Hot Posts

6/recent/ticker-posts

Ad Code

Recent in Home

Russia Ukraine Ceasefire: পুতিনের কাছে হার মেনে যুদ্ধবিরতি আহ্বান থেকে পিছু হঠলো ট্রাম্প | দীর্ঘ যুদ্ধের কালো ছায়া ইউক্রেনীয়দের সামনে |


মানুষের ভাষা নিউজ ডেস্ক 

২০ মে ২০২৫, কিয়েভ: রাশিয়ার বোমাবর্ষণের মাঝে থাকা ইউক্রেনের সুমি শহরের বাসিন্দা ওলেনা বয়কো যখন শুনলেন যে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউক্রেন যুদ্ধ থামানোর চেষ্টা থেকে পিছু হটছেন, তখন তিনি হতাশ হলেও অবাক হননি ।

“ট্রাম্পের কূটনৈতিক প্রচেষ্টা এক ধরনের নাটক , ট্রেঞ্চ বা বোমা আশ্রয়কেন্দ্রের বাস্তবতার সঙ্গে যার কোনো সম্পর্ক নেই ,” বললেন বয়কো ।

তিনি জানান, তাঁর পরিবার এই যুদ্ধে বিশাল ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। “আমার মেয়েরা এবং আমি যুদ্ধে হারিয়েছি সবচেয়ে প্রিয় দুটি জিনিস — আমার স্বামী, ওদের পিতা, এবং আমার শৈশবের বাড়ি, যা পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে।”


যুদ্ধ থামানোর প্রতিশ্রুতি নিয়ে দায়িত্ব নেওয়া প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সম্প্রতি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ফোনে কথা বলার পর যুদ্ধবিরতি নিয়ে নিজের অবস্থান থেকে পিছিয়ে আসেন।

এই ফোনালাপ ইউক্রেনবাসীদের কাছে ছিল হতাশাজনক এক সংকেত — মার্কিন চাপ ছাড়া মস্কো কখনই গতি পরিবর্তন করবে না, তা তারা বহুদিন ধরেই বুঝে আসছিল। ফলে যুদ্ধ থেমে যাওয়ার আশার বদলে বাস্তবতা হলো, এই রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ অব্যাহত থাকবে।

ফোনালাপে ট্রাম্প রাশিয়ার কাছে কোনো ছাড় আদায় করেননি বা কোনো প্রতিশ্রুতি পাননি বলেই মনে করা হচ্ছে। তিনি আগের মতো তাত্ক্ষণিক ও নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতির আহ্বান দেননি। বরং বলেন, এই সংঘাতের সমাধান শুধু ইউক্রেন ও রাশিয়ার মাধ্যমেই সম্ভব।


এই অবস্থান ইউক্রেনে হতাশা সৃষ্টি করলেও অনেকেই এটিকে মার্কিন কূটনৈতিক হার বলেও দেখছেন। কারণ অতীতে ট্রাম্প ইউক্রেনকে রাশিয়ার দখল করা অঞ্চল ছেড়ে দিতে বলেছিলেন, বিনিময়ে দিয়েছিলেন অস্পষ্ট নিরাপত্তা আশ্বাস।


ডনিপ্রোর ওষুধ বিক্রেতা লিলিয়া জামব্রভস্কা বলেন, “আমরা ক্লান্ত, কিন্তু লড়ে যেতে হবে। যারা পাশে থাকবে তাদের সাহায্য নিতে হবে, আর বাকি আমাদের নিজেরাই করতে হবে। আমেরিকা আর রাশিয়া এক রক্তাক্ত খেলা খেলছে — কিন্তু আমাদের ভবিষ্যৎ আমাদের নিজের।”

এই মন্তব্য আসে এমন এক সকালে, যখন রাশিয়ার রাতভর হামলা ইউক্রেনজুড়ে অব্যাহত ছিল।


“আমি আর কোনো প্রত্যাশা রাখি না,” বললেন কিয়েভের বাসিন্দা ওক্সানা পাভলেনকো। “আশা থেকে যায়, কিন্তু নির্ভর করতে হবে নিজেদের ওপরই।”

ইস্তাম্বুলে রাশিয়া-ইউক্রেন সরাসরি আলোচনার পরেই ট্রাম্প-পুতিন ফোনালাপ হয়। ওই আলোচনায় রাশিয়া তার কঠোর অবস্থানে অনড় থাকে — ইউক্রেনকে তাদের দখল করা অঞ্চল থেকে পুরোপুরি সরে যেতে হবে বলে জানায়। যদিও একটি বড় ধরনের যুদ্ধবন্দি বিনিময়ে সম্মতি হয়, তবুও যুদ্ধবিরতি হয়নি।


যদিও ইউক্রেন চায় যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার ওপর চাপ বাড়াক, কিন্তু তারা ওয়াশিংটনের সঙ্গে সম্পর্ক ভাঙতে চায় না। প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ট্রাম্পকে একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির প্রস্তাব দিয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন, জানিয়েছেন উপ অর্থমন্ত্রী তারা কাচকা।


অন্যদিকে, ফ্রন্ট লাইনে থাকা ইউক্রেনীয় সেনারা জানান, এই আলোচনা ছিল কেবলমাত্র ধোঁয়াশা সৃষ্টির একটি কৌশল।

লেফটেন্যান্ট পাভলো ভেলিচকো বললেন, “যুদ্ধক্ষেত্রে পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে। আলোচনার আড়ালে তারা সর্বদিক থেকে হামলা চালাচ্ছে।”

৫৯তম ব্রিগেডের ড্রোন পাইলট দেনিস বলেন, “এই আলোচনায় আশার কিছুই দেখিনি। ফ্রন্টলাইনে ওরা সব শক্তি দিয়ে হামলা চালাচ্ছে।”

কিয়েভে বসবাসরত ২৮ বছর বয়সী যুদ্ধপ্রসূত ওলেক্সান্দ্র পালিই বলেন, “আমেরিকার অনেক কর্মকর্তা যুদ্ধের বাস্তবতা বোঝেন না। ট্রাম্প ইতিহাস গড়ার সুযোগ হারাচ্ছেন — রাশিয়ার হুমকি চিরতরে শেষ করার সুযোগ।”

তবে তিনি বলেন, রাশিয়ার হুমকি বা মার্কিন অনাগ্রহ তাঁকে ভয় পাইয়ে না। ইউরোপীয় দেশগুলির সামরিক সহায়তা বেড়েছে এবং ইউক্রেন এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি সজ্জিত ও আত্মনির্ভরশীল।


“ট্রাম্প থাকুক বা না থাকুক, যুদ্ধ একদিন শেষ হবেই,” বললেন পালিই। “প্রশ্ন হলো, তার আগে আর কতজনকে মরতে হবে ?”




একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

Comments

Ad Code