Hot Posts

6/recent/ticker-posts

Ad Code

Recent in Home

ক্রোধ :জীবনের ৭ টি ক্ষতি ; ক্রোধ নিবারণে ভগবদ গীতার ৫ টি উপায়ে জীবন হোক সুখময় - স্বামী আত্মযোগানন্দ

 ক্রোধ: আত্মবিনাশ ও তা থেকে মুক্তির পথ এবং গীতার শিক্ষা



স্বামী আত্মযোগানন্দ

প্রিয় পাঠকবৃন্দ,

আমাদের জীবনে যেসকল নেতিবাচক শক্তি প্রতিনিয়ত ছায়া ফেলে, তাদের মধ্যে ক্রোধ (Krodha) অন্যতম। শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা এই ক্রোধকে একটি অত্যন্ত ক্ষতিকারক শক্তি হিসেবে তুলে ধরেছেন, যা আমাদের এক অন্তহীন নেতিবাচক পরিণতির দিকে ঠেলে দেয়। গীতার শিক্ষা অনুযায়ী, ক্রোধ আমাদের বিচারবুদ্ধিকে আচ্ছন্ন করে ফেলে, সচেতনতাকে নষ্ট করে দেয় এবং শেষ পর্যন্ত আত্মবিনাশের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

আসুন, ভগবদ্গীতায় বর্ণিত ক্রোধের কিছু নেতিবাচক দিক সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করি:

১. বিচারশক্তির লোপ:

ক্রোধ আমাদের সঠিক ও ভুলের মধ্যে পার্থক্য করার ক্ষমতাকে সম্পূর্ণরূপে আচ্ছন্ন করে দেয়। যখন আমরা ক্রুদ্ধ থাকি, তখন আমাদের মন এতই বিক্ষুব্ধ থাকে যে আমরা যুক্তিপূর্ণভাবে চিন্তা করতে পারি না।

২. বিভ্রান্তি ও বিহ্বলতা:

ক্রোধ মানসিক বিভ্রান্তি এবং মনের বিহ্বলতার দিকে ঠেলে দেয়, যা স্পষ্ট চিন্তাভাবনাকে বাধাগ্রস্ত করে। এই অবস্থায় আমাদের সিদ্ধান্তগুলো প্রায়শই ভুল পথে পরিচালিত হয়।

৩. সচেতনতার বিনাশ:

ক্রোধ আমাদের বর্তমান মুহূর্তে উপস্থিত থাকার এবং আমাদের চারপাশের ঘটনা ও নিজেদের কর্ম সম্পর্কে সচেতন থাকার ক্ষমতাকে ব্যাহত করে। আমরা তখন কেবল ক্রোধের বশবর্তী হয়েই কাজ করি।

৪. আত্ম-ধ্বংস:

গীতা সুস্পষ্টভাবে বলেছেন যে, ক্রোধের কারণে যখন আমাদের বিচারশক্তি বিনষ্ট হয়, তখন আমরা অনিবার্যভাবে ধ্বংসের পথে ধাবিত হই। এটি এক ভয়াবহ পরিণতি, যা প্রতিটি মানুষকে সচেতন থাকতে শেখায়।

৫. আসক্তি ও অহংকার:

অনেক সময় ক্রোধের মূল কারণ হলো আসক্তি এবং অহংকার। এর ফলে আমরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে পড়ি এবং বাস্তবতাকে ভুলভাবে দেখতে শুরু করি। আমাদের নিজস্ব চাহিদা বা ইচ্ছা পূরণ না হলে এই ক্রোধের জন্ম হয়।

৬. চেতনার বিকৃতি:

ক্রোধ আমাদের নিজেদের এবং বিশ্ব সম্পর্কে একটি বিকৃত ধারণা তৈরি করতে পারে, যা আধ্যাত্মিক অগ্রগতিতে বাধা দেয় এবং আমাদের জীবনে দুঃখ বয়ে আনে।

৭. আধ্যাত্মিক পতন:

গীতা বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন যে ক্রোধ আমাদের আধ্যাত্মিক যাত্রাকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করতে পারে, কারণ এটি জ্ঞান এবং অভ্যন্তরীণ শান্তি বিকাশে বাধা সৃষ্টি করে।

Related Questions are - How do I control my anger issues? Why do I get so angry so easily?

