জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে ভারতের কঠোর পদক্ষেপ, তুরস্কের চেলেবির বিরুদ্ধে আইনি লড়াই
মানুষের ভাষা, ওয়েব ডেস্ক,
ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে পাকিস্তানের প্রতি তুরস্কের স্পষ্ট সমর্থন দেখানোর কারণে দেশজুড়ে যখন তীব্র জনমত তৈরি হয়েছে, তখন ভারত সরকার দৃঢ় পদক্ষেপ নিয়েছে। 'জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে' তুরস্কের বিমানবন্দর পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থা চেলেবির নিরাপত্তা ছাড়পত্র বাতিল করা হয়েছে। এই সিদ্ধান্তের ফলে স্বাভাবিকভাবেই সংস্থাটি ক্ষুব্ধ এবং তারা এর বিরুদ্ধে আইনি পথে হেঁটেছে। চেলেবির দাবি, "অস্পষ্ট" জাতীয় নিরাপত্তা উদ্বেগের উল্লেখ করে কোনো যথাযথ কারণ ছাড়াই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
সংস্থাটি আশঙ্কা প্রকাশ করেছে যে এই সিদ্ধান্তের ফলে ভারতে তাদের ৩,৭৯১ জন কর্মীর জীবিকা বিপন্ন হতে পারে এবং বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। তাদের আরও অভিযোগ, এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে কোম্পানিকে কোনো রকম আগাম নোটিশ দেওয়া হয়নি।
১৬ই মে রয়টার্স কর্তৃক প্রাপ্ত একটি আইনি নথিতে দেখা যায়, চেলেবি এয়ারপোর্ট সার্ভিসেস ইন্ডিয়া দিল্লি হাইকোর্টের কাছে এই সিদ্ধান্ত রদ করার আবেদন জানিয়েছে। তাদের বক্তব্য, শুধুমাত্র জাতীয় নিরাপত্তার অস্পষ্ট অজুহাত দেখিয়ে এমন গুরুত্বপূর্ণ একটি সিদ্ধান্ত নেওয়া আইনত গ্রহণযোগ্য নয়। সংস্থাটির আবেদনে বলা হয়েছে, "জাতীয় নিরাপত্তার নিছক বাগাড়ম্বর, কোনো সত্তা কীভাবে জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি তা বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা না করে আইনত টেকে না।"
এই বিষয়ে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য পাওয়া না গেলেও, মনে করা হচ্ছে সরকার জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্নে কোনো আপস করবে না। আগামী সোমবার এই মামলার শুনানির সম্ভাবনা রয়েছে।
তাদের আবেদনে চেলেবি জানিয়েছে, যদিও তাদের শেয়ারহোল্ডাররা তুরস্কে নিবন্ধিত, তবে এই গ্রুপের "অধিকাংশ চূড়ান্ত নিয়ন্ত্রণ" এমন কোম্পানিগুলির হাতে রয়েছে যাদের তুর্কি কোনো সংযোগ নেই। এই যুক্তির মাধ্যমে তারা সম্ভবত বোঝাতে চেয়েছে যে তুরস্কের সরকারের নীতির জন্য তাদের ভারতীয় ব্যবসার উপর প্রভাব ফেলা উচিত নয়।
তবে, বৃহস্পতিবার চেলেবির ছাড়পত্র বাতিল করার সময় ভারতের জুনিয়র বিমান পরিবহন মন্ত্রী মুরলীধর মোহল স্পষ্ট ভাষায় X (টুইটার)-এ জানিয়েছেন যে সারা ভারত থেকে চেলেবিকে নিষিদ্ধ করার জন্য অসংখ্য অনুরোধ এসেছে। তিনি বলেন, "বিষয়টির গুরুত্ব এবং জাতীয় স্বার্থ রক্ষার আহ্বানকে স্বীকৃতি দিয়ে আমরা এই অনুরোধগুলির গুরুত্ব বিবেচনা করেছি।" মন্ত্রীর এই মন্তব্য থেকে স্পষ্ট, জনগণের আবেগ এবং দেশের নিরাপত্তা রক্ষার তাগিদেই সরকার এই কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে।
অন্যদিকে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন জোটের গুরুত্বপূর্ণ শরিক দল শিবসেনাও এই সপ্তাহে মুম্বাইয়ে চেলেবির বিরুদ্ধে জোরালো বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে এবং শহরের বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে অবিলম্বে তাদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করার দাবি জানিয়েছে। এই ঘটনাও দেশজুড়ে তুরস্কের কার্যকলাপের বিরুদ্ধে ক্রমবর্ধমান ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ।
চেলেবি তাদের আবেদনে জানিয়েছে যে তারা নয়াদিল্লি, কেরালা, বেঙ্গালুরু, হায়দ্রাবাদ এবং গোয়ার গুরুত্বপূর্ণ বিমানবন্দরগুলিতে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং পরিষেবা প্রদান করে। ভারতে কাজ শুরু করার পূর্বে তারা দেশের বিভিন্ন জাতীয় নিরাপত্তা এবং গোয়েন্দা সংস্থা কর্তৃক যথাযথ পটভূমি যাচাই এবং নিরাপত্তা ছাড়পত্র লাভ করেছিল বলেও তারা উল্লেখ করেছে।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দিল্লি বিমানবন্দর তাদের X (টুইটার) হ্যান্ডেলে স্পষ্টভাবে জানিয়েছে যে তারা গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং এবং কার্গো অপারেশনের জন্য "আনুষ্ঠানিকভাবে চেলেবির সাথে তাদের সম্পর্ক শেষ করেছে"। বিমানবন্দরের এই পদক্ষেপ সরকারের সিদ্ধান্তের প্রতি তাদের পূর্ণ সমর্থন জ্ঞাপন করে।
এছাড়াও, রয়টার্সের একটি প্রতিবেদনে শুক্রবার জানানো হয়েছে যে রাষ্ট্রীয় বিমান সংস্থা এয়ার ইন্ডিয়া তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী ইন্ডিগোর তুর্কি এয়ারলাইন্সের সাথে লিজ চুক্তি বন্ধ করার জন্য ভারতীয় কর্মকর্তাদের কাছে অনুরোধ করছে। এর কারণ হিসেবে তারা ব্যবসায়িক প্রভাবের পাশাপাশি ইস্তাম্বুলের পাকিস্তানের প্রতি সমর্থনকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট নিরাপত্তা উদ্বেগের কথা উল্লেখ করেছে।
স্পষ্টতই, ভারত সরকার জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্নে কোনো ঝুঁকি নিতে নারাজ এবং তুরস্কের পক্ষ থেকে পাকিস্তানের প্রতি সমর্থন অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে। চেলেবির আইনি লড়াই কতটা ফলপ্রসূ হবে, তা সময়ই বলবে। তবে এই মুহূর্তে ভারতের অবস্থান অত্যন্ত দৃঢ় এবং দেশের স্বার্থরক্ষায় সরকার বদ্ধপরিকর।
0 মন্তব্যসমূহ