Hot Posts

6/recent/ticker-posts

Ad Code

Recent in Home

মুর্শিদাবাদ সহিংসতা: হাইকোর্টের কমিটি রিপোর্টে ভয়াবহ চিত্র, পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা ও কাউন্সিলরের জড়িত থাকার অভিযোগ

মুর্শিদাবাদ সহিংসতা: হাইকোর্টের কমিটি রিপোর্টে ভয়াবহ চিত্র, পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা ও কাউন্সিলরের জড়িত থাকার অভিযোগ


Bongo Bhumi , Desk Report

মানুষের ভাষা, ওয়েব ডেস্ক :(সূত্র- এএনআই)


পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ সহিংসতার ঘটনা নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের গঠিত তথ্যানুসন্ধান কমিটি তাদের রিপোর্ট জমা দিয়েছে। এই রিপোর্টে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য, যা স্থানীয় প্রশাসন এবং আইনের শাসনের প্রতি গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে। বেতবোনা গ্রামের ১১৩টি ঘর ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং স্থানীয় পুলিশের সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয়তা ও অনুপস্থিতি ছিল বলে রিপোর্টে স্পষ্ট উল্লেখ করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, একজন স্থানীয় কাউন্সিলরের প্রত্যক্ষ মদদে এই হামলাগুলি পরিচালিত হয়েছিল বলেও রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে। এই ঘটনা রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।


বেতবোনা গ্রামের ভয়াবহ পরিস্থিতি:

কমিটির রিপোর্টে বলা হয়েছে, বেতবোনা গ্রামের মোট ১১৩টি বাড়ি এই সহিংসতায় মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের অধিকাংশই মালদহে আশ্রয় নিয়েছিলেন, কিন্তু পুলিশ প্রশাসন তাদের জোর করে বেতবোনা গ্রামে ফিরিয়ে এনেছে। এই পদক্ষেপটি স্থানীয়দের মধ্যে আরও আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে, কারণ তারা এখনও হুমকির মুখে রয়েছে।


পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা ও স্থানীয় নেতার মদদ:

রিপোর্টের সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য হলো, "হামলাগুলি একজন স্থানীয় কাউন্সিলরের নির্দেশে পরিচালিত হয়েছিল" এবং স্থানীয় পুলিশ ছিল সম্পূর্ণ "নিষ্ক্রিয় ও অনুপস্থিত"। রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, "পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ কোনো সাড়া দেয়নি। বেতবোনা গ্রামের বাসিন্দারা শুক্রবার বিকেল ৪টা এবং শনিবার বিকেল ৪টায় ফোন করলেও পুলিশ ফোন তোলেনি।" এটি স্থানীয় প্রশাসনের চরম ব্যর্থতা এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থার দায়িত্বহীনতাকে তুলে ধরে।


হামলার নৃশংসতা ও পরিকল্পনা:

রিপোর্ট অনুযায়ী, হামলাকারীরা অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে কাজ করেছে। একটি ঘটনায়, "একজন ব্যক্তি গ্রামে ফিরে এসে দেখেন কোন বাড়িগুলোতে হামলা হয়নি, তারপর দুষ্কৃতকারীরা এসে সেই বাড়িগুলোতে আগুন ধরিয়ে দেয়।" এতে বোঝা যায় যে, হামলাকারীরা বেছে বেছে এবং ঠান্ডা মাথায় কাজ করেছে।


আরও ভয়াবহ তথ্য হলো, "দুষ্কৃতকারীরা পানির সংযোগ কেটে দিয়েছিল, যাতে আগুন নেভানো না যায়।" এর থেকে স্পষ্ট যে, তাদের উদ্দেশ্য ছিল ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ ঘটানো এবং কোনোভাবেই আগুন নেভাতে না দেওয়া। রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, "দুষ্কৃতকারীরা কেরোসিন তেল দিয়ে বাড়ির সমস্ত পোশাক পুড়িয়ে দিয়েছে এবং বাড়ির মহিলাদের গায়ে কোনো পোশাক ছিল না।" এটি হামলার নৃশংসতা এবং মানবিকতার চরম লঙ্ঘন তুলে ধরে।


নিরন্তর হুমকি ও মানুষের চাওয়া:

তথ্যানুসন্ধান কমিটি জানিয়েছে, "গ্রামবাসীরা দুষ্কৃতকারীদের দ্বারা ক্রমাগত হুমকির শিকার হচ্ছে, তারা ভাবছে বিএসএফ কতদিন তাদের রক্ষা করবে।" এই মন্তব্যে স্থানীয় মানুষের মধ্যে বিদ্যমান ভীতি এবং নিরাপত্তাহীনতার চিত্র ফুটে উঠেছে। গ্রামের মানুষ তাদের সুরক্ষার জন্য একটি স্থায়ী বিএসএফ ক্যাম্প এবং কেন্দ্রীয় সশস্ত্র বাহিনীর উপস্থিতি দাবি করছে। এটি স্থানীয় পুলিশের ওপর তাদের আস্থাহীনতারই প্রতিফলন।


ধুলিয়ান এলাকার ক্ষতি ও হত্যাকাণ্ড:

রিপোর্টে ধুলিয়ান এলাকার ব্যাপক ক্ষতির চিত্রও তুলে ধরা হয়েছে। মুদি দোকান, হার্ডওয়্যার দোকান এবং বৈদ্যুতিক ও বস্ত্রের দোকানগুলো ধ্বংস হয়ে গেছে। এমনকি, অনেক গুরুত্বপূর্ণ নথিও পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। রিপোর্ট অনুযায়ী, "মূল হামলা" ১১ এপ্রিল দুপুর আড়াইটার পর ধুলিয়ান শহরে ঘটেছিল। ওয়ার্ড নং ১২-তে অবস্থিত একটি শপিং মল সম্পূর্ণভাবে লুট করা হয়েছে এবং বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।


রিপোর্টে ৭৪ বছর বয়সী হরগোবিন্দ দাস এবং তার ৪০ বছর বয়সী পুত্র চন্দন দাসের হত্যাকাণ্ডের বিষয়েও বিস্তারিত তথ্য দেওয়া হয়েছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, "তারা বাড়ির প্রধান দরজা ভেঙে তার পুত্র (চন্দন দাস) এবং স্বামীকে (হরগোবিন্দ দাস) নিয়ে যায় এবং তাদের পিঠের ওপর কুঠার দিয়ে আঘাত করে। একজন লোক তাদের মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সেখানে অপেক্ষা করছিল।" এই বর্ণনা হত্যাকাণ্ডের ভয়াবহতা এবং দুষ্কৃতকারীদের নির্লজ্জতাকে স্পষ্ট করে তোলে।


কমিটির সদস্যবৃন্দ:

কলকাতা হাইকোর্ট কর্তৃক গঠিত এই তথ্যানুসন্ধান কমিটির সদস্যরা ছিলেন – ন্যাশনাল হিউম্যান রাইটস কমিশনের রেজিস্ট্রার (আইন) যোগিন্দর সিং, পশ্চিমবঙ্গ লিগ্যাল সার্ভিসেস অথরিটির সদস্য সচিব সত্য অর্ণব ঘোষাল এবং পশ্চিমবঙ্গ জুডিশিয়াল সার্ভিসের রেজিস্ট্রার সৌগত চক্রবর্তী।


কলকাতা হাইকোর্টের কমিটির এই রিপোর্ট মুর্শিদাবাদ সহিংসতার এক ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরেছে, যা স্থানীয় প্রশাসন, বিশেষত পুলিশের ভূমিকাকে বড় প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে। স্থানীয় কাউন্সিলরের জড়িত থাকার অভিযোগ এবং পুলিশের চরম নিষ্ক্রিয়তা ইঙ্গিত দেয় যে, এই ধরনের সহিংসতা হয়তো কোনো রাজনৈতিক মদদেই পরিচালিত হয়েছে। নিরীহ মানুষের ওপর এমন বর্বরোচিত হামলা এবং তাদের মৌলিক অধিকারের লঙ্ঘনের ঘটনা দেশের গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের জন্য এক মারাত্মক বিপদ। এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা অপরিহার্য, যাতে ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে। একই সাথে, স্থানীয় প্রশাসনের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা এবং মানুষের নিরাপত্তা ও আস্থা ফিরিয়ে আনা জরুরি।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

Comments

Ad Code