মানুষের ভাষা ওয়েবডেস্ক
ভারতের গর্ব, দেশের ইঞ্জিনিয়ারিং দক্ষতার প্রতীক এবং ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ উদ্যোগের অমোঘ নিদর্শন—বিশ্বের সর্বোচ্চ রেল সেতু চেনাব সেতু আজ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর হাত ধরে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন হলো। জম্মু-কাশ্মীরের কঠিন ভূপ্রকৃতি চিরকাল যেভাবে দেশকে বিভক্ত করে রেখেছিল, এই প্রকল্প সেই বিভাজনকেই জয় করে দিল ভারতীয় প্রযুক্তির উপর নির্ভর করে।
চেনাব নদীর উপরে নির্মিত ১৩১৫ মিটার দীর্ঘ এই সেতুর উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৩৫৯ মিটার, যা প্যারিসের আইফেল টাওয়ারের থেকেও বেশি। এই সেতু শুধু ভৌগোলিক বাধা অতিক্রম করেনি, এটি ভারতীয়দের আত্মবিশ্বাস, দক্ষতা এবং আত্মনির্ভরতার দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে।
প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেন, “চেনাব সেতু এবং ইউএসবিআরএল প্রকল্প কেবলমাত্র একটি রেল সংযোগ নয়, এটি হল ‘কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী’ পর্যন্ত হৃদয়ের বন্ধনের প্রতীক। এটা ভারতীয় ইঞ্জিনিয়ারদের অসাধারণ দক্ষতা ও সাহসিকতার ফল।”
এই প্রকল্পের মাধ্যমে উধমপুর-শ্রীনগর-বারামুলা রেল লিঙ্ক (USBRL) এখন বাস্তব, যা একসময় কেবল স্বপ্ন ছিল। ৩৬টি সুড়ঙ্গ ও ৯৪৩টি সেতু অতিক্রম করে এই ২৭২ কিমি দীর্ঘ লাইন আজ জম্মু-কাশ্মীরকে মূল ভারতের সঙ্গে স্থায়ীভাবে যুক্ত করল। এবার থেকে কাশ্মীর উপত্যকা দিয়ে রেলপথে পণ্য ও যাত্রী পরিবহন সম্ভব হবে—যেটা আগে সম্ভব ছিল কেবল খাড়া পাহাড়ি রাস্তায় বা বিমানপথে।
উল্লেখযোগ্যভাবে, এই প্রকল্পের উদ্বোধনের সময় মোদীজি কড়া নিরাপত্তার মধ্যে ‘তিন রঙা’ জাতীয় পতাকা ওড়ান এবং “বন্দে ভারত” এক্সপ্রেসে চেপে নিজেই সফর করেন অনন্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মধ্যে দিয়ে।
আত্মনির্ভর ভারতের প্রতীক
চেনাব সেতু এবং অঞ্জি কেবল-স্টে ব্রিজ সম্পূর্ণভাবেই ভারতের তৈরি। এই দুই প্রকল্প প্রমাণ করে যে ভারত আর প্রযুক্তিগত উন্নয়নে কারো মুখাপেক্ষী নয়। প্রধানমন্ত্রী মোদী ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’-র কথা বলেই থেমে যাননি, তিনি বাস্তবেও তা প্রমাণ করে দিয়েছেন।
কাশ্মীরের উন্নয়নে ঐতিহাসিক অধ্যায়
জম্মু-কাশ্মীরের লেফটেন্যান্ট গভর্নর মনোজ সিনহা বলেন, “কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী—এটা আর কেবল স্লোগান নয়, মোদীজির নেতৃত্বে তা এখন বাস্তব। এই প্রকল্প কাশ্মীরবাসীর হৃদয়কে পুরো ভারতের সঙ্গে যুক্ত করেছে। এটি কেবল যাতায়াতের মাধ্যম নয়, বরং একটি জাতিগত ঐক্যের ভিত্তি।”
তিনি আরও বলেন, “২০২২ সালের এপ্রিল থেকে প্রধানমন্ত্রী জম্মু-কাশ্মীরে ১.১৫ লক্ষ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন বা ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন। তিনি কেবল নিরাপত্তার ক্ষেত্রেই নয়, উন্নয়ন এবং শিল্পায়নের মাধ্যমেও কাশ্মীরকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।”
সড়ক ও স্বাস্থ্য ক্ষেত্রেও সমান অগ্রগতি
এদিন প্রধানমন্ত্রী ১৯৫২ কোটির রোড প্রকল্প এবং ৩৫০ কোটির মাতা বৈষ্ণো দেবী মেডিকেল ইনস্টিটিউট-এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। নতুন বাইপাস, ফ্লাইওভার এবং স্বাস্থ্য পরিকাঠামো কাশ্মীরকে শুধু ভারতের মানচিত্রেই নয়, উন্নয়নের মানচিত্রেও কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে এসেছে।
চেনাব সেতুর উদ্বোধন ভারতের গর্বের দিন। এটা কেবল ইঞ্জিনিয়ারিং বা প্রযুক্তির জয় নয়, এটা ভারতের আত্মবিশ্বাসের জয়—এক ‘নতুন ভারত’-এর স্পষ্ট প্রতিচ্ছবি, যেখানে কাশ্মীর আর প্রান্তিক অঞ্চল নয়, বরং আত্মনির্ভর ভারতের গর্বিত অংশ। 🇮🇳
0 মন্তব্যসমূহ