কোভিড-১৯: ফের বাড়ছে উদ্বেগ, সক্রিয় কেস ২৫০ পার, সরকারের বার্তা ও জনস্বাস্থ্যের চ্যালেঞ্জ
মানুষের ভাষা, ওয়েব ডেস্ক :
আবার এশিয়াজুড়ে চোখ রাঙাচ্ছে কোভিড-১৯। হংকং এবং সিঙ্গাপুরে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে, আর তা নিয়ে নতুন করে আশঙ্কা ছড়াচ্ছে দেশের মানুষের মনে। আবার কি তবে ফিরতে চলেছে মাস্ক আর 'দো গজ কি দূরি'র দিন? এই প্রশ্নই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে সব মহলে। ইতিমধ্যেই একাধিক সেলিব্রিটি সহ বহু ভারতীয়র কোভিড আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গিয়েছে, আর তাতেই বাড়ছে দুশ্চিন্তা। হংকং আর সিঙ্গাপুরের সঙ্গে ভারতের নিয়মিত যাতায়াতের ফলে, ভাইরাসের দাপট আবার ভারতে ঢুকে পড়বে না তো, এই উদ্বেগও বাড়ছে।
ভারতে কোভিডের বর্তমান চিত্র: সক্রিয় কেস ও উদ্বেগ
সূত্রের খবর, ভারতে ইতিমধ্যেই সক্রিয় আক্রান্তের সংখ্যা ২৫০ ছাড়িয়েছে। দ্য হিন্দুর রিপোর্ট অনুযায়ী, ১৯ মে, ২০২৫ পর্যন্ত ভারতে সক্রিয় কোভিড-১৯ কেসের সংখ্যা ২৫৭ জন। তবে, কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের সূত্র অনুযায়ী, ভারতে বর্তমানে কোভিড-১৯ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে।
COVID-19 Cases on the Rise in India: 257 Active Nationwide
— TIMES NOW (@TimesNow) May 21, 2025
What we're seeing in India are JN.1 variant cases… COVID has never really gone away. We need to follow simple precautions, says @BagaiDr to @RitangshuB. pic.twitter.com/zoW7BNp1KV
মনে করা হচ্ছে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং নতুন ভাইরাসের মিউটেশন, বিশেষ করে জেএন.১ স্ট্রেন (JN.1) এবং তার উপ-প্রজাতির দাপটেই এই কোভিড আক্রান্তের সংখ্যায় বৃদ্ধি। ১২ মে থেকে ভারতে ১৬৪টি নতুন কেস রেকর্ড করা হয়েছে, ফলে দেশে সক্রিয় কোভিড-১৯ কেসের মোট সংখ্যা ২৫৭-তে দাঁড়িয়েছে।
রাজ্যভিত্তিক পরিস্থিতি:
- কেরল: গত সপ্তাহে ৬৯টি নতুন সংক্রমণ রেকর্ড করা হয়েছে, যা দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ।
- মহারাষ্ট্র: ৪৪টি নতুন কেস সহ দ্বিতীয় স্থানে, বর্তমানে ৫৬টি সক্রিয় কেস রয়েছে।
- তামিলনাড়ু: ৩৪টি নতুন কোভিড কেস পাওয়া গেছে।
- মুম্বাইয়ের দুই মৃত্যু: কোভিড নাকি কোমর্বিডিটি?
মুম্বাইয়ের কিং এডওয়ার্ড মেমোরিয়াল (KEM) হাসপাতাল সম্প্রতি একজন ৫৯ বছর বয়সী ক্যান্সার রোগী এবং কিডনি রোগে আক্রান্ত একজন ১৪ বছর বয়সী মেয়ের মৃত্যুর খবর দিয়েছে। যদিও উভয় রোগীই তাদের মূল রোগের কারণে মারা গেছেন, তবে তাদের কোভিড-১৯ পরীক্ষার ফলাফল ইতিবাচক ছিল বলে জানা গেছে। তবে, পিটিআই (PTI) সূত্র অনুযায়ী, এই মৃত্যুগুলি আনুষ্ঠানিকভাবে কোভিড-১৯-এর কারণে মৃত্যু হিসাবে নথিভুক্ত করা হয়নি।
একটি চাঞ্চল্যকর ঘটনায়, হাসপাতালটি এক মহিলার মৃতদেহ তার পরিবারকে হস্তান্তর করেনি। এনডিটিভি (NDTV) রিপোর্টে বলা হয়েছে, "প্রোটোকল অনুযায়ী, মহিলার শেষকৃত্য ভোইওয়াড়া শ্মশানে মাত্র দুইজন পরিবারের সদস্যের উপস্থিতিতে সম্পন্ন হয়েছে।" বৃহন্মুম্বাই পৌর কর্পোরেশন (BMC) স্পষ্ট করে বলেছে যে উভয় রোগীই গুরুতর কোমর্বিডিটির কারণে মারা গেছেন, কোভিড-১৯-এর জন্য নয়। এটি কোভিডজনিত মৃত্যুর সংজ্ঞা এবং এর সঙ্গে সম্পর্কিত প্রোটোকল নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে।
ভারত সরকারের উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক ও আশ্বাস
হংকং এবং সিঙ্গাপুরে কোভিড-১৯ কেসের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার বিষয়টি ভারতের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে, সোমবার (১৯ মে, ২০২৫) একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে জাতীয় রোগ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র (NCDC), জরুরী চিকিৎসা ত্রাণ বিভাগ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সেল, ভারতীয় চিকিৎসা গবেষণা পরিষদ (ICMR) এবং বিভিন্ন কেন্দ্রীয় সরকারি হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ দল যোগ দেয়।
সরকারি সূত্রে খবর, আলোচনায় বলা হয়েছে যে ভারতের কোভিড-১৯ পরিস্থিতি স্থিতিশীল। ১৯ মে পর্যন্ত, সক্রিয় কেসের সংখ্যা মাত্র ২৫৭, যা দেশের বিশাল জনসংখ্যার প্রেক্ষিতে উল্লেখযোগ্যভাবে কম সংখ্যা। প্রায় সমস্ত কেসের ক্ষেত্রেই কোভিডের প্রভাব ন্যূনতম এবং হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন হচ্ছে না। একজন কর্মকর্তা পিটিআইকে জানিয়েছেন, "বৈঠকে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া গেছে যে, ভারতের বর্তমান কোভিড-১৯ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।"
এশিয়ার অন্যান্য দেশে পরিস্থিতি: সতর্কতা জারি
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে কোভিড কেসের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও, পরিস্থিতি এখনো নিয়ন্ত্রণে আছে বলে মনে করা হচ্ছে। হংকং এবং সিঙ্গাপুরের কর্তৃপক্ষ সতর্ক থাকতে অনুরোধ করেছে, তবে তারা এও বলেছে যে এই ধরনের কোভিড তরঙ্গ প্রত্যাশিত ছিল।
সিঙ্গাপুর: সিঙ্গাপুরের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং সংক্রামক রোগ সংস্থা জানিয়েছে যে, ২৭ এপ্রিল থেকে ৩ মে সপ্তাহের জন্য কোভিড-১৯ কেসের আনুমানিক সংখ্যা ১৪,২০০ ছিল, যা আগের সপ্তাহের ১১,১০০ থেকে বেড়েছে। সিঙ্গাপুরের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ওং ইয়ে কুং ফেসবুকে পোস্ট করে জানিয়েছেন যে, সারা বছর ধরেই পর্যায়ক্রমিক কোভিড-১৯ তরঙ্গ "প্রত্যাশিত"।
হংকং: হংকংয়ের সেন্টার ফর হেলথ প্রোটেকশনের কন্ট্রোলার, এডউইন সুই, একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলেছেন, "স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসার পর, হংকং প্রতি ছয় থেকে নয় মাস অন্তর কোভিড-১৯-এর সক্রিয় সময়কালের সম্মুখীন হয়েছে। আমরা আশা করি যে, আগামী কয়েক সপ্তাহ অন্তত কোভিড-১৯-এর কার্যকলাপ উচ্চতর স্তরে থাকবে।"
দক্ষিণ কোরিয়া: এদিকে, দক্ষিণ কোরিয়ার রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ সংস্থা গত মাসে তাদের মৌসুমি কোভিড টিকাদান পর্ব দুই মাস বাড়িয়ে জুন মাসের শেষ পর্যন্ত করেছে। তারা ৬৫ বছর বা তার বেশি বয়সী ব্যক্তিদের ফাইজার ইনকর্পোরেটেড (Pfizer Inc.) এবং বায়োএনটেক এসই (BioNTech SE)-এর জেএন.১ (JN.1) শট দিয়ে টিকা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে।
ভবিষ্যৎ কি মাস্ক এবং সামাজিক দূরত্ব?
যদিও ভারত সরকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে বলে আশ্বস্ত করছে, তবে বিশ্বজুড়ে, বিশেষত এশিয়ার অন্যান্য দেশে কোভিডের নতুন ঢেউ নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। জেএন.১ (JN.1) স্ট্রেন এবং এর উপ-প্রজাতিগুলোর ক্ষমতা এবং সংক্রমণের হার সম্পর্কে আরও গবেষণা চলছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, যদি এই ঢেউ আরও বড় আকার ধারণ করে, তাহলে মাস্ক পরা এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার মতো পুরনো অভ্যাসগুলো আবার ফিরে আসতে পারে। এর পাশাপাশি, টিকা কর্মসূচির গুরুত্ব এবং নিয়মিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার প্রয়োজনীয়তাও নতুন করে সামনে আসছে।
জনসাধারণকে সতর্ক থাকার এবং স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের নির্দেশিকা মেনে চলার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। আপনার স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সচেতন থাকুন।
0 মন্তব্যসমূহ