ক্রোধ নিয়ন্ত্রণে ভগবদ্গীতার ৫টি শ্লোক

ক্রোধ, এমন একটি আবেগ যা চিরকাল সংঘাত এবং বিনাশের জন্ম দিয়েছে, মাঝে মাঝে এটিকে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়ে। ক্রোধ মানুষকে উন্মাদ করে তুলতে পারে, পরিবারকে ধ্বংস করতে পারে, দেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে এবং শেষ পর্যন্ত কোনো বিজয়ীর অস্তিত্ব থাকে না! ঠিক যেমন ভগবদ্গীতার কাছে জীবনের অগণিত সমস্যার সমাধান রয়েছে, তেমনি ক্রোধ সম্পর্কেও সমাধান ও জ্ঞান রয়েছে।

এখানে ভগবদ্গীতার ৫টি শ্লোক উল্লেখ করছি যা ক্রোধ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে:


১. দুঃখেষ্বনুদ্বিগ্নমনাঃ সুখেষু বিগতস্পৃহঃ | বীতরাগভয়ক্রোধঃ স্থিতধীর্মুনিরুচ্যতে || (২/৫৬)

অর্থ: "যে ব্যক্তি দুঃখ দ্বারা প্রভাবিত হন না, যিনি ভোগের প্রতি আসক্তিমুক্ত এবং যিনি আসক্তি, ভয় ও ক্রোধ থেকে মুক্ত, তাঁহাকে স্থিরচিত্ত ঋষি বলা হয়।"

ব্যাখ্যা: এই শ্লোকে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ আমাদের মানসিক স্থিতিশীলতার গুরুত্ব সম্পর্কে শিক্ষা দিয়েছেন, যতই ক্রোধ ভেতরে ফুটুক না কেন। তিনি উপদেশ দিয়েছেন যে সুখ ও দুঃখ উভয় দ্বারাই অবিচলিত থাকতে হবে। সুখ বা ক্রোধে বিচলিত না হয়ে আমরা নিজেদের এবং বিশ্বের সাথে শান্তি বজায় রাখতে শিখতে পারি।


২. কামক্রোধবিমুক্তানাং যতীনাং যতচেতসাম্ | অভিতো ব্রহ্মনির্বাণং বর্ততে বিদিতাত্মনাম্ || (৫/২৬)

অর্থ: "যাঁরা কাম ও ক্রোধ থেকে মুক্ত এবং আত্মাকে উপলব্ধি করেছেন, তাঁদের জন্য ইহকাল ও পরকালে আধ্যাত্মিক আনন্দ বিদ্যমান।"

ব্যাখ্যা: এই শ্লোকে শ্রীকৃষ্ণ ব্যাখ্যা করেছেন যে জীবনের আনন্দ লাভ করার জন্য কাম (কামনা) এবং ক্রোধ থেকে মুক্ত থাকা অত্যন্ত জরুরি। যারা নিজেদের কামনা ও ক্রোধ নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন, তারা সহজেই অভ্যন্তরীণ শান্তি অর্জন করতে পারেন এবং তাদের প্রকৃত আত্মার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হন।


৩. অহিংসা সত্যমক্রোধস্ত্যাগঃ শান্তিরপৈশুনম্ | দয়া ভূতেষ্বলোলুপ্ত্বং মার্দবং হ্রীরচাপলম্ || (১৬/২)

অর্থ: "অহিংসা, সত্যবাদিতা, ক্রোধের অভাব, ত্যাগ, শান্তি, নিন্দা না করা, সকল জীবের প্রতি দয়া, লোভহীনতা, নম্রতা, বিনয় এবং চঞ্চলতার অভাব – এইগুলি দৈবী গুণাবলী।"


ব্যাখ্যা: এই শ্লোকে শ্রীকৃষ্ণ কিছু গুণাবলী উল্লেখ করেছেন যা উত্তম মানুষের থাকা উচিত এবং যা দৈবী প্রকৃতি নির্দেশ করে। তাদের মধ্যে, ক্রোধের অভাব অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ গুণ। অহিংসা, সত্যবাদিতা এবং দয়া অনুশীলন করলে ক্রোধের কারণগুলো হ্রাস পায়। যখন আমরা এই গুণাবলী নিজেদের মধ্যে গ্রহণ করি, তখন আমাদের চারপাশে এক শান্তিময় পরিবেশ তৈরি হয়।


৪. ত্রিবিধং নরকস্যেদং দ্বারং নাশনমাত্মনঃ | কামঃ ক্রোধস্তথা লোভস্তস্মাদেতৎত্রয়ং ত্যজেৎ || (১৬/২১)

অর্থ: "আত্মবিনাশকারী নরকের তিনটি দ্বার রয়েছে: কাম, ক্রোধ এবং লোভ। অতএব, এই তিনটি পরিত্যাগ করা উচিত।"


ব্যাখ্যা: এই শ্লোকে ক্রোধ কীভাবে আত্ম-ধ্বংসের দিকে নিয়ে যেতে পারে তা তুলে ধরা হয়েছে, যা খারাপ মেজাজের ক্ষতিকর প্রভাব মানুষকে দেখায়। ক্রোধ, লোভ এবং কাম কেবল একজন ব্যক্তির আধ্যাত্মিক বৃদ্ধিই বন্ধ করে না, বরং তাদের নিজেদের হৃদয় ও মনে একটি খারাপ পরিবেশ তৈরি করে। তাই, একটি পরিপূর্ণ এবং শান্তিপূর্ণ জীবন যাপনের জন্য এই বৈশিষ্ট্যগুলি পরিত্যাগ করা অত্যন্ত জরুরি।


৫. ক্রোধাদ্ববতি সম্মোহঃ সম্মোহাৎ স্মৃতিবিব্রমঃ | স্মৃতিভ্রংশাদ্ বুদ্ধিনাশো বুদ্ধিনাশাৎ প্রণশ্যতি || (২/৬৩)

অর্থ: "ক্রোধ থেকে সম্মোহ হয়, সম্মোহ থেকে স্মৃতির বিভ্রম হয়, স্মৃতিভ্রংশ হলে বুদ্ধিনাশ হয়, এবং বুদ্ধিনাশ হলে মানুষের সম্পূর্ণ বিনাশ ঘটে।"


ব্যাখ্যা: এই শ্লোকে শ্রীকৃষ্ণ ক্রোধের প্রভাব ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি বুঝিয়ে দেন যে ক্রোধ কীভাবে মোহ সৃষ্টি করে, তারপর মোহ স্মৃতিভ্রংশ ঘটায়, যা ফলস্বরূপ যুক্তি হারানোর দিকে পরিচালিত করে। এটি মানুষের কীভাবে নিজেদের বিনাশের দিকে ঠেলে দেয় তার একটি ইঙ্গিত। এই পরিণতির শৃঙ্খল বুঝতে পারলে ক্রোধ নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হয়।


গীতার এই শ্লোকগুলি আমাদের ক্রোধের ক্ষতিকর দিক এবং তা থেকে মুক্তির পথ স্পষ্ট করে তুলে ধরে। এটি আমাদের জীবনকে আরও শান্তিময় ও অর্থপূর্ণ করে তুলতে সাহায্য করে।


শুভকামনা সহ,

স্বামী আত্মযোগানন্দ


  • How do I control my anger issues?
  • Why do I get so angry so easily?
  • Can someone with anger issues change?
  • এত সহজে রেগে যাই কেন?
  • আমি রাগের প্রতি এত সংবেদনশীল কেন?
  • Tags- How to control anger issues book
  • How to control anger immediately
  • How to control anger in a relationship
  • 8 ways to overcome anger
  • How to control anger issues with family
  • How to control anger Psychology
  • How to control anger as a teenager
  • Anger issues test

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

Comments

