Hot Posts

6/recent/ticker-posts

Ad Code

Recent in Home

Covid-19: করোনা বাড়ছে তীব্র গতিতে - সামাজিক দূরত্ব সহ হাফডজন কেন্দ্রীয় নির্দেশিকা জারী , আজ সারা দেশে মক ড্রিল

কোভিড-১৯ সংক্রমণ বৃদ্ধি: কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের জরুরি নির্দেশিকা , হাসপাতালে মক ড্রিল 



ভারত জুড়ে কোভিড-১৯ সংক্রমণের হার আবারও বৃদ্ধি পাওয়ায় কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারগুলি সতর্কাবস্থায় রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে, জনসাধারণের সুরক্ষা এবং সম্ভাব্য নতুন ঢেউ মোকাবিলায় প্রস্তুতি জোরদার করতে একাধিক জরুরি নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে।

কেন্দ্রীয় সরকারের দেশব্যাপী মক ড্রিল এবং হাসপাতালের প্রস্তুতি

সক্রিয় কোভিড-১৯ কেসের সংখ্যা ৪,০০০ ছাড়িয়ে যাওয়ার পর কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক দেশের হাসপাতালগুলির সার্বিক প্রস্তুতি যাচাই করতে আজ দেশব্যাপী একটি মক ড্রিল পরিচালনা করছে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক রাজ্যগুলির হাসপাতালগুলির প্রস্তুতি পরীক্ষা করবে। এই মহড়ার মূল উদ্দেশ্য হল অক্সিজেন সরবরাহ, প্রয়োজনীয় ঔষধের প্রাপ্যতা এবং ভেন্টিলেটরের মতো জীবনদায়ী সরঞ্জামের ব্যবস্থা খতিয়ে দেখা, যাতে ভবিষ্যতে সংক্রমণের যেকোনো ঢেউ সফলভাবে মোকাবিলা করা যায়। ডিরেক্টর জেনারেল অফ হেলথ সার্ভিসেস ড. সুনিটা শর্মার সঙ্গে একাধিক বৈঠকের পরেই এই মক ড্রিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, ২রা জুন একটি প্রাথমিক মহড়াও অনুষ্ঠিত হয়েছিল, যেখানে তরল মেডিকেল অক্সিজেন ট্যাঙ্ক, প্রেসার সুইং অ্যাডসর্পশন প্ল্যান্ট এবং মেডিকেল গ্যাস পাইপলাইন সিস্টেমের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য পরিকাঠামো মূল্যায়ন করা হয়েছিল। দেশজুড়ে মোট ১,৬২১টি সক্রিয় কোভিড-১৯ কেস রয়েছে। এর ৯০% এর বেশি কেস ছয়টি রাজ্যে কেন্দ্রীভূত: কেরালা, মহারাষ্ট্র, দিল্লি, গুজরাট, তামিলনাড়ু এবং কর্ণাটক। এখনও পর্যন্ত ভারতে সাতটি কোভিড-সম্পর্কিত মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা হয়েছে।


মহারাষ্ট্রে কোভিড-১৯ পরিস্থিতির পর্যালোচনা ও স্বাস্থ্য বিভাগের সতর্কতা

গত কয়েক সপ্তাহে মহারাষ্ট্রে কোভিড-১৯ আক্রান্তের সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। মে মাস থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত মোট ৮৭৩ জন রোগী শনাক্ত হয়েছেন, যার মধ্যে ৪৮৩ জনই মুম্বাইয়ের বাসিন্দা, এবং এর মধ্যে ৪৭৭টি কেস শুধুমাত্র মে মাসেই ধরা পড়েছে। ২রা জুন, রাজ্য জুড়ে ৫৯টি নতুন কোভিড-১৯ কেস রেকর্ড করা হয়েছে, যার মধ্যে মুম্বাইয়ে ২০টি, থানেতে ৪টি এবং পুনেতে ১৭টি। বর্তমানে রাজ্যে সক্রিয় রোগীর সংখ্যা ৪৯৪।

এই ক্রমবর্ধমান সংখ্যার পরিপ্রেক্ষিতে, মহারাষ্ট্রের স্বাস্থ্য বিভাগের দুই সচিব, নিপুন বিনায়ক এবং বীরেন্দ্র সিং, সমস্ত পৌর কমিশনার, জেলা কালেক্টর এবং জেলা পরিষদগুলির প্রধান নির্বাহীদের কাছে একটি জরুরি নির্দেশিকা জারি করেছেন। এই নির্দেশিকায় কোভিড-১৯ মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি, যেমন আইসোলেশন বেড, মেডিকেল অক্সিজেন, পিপিই কিট, প্রয়োজনীয় ঔষধ এবং চিকিৎসার সুবিধার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রাখার উপর জোর দেওয়া হয়েছে।

চিঠিতে জানানো হয়েছে যে বর্তমানে প্রচলিত Omicron ভ্যারিয়েন্টগুলি (JN1, XFG এবং LF 7.9) সাধারণত হালকা অসুস্থতা সৃষ্টি করে (যেমন জ্বর, কাশি, গলা ব্যথা), যা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নিজে থেকেই সেরে যায়। তবুও, সতর্কতা হিসেবে কেন্দ্রীয় সরকারের কোভিড-১৯ নির্দেশিকা কঠোরভাবে অনুসরণ করা আবশ্যক। স্থানীয় প্রশাসনকে পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করতে এবং সমস্ত তথ্য সংশ্লিষ্ট প্ল্যাটফর্মে নিয়মিত নথিভুক্ত করতে বলা হয়েছে।

অন্যান্য রাজ্যগুলির পরিস্থিতি

বর্তমানে, ভারতে কোভিড-১৯ এর সক্রিয় কেসগুলি প্রধানত কয়েকটি রাজ্যে কেন্দ্রীভূত রয়েছে। কেরালা এবং মহারাষ্ট্রের পাশাপাশি দিল্লি, গুজরাট, তামিলনাড়ু এবং কর্ণাটকেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সক্রিয় কেস রয়েছে। যদিও পশ্চিমবঙ্গ সহ অন্যান্য অনেক রাজ্যে তুলনামূলকভাবে কম কেস রিপোর্ট করা হচ্ছে, তবে এই রাজ্যগুলিও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। উদাহরণস্বরূপ, উত্তরাখণ্ড সরকার কোভিড নির্দেশিকা জারি করেছে এবং জেলা ম্যাজিস্ট্রেটদের হাসপাতালগুলিতে অক্সিজেনের পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করতে নির্দেশ দিয়েছে। সামগ্রিকভাবে, কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যগুলিকে পরিস্থিতির উপর নিবিড় নজর রাখতে এবং প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য পরিকাঠামো প্রস্তুত রাখতে উৎসাহিত করছে।

সরকারের জরুরি নির্দেশিকা এবং জনসাধারণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ

ভারত সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রক  এবং রাজ্য স্বাস্থ্য বিভাগগুলি জনসাধারণকে কোভিড-১৯ থেকে সুরক্ষিত থাকতে নিম্নলিখিত গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ এবং নির্দেশিকাগুলি মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছে:

সামাজিক দূরত্ব ও জনসমাগম পরিহার:

  • বাজার, মেডিকেল স্টোর, হাসপাতাল এবং অন্যান্য জনবহুল স্থানে কমপক্ষে ১ মিটার (প্রায় ৩ ফুট) শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখুন ।
  • অপ্রয়োজনীয় সামাজিক জমায়েত যেমন পার্টি বা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত থাকুন ।
  • বাড়িতে অনাবশ্যক সামাজিক জমায়েত এড়িয়ে চলুন ।
  • অন্যের বাড়িতে যাওয়া বা আপনার বাড়িতে অতিথি আসতে দেওয়া থেকে বিরত থাকুন ।
  • সবসময় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখুন ।
  • ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা ও স্বাস্থ্যবিধি:
  • হ্যান্ড হাইজিন (নিয়মিত হাত ধোয়া), রেসপিরেটরি হাইজিন (শ্বাস-প্রশ্বাসের পরিচ্ছন্নতা) এবং কাফ ইটিকেট (কাশি বা হাঁচির সময় মুখ ও নাক ঢাকা) মেনে চলুন।
  • জনসাধারণের স্থানে হাঁচি বা কাশি দেওয়া এড়িয়ে চলুন।
  • শারীরিক অভিবাদন, যেমন করমর্দন বা আলিঙ্গন করা, এড়িয়ে চলুন ।

ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠীর জন্য বিশেষ সতর্কতা:

প্রবীণ নাগরিক এবং যাদের ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ বা শ্বাসকষ্টের মতো কো-মরবিডিটি (অন্যান্য অসুস্থতা) রয়েছে, তাদের বিশেষত খারাপ বায়ুচলাচলযুক্ত বা ভিড় স্থান এড়িয়ে চলতে অথবা এমন স্থানে মাস্ক ব্যবহার করতে বলা হয়েছে।

লক্ষণ দেখা দিলে করণীয়:

যদি আপনার জ্বর, কাশি বা শ্বাসকষ্টের মতো উপসর্গ দেখা দেয়, তবে তাৎক্ষণিকভাবে যেকোনো ধরনের জনসম্পর্ক এড়িয়ে চলুন এবং অবিলম্বে হেল্পলাইন নম্বরে যোগাযোগ করুন । তীব্র শ্বাসযন্ত্রের সমস্যায় ভোগা রোগীদের নিজেদের স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ করতে এবং শ্বাসকষ্ট বা বুকে ব্যথার মতো উপসর্গ দেখা দিলে অবিলম্বে নিকটস্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্রে রিপোর্ট করতে বলা হয়েছে।

হাসপাতালের প্রস্তুতি নিশ্চিতকরণ:

স্থানীয় প্রশাসনকে জেলা ও উপ-জেলা পর্যায়ের হাসপাতাল, পৌর/পৌরসভা হাসপাতাল এবং অন্যান্য সকল স্বাস্থ্য পরিষেবা কেন্দ্রের প্রস্তুতি পর্যালোচনা করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ডায়াগনস্টিকস, প্রয়োজনীয় ঔষধপত্র, পিপিই, আইসোলেশন বেড, মেডিকেল অক্সিজেন, আইসিইউ এবং ভেন্টিলেটর বেডের পর্যাপ্ত উপলব্ধতার উপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে।

পিএসএ প্ল্যান্টগুলির কার্যকারিতা এবং সামগ্রিক অক্সিজেন প্রস্তুতি নিশ্চিত করতে নিয়মিত মক ড্রিল পরিচালনার কথা বলা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবিলম্বে একটি অ্যাকশন টেকেন রিপোর্ট (ATR) জমা দিতেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ভ্রমণ এবং আতঙ্ক এড়িয়ে চলুন:

নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস বা ঔষধপত্র কেনার জন্য ঘন ঘন বাজারে যাওয়া এড়িয়ে চলুন ।

ধৈর্য ও শান্ত থাকুন । "আতঙ্কিত হবেন না, ভিড় করবেন না, অতিরিক্ত মজুত করবেন না" - এই নীতি মেনে চলুন ।


কোভিড-১৯ এর যেকোনো সম্ভাব্য নতুন ঢেউ মোকাবিলায় সরকার এবং স্বাস্থ্য বিভাগ উভয়েই সর্বোচ্চ স্তরে প্রস্তুত রয়েছে। জনসাধারণের সক্রিয় সহযোগিতা এবং সরকারের জারি করা সকল নির্দেশিকা কঠোরভাবে মেনে চলা এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অত্যন্ত জরুরি। কোভিড-১৯ সম্পর্কিত যেকোনো তথ্যের জন্য, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রক, ভারত সরকারের 24×7 কন্ট্রোল রুম নম্বর ১০৭৫ (টোল ফ্রি) অথবা ০১১-২৩৯৭৮০৪৬ এ যোগাযোগ করতে পারেন । ইমেল করা যেতে পারে ncov2019@gov.in অথবা ncov2019@gmail.com ঠিকানায় । "একসাথে আমরা কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে এই লড়াই জিতব।" 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

Comments

Ad Code