মানুষের ভাষা ওয়েবডেস্ক
ভারতের মহাকাশ অভিযানের ইতিহাসে আরও এক গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়ের সংযোজন হতে চলেছে। আসন্ন অ্যাক্সিয়ম মিশন-৪ (Ax-4)-এর মাধ্যমে ভারতীয় বায়ুসেনার গ্রুপ ক্যাপ্টেন শুভাংশু শুক্লা আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের (ISS) উদ্দেশ্যে যাত্রা করবেন, যা ভারতীয় মহাকাশ গবেষণার ক্ষেত্রে এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত।
এই মিশনটি আগামী ১০ জুন, ভারতীয় সময় সন্ধ্যা ৫:৫২টায় (১৭:৫২ IST), মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা NASA-এর কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে SpaceX-এর Falcon 9 রকেটে Crew Dragon ক্যাপসুলে উৎক্ষেপিত হবে। শুভাংশু শুক্লা হবেন আইএসএস সফরকারী প্রথম ভারতীয় এবং কৃতিত্বের দিক থেকে এটি ভারতের মহাকাশ ইতিহাসে দ্বিতীয় মানব মহাকাশযাত্রা—১৯৮৪ সালে রাকেশ শর্মার পর দীর্ঘ ৪১ বছর পর আবার এক ভারতীয় মহাকাশে পা রাখবেন।
Ax-4 মিশনে শুভাংশু শুক্লা ছাড়াও রয়েছেন প্রাক্তন NASA নভোচারী পেগি হুইটসন (মিশন কমান্ডার), পোল্যান্ডের স্লাভোস উজনানস্কি-উইসনিয়েভস্কি এবং হাঙ্গেরির টিবোর কাপু। এই তিনজনই নিজ নিজ দেশের জন্য দীর্ঘকাল পরে মহাকাশে ফিরছেন, এবং তাঁদের মধ্যে শুভাংশু শুক্লা একমাত্র যিনি "পাইলট" হিসাবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দায়িত্ব পালন করবেন। উৎক্ষেপণ, ডকিং, মহাকাশ স্টেশনে অবস্থান এবং পৃথিবীতে প্রত্যাবর্তন—সব ক্ষেত্রেই শুভাংশুর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
কে এই শুভাংশু শুক্লা ?
৩৯ বছর বয়সী গ্রুপ ক্যাপ্টেন শুভাংশু শুক্লা উত্তরপ্রদেশের লখনউ শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ২০০৬ সালে বায়ুসেনায় যোগ দেন এবং এখন পর্যন্ত ২,০০০ ঘণ্টার বেশি ফ্লাইং অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। মিগ, সুখোই, জাগুয়ার, ডর্নিয়ারসহ একাধিক যুদ্ধবিমান চালিয়েছেন।
প্রাক-মহাকাশ সাংবাদিক সম্মেলনে শুভাংশু আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, “আমি শুধু যন্ত্রপাতি নয়, একশো কোটির বেশি ভারতবাসীর স্বপ্ন ও আশা নিয়ে মহাকাশে যাচ্ছি। আমাদের মিশনের সফলতার জন্য আমি সকল ভারতীয়র প্রার্থনা কামনা করি।”
ISRO-এর নতুন কৌশল ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
এই মিশনের মাধ্যমে ISRO ভবিষ্যতের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ অভিজ্ঞতা অর্জন করবে। ISRO এই যাত্রার জন্য প্রায় ৫০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে এবং মনে করা হচ্ছে, শুভাংশুর অভিজ্ঞতা ভারতের প্রথম মানব মহাকাশ অভিযান গগনযান (২০২৭)-এর জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
ISRO-র চেয়ারম্যান ভি নারায়ণন বলেন, “এই মিশনের মাধ্যমে যে অভিজ্ঞতা আমরা অর্জন করব, তা ভবিষ্যতের মহাকাশ গবেষণায় অপরিসীম উপকারে আসবে।”
ISRO ইতিমধ্যেই ঘোষণা করেছে, এই সফরের সময় শুভাংশু ISS থেকে ভারতীয় ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক করবেন, যার মাধ্যমে মহাকাশ বিজ্ঞানের প্রতি তরুণ প্রজন্মের আগ্রহ বাড়বে।
Ax-4 মিশনে মোট ৬০টি বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা হবে, যার মধ্যে ৭টি ভারত থেকে এসেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—
- ছয় প্রজাতির ফসলের বীজ মহাকাশে পাঠানো হবে এবং সেগুলোর উপর মাইক্রোগ্র্যাভিটির প্রভাব বিশ্লেষণ করা হবে।
- তিন ধরনের মাইক্রোঅ্যালগির বৃদ্ধি পরীক্ষা, যা ভবিষ্যতে খাদ্য, জ্বালানি ও অক্সিজেন উৎপাদনে সহায়ক হতে পারে।
- Tardigrade নামক অতি ক্ষুদ্র প্রাণীর মহাকাশে বেঁচে থাকার সামর্থ্য ও প্রজনন প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ।
- মহাকাশে পেশী ক্ষয় এবং মানসিক স্বাস্থ্যের উপর স্ক্রিন ব্যবহারের প্রভাব বিশ্লেষণ।
এই মিশন ভারতের জন্য কেবল একটি মহাকাশ অভিযান নয়, এটি একটি জাতীয় গর্বের মুহূর্ত। শুভাংশু শুক্লা যেন নতুন প্রজন্মের সামনে এক জীবন্ত অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছেন। রাকেশ শর্মার সেই ঐতিহাসিক উক্তি ছিল—"সারে জাহাঁ সে আচ্ছা।" আজ শুভাংশু যেন সেটাই বাস্তবে রূপ দিচ্ছেন, ভবিষ্যতের ভারতকে মহাকাশ জয়ের নতুন পথে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন।
0 মন্তব্যসমূহ