আরাবল্লি মামলা: নিজের রায় নিজেই স্থগিত করল সুপ্রিম কোর্ট! ২০২৬-এর আগে বড় স্বস্তিতে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারগুলো
আরাবল্লি পাহাড়ের সংজ্ঞা নিয়ে নিজের দেওয়া রায়েই স্থগিতাদেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট। কেন্দ্র ও চার রাজ্যকে নোটিশ। খনি ইজারা নিয়ে কী হবে আগামীর ভবিষ্যৎ? পড়ুন বিস্তারিত।
নিজস্ব প্রতিবেদন, দিল্লি: উত্তর ভারতের প্রাণরেখা বলে পরিচিত আরাবল্লি পর্বতমালা রক্ষা নিয়ে এক বড়সড় আইনি মোড় এল। গত ২০ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্ট আরাবল্লি পাহাড়ের সংজ্ঞা নির্ধারণ করে যে ঐতিহাসিক রায় দিয়েছিল, সোমবার সেই রায়ের ওপর নিজেরাই স্থগিতাদেশ জারি করল। প্রধান বিচারপতি সূর্যকান্তের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চ কেন্দ্র ও রাজস্থান, হরিয়ানা, গুজরাত ও দিল্লি সরকারকে এই বিষয়ে নোটিশ পাঠিয়ে জবাব তলব করেছে। আগামী ২১ জানুয়ারি এই মামলার পরবর্তী শুনানি।
Supreme Court stays Aravalli ruling
কেন এই স্থগিতাদেশ?
গত ২০ নভেম্বরের রায়ে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছিল, সমতল থেকে ১০০ মিটার উঁচু যেকোনো ভূ-প্রকৃতিকে ‘আরাবল্লি পাহাড়’ হিসেবে গণ্য করা হবে। পাশাপাশি, বিশেষজ্ঞদের চূড়ান্ত রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত দিল্লি, হরিয়ানা, রাজস্থান ও গুজরাত জুড়ে নতুন কোনো খনির ইজারা (Mining Lease) দেওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল আদালত।
কিন্তু সোমবার প্রধান বিচারপতি সূর্যকান্ত জানান, আদালতের আগের নির্দেশের ফলে কিছু প্রশাসনিক ও প্রায়োগিক জটিলতা তৈরি হয়েছে। তাই আপাতত সেই নির্দেশ স্থগিত রাখা হচ্ছে। আদালত এখন একটি ‘হাই-পাওয়ার্ড বিশেষজ্ঞ কমিটি’ (High-Powered Expert Committee) গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে, যারা বিস্তারিতভাবে খতিয়ে দেখবে কোন এলাকাগুলো আরাবল্লি রেঞ্জের বাইরে রাখা সম্ভব এবং তার ফলে পরিবেশের কোনো ক্ষতি হবে কি না।
রাজনৈতিক তরজা: নিশানায় মোদী সরকার
আরাবল্লি ইস্যু নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই সুর চড়িয়েছে কংগ্রেস। রাজস্থানের বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে কংগ্রেসের অভিযোগ ছিল, খনি মাফিয়াদের সুবিধা করে দিতেই আরাবল্লি পাহাড়ের সংজ্ঞায় রদবদল করার চেষ্টা চলছে। কংগ্রেসের দাবি, আরাবল্লিকে খনি সংস্থাগুলোর হাতে তুলে দিলে রাজস্থানের প্রাকৃতিক ভারসাম্য পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যাবে। এমনকি বিরোধীরা এটিকে রাজস্থানের ইতিহাসের অন্যতম বড় ‘দুর্নীতি’ হিসেবেও চিহ্নিত করেছিল।
কেন গুরুত্বপূর্ণ এই পর্বতমালা?
আরাবল্লি কেবল পাহাড় নয়, এটি থর মরুভূমিকে এগিয়ে আসা থেকে আটকে রাখে। দিল্লি ও এনসিআর (NCR) অঞ্চলের দূষণ নিয়ন্ত্রণেও এই পাহাড়ের ভূমিকা অপরিসীম। সুপ্রিম কোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে (Suo Motu) এই বিষয়টি শুনানির জন্য গ্রহণ করেছিল কারণ অপরিকল্পিত খনির ফলে পাহাড়ের অস্তিত্ব বিপন্ন হচ্ছিল।
আপাতত নতুন কমিটি গঠন না হওয়া পর্যন্ত খনির ইজারা দেওয়ার ক্ষেত্রে আগের কড়াকড়ি থাকছে না। তবে পরিবেশবিদদের আশঙ্কা, দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের ফাঁকে যদি পাহাড় কাটার কাজ চলে, তবে উত্তর ভারতের পরিবেশগত অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যাবে। ২১ জানুয়ারির শুনানিতে কেন্দ্র ও রাজ্যগুলো কী জবাব দেয়, এখন সেদিকেই তাকিয়ে গোটা দেশ।
Tags- আরাবল্লি মামলা সুপ্রিম কোর্ট, সুপ্রিম কোর্ট নিউজ বেঙ্গলি, রাজস্থান খনি দুর্নীতি খবর, প্রধান বিচারপতি সূর্যকান্ত, পরিবেশ সংরক্ষণ নিউজ।

0 মন্তব্যসমূহ