ট্রাম্পের নতুন নির্দেশ: ১২ দেশ থেকে আমেরিকায় প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা, ৭ দেশের নাগরিকদের ওপর আংশিক কড়াকড়ি
মানুষের ভাষা , ওয়েব ডেস্ক (সূত্র-এএনআই):
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি একটি নতুন আদেশে স্বাক্ষর করেছেন। এই আদেশ অনুযায়ী, ১২টি নির্দিষ্ট দেশ থেকে আসা ব্যক্তিদের আমেরিকায় প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, জাতীয় নিরাপত্তা এবং জন সুরক্ষার ঝুঁকির কথা মাথায় রেখে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
যে ১২টি দেশ থেকে প্রবেশ নিষিদ্ধ:
আফগানিস্তান
মিয়ানমার (বার্মা)
চাদ
কঙ্গো প্রজাতন্ত্র
নিরক্ষীয় গিনি
ইরিত্রিয়া
হাইতি
ইরান
লিবিয়া
সোমালিয়া
সুদান
ইয়েমেন
৭টি দেশের নাগরিকদের ওপর আংশিক নিষেধাজ্ঞা:
এছাড়া, আরও সাতটি দেশের নাগরিকদের আমেরিকায় প্রবেশ আংশিকভাবে সীমাবদ্ধ করা হয়েছে। এই দেশগুলো হলো:
বুরুন্ডি
কিউবা
লাওস
সিয়েরা লিওন
টোগো
তুর্কমেনিস্তান
ভেনিজুয়েলা
হোয়াইট হাউস স্পষ্ট করে জানিয়েছে যে, এই নিষেধাজ্ঞাগুলো অভিবাসী (immigrants) এবং অ-অভিবাসী (nonimmigrants) উভয় ধরনের প্রবেশকারীর জন্যই প্রযোজ্য।
ট্রাম্পের স্বাক্ষর করা এই আদেশে বলা হয়েছে, তার প্রথম শাসনামলেও তিনি বিদেশিদের আমেরিকায় প্রবেশে কড়াকড়ি এনেছিলেন, যা সফলভাবে জাতীয় সুরক্ষার হুমকিগুলোকে সীমান্ত থেকে দূরে রাখতে সাহায্য করেছিল এবং সুপ্রিম কোর্টও এটিকে সমর্থন করেছিল। তিনি মনে করেন, আমেরিকার নাগরিকদের সন্ত্রাসবাদী হামলা, জাতীয় নিরাপত্তার হুমকি, ঘৃণ্য মতাদর্শ ছড়ানো বা অভিবাসন আইনকে খারাপ উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা বিদেশিদের হাত থেকে রক্ষা করা জরুরি।
ট্রাম্প জোর দিয়ে বলেছেন যে, ভিসা দেওয়ার প্রক্রিয়াতে যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক থাকতে হবে। এটি নিশ্চিত করতে হবে যে, যারা আমেরিকায় প্রবেশের অনুমতি পাচ্ছেন, তারা যেন আমেরিকানদের বা দেশের স্বার্থের ক্ষতি করার কোনো উদ্দেশ্য না রাখেন। তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, আমেরিকায় প্রবেশ করা বা ইতিমধ্যেই বসবাসকারী বিদেশিরা যেন এখানকার নাগরিক, সংস্কৃতি, সরকার, প্রতিষ্ঠান বা মূল নীতিগুলির প্রতি কোনো শত্রুতা না পোষণ করেন, এবং তারা যেন কোনো নির্দিষ্ট বিদেশি সন্ত্রাসবাদী বা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ কারো পক্ষ না নেন বা সমর্থন না করেন।
নিষেধাজ্ঞার পেছনের কারণ:
JUST IN: President Trump releases video statement following his decision to ban entry into the United States from 12 countries.
— Alex Jones (@RealAlexJones) June 5, 2025
I SAY DEPORT THEM ALL!!
The 12 countries with full travel restrictions are: Afghanistan, Myanmar, Chad, the Republic of the Congo, Equatorial Guinea,… pic.twitter.com/KtMtyGhSb0
ট্রাম্প তার আদেশে উল্লেখ করেছেন যে, অভিবাসী ভিসা নিয়ে যারা প্রবেশ করেন এবং যারা অ-অভিবাসী ভিসা নিয়ে প্রবেশ করেন, তাদের ঝুঁকির মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। অভিবাসীরা আমেরিকায় বৈধ স্থায়ী বাসিন্দা হন এবং তাদের অধিকার অ-অভিবাসীদের চেয়ে বেশি হয়। জাতীয় নিরাপত্তার উদ্বেগ দেখা দিলেও তাদের সরিয়ে দেওয়া কঠিন হতে পারে। এর ফলে ভুল সিদ্ধান্তের ঝুঁকি বা খরচ বেড়ে যায়। যদিও অভিবাসীদের যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া সাধারণত অ-অভিবাসীদের চেয়ে কঠোর হয়, তবে যদি কোনো দেশ থেকে কেউ আসে সেই দেশের পরিচয় ব্যবস্থাপনা বা তথ্য আদান-প্রদানের নীতি দুর্বল হয়, তাহলে এই যাচাই-বাছাই কম নির্ভরযোগ্য হতে পারে।
ট্রাম্প জোর দিয়েছেন যে, এই নিষেধাজ্ঞাগুলো জরুরি, কারণ মার্কিন সরকারের কাছে এমন বিদেশি নাগরিকদের সম্পর্কে পর্যাপ্ত তথ্য নেই, যাদের দ্বারা দেশের ঝুঁকির মাত্রা সঠিকভাবে নির্ণয় করা যায় না। তিনি আরও বলেন যে, এই নিষেধাজ্ঞা বিদেশি সরকারগুলির সহযোগিতা আদায়, অভিবাসন আইন প্রয়োগ এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতি, জাতীয় নিরাপত্তা ও সন্ত্রাস দমন লক্ষ্য পূরণের জন্য প্রয়োজনীয়।
বিশেষভাবে উল্লিখিত দেশগুলির কারণ:
আদেশে ১২টি দেশের ওপর সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা এবং ৭টি দেশের ওপর আংশিক নিষেধাজ্ঞার কারণও ব্যাখ্যা করা হয়েছে:
আফগানিস্তান: তালেবানদের নিয়ন্ত্রণে থাকায় আফগানিস্তানে পাসপোর্ট বা নাগরিক নথি জারির জন্য কোনো সক্ষম বা সহযোগী কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ নেই। সেখানে সঠিক যাচাই-বাছাই ব্যবস্থাও অনুপস্থিত।
মিয়ানমার (বার্মা): অতিরিক্ত থাকার (overstay) প্রতিবেদনের ভিত্তিতে মিয়ানমারের নাগরিকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। রিপোর্ট অনুযায়ী, বার্মার বি১/বি২ ভিসাধারীদের ২৭.০৭ শতাংশ এবং এফ, এম, ও জে ভিসাধারীদের ৪২.১৭ শতাংশ অতিরিক্ত সময় আমেরিকায় থেকেছেন। এছাড়া, মিয়ানমার অতীতে তাদের বিতাড়নযোগ্য নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সহযোগিতা করেনি।
এই নতুন নির্দেশটি মার্কিন অভিবাসন নীতিতে একটি বড় পরিবর্তন আনছে এবং এর প্রভাব আন্তর্জাতিক মহলে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।
0 মন্তব্যসমূহ