিস্টেমে ডুয়াল-পালস মোটর এবং থ্রাস্ট ভেক্টর কন্ট্রোলের মতো অত্যাধুনিক প্রযুক্তি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এই সিস্টেম উচ্চ নির্ভুলতার সাথে লক্ষ্যবস্তুকে আঘাত করতে পারে, যার ফলে শত্রুকে সহজেই পরাজিত করা যায়। এর আরেকটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো, এই ব্যবস্থা ভারতের বিদ্যমান আকাশ, বারাক-৮ এবং S-400-এর মতো সিস্টেমগুলোর সঙ্গে যুক্ত হয়ে একটি সমন্বিত আকাশ প্রতিরক্ষা নেটওয়ার্ক তৈরি করবে।
৩৫০ কিমি দূর থেকে শত্রুর গতিবিধি চিহ্নিত করবে
ভারতের এই দেশীয় প্রতিরক্ষা বর্ম ৩৫০ কিলোমিটার দূর থেকে শত্রুর কার্যকলাপ সনাক্ত করতে এবং তাদের ধ্বংস করতে সক্ষম হবে, যা ইসরায়েলের আয়রন ডোম-এর চেয়ে উন্নত বলে মনে করা হয়। ইসরায়েলের আয়রন ডোম-এর পাল্লা মাত্র ৭০ কিলোমিটার। এছাড়াও, এই সিস্টেম দীর্ঘ দূরত্বে আকাশপথের হুমকি সনাক্ত করতে এবং ধ্বংস করতে সক্ষম। এটি সম্পূর্ণভাবে ভারতে তৈরি, যা ভারতকে একটি শক্তিশালী এবং আত্মনির্ভরশীল আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দেবে। এটি ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন, স্টিলথ ফাইটার জেট এবং স্মার্ট বোমার মতো বিভিন্ন আকাশপথের হুমকি মোকাবিলা করতে পারে। এর পাশাপাশি, এটি আমেরিকান প্যাট্রিয়ট এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমের (যার পাল্লা ১১০ কিমি) চেয়েও উন্নত হবে।
0 মন্তব্যসমূহ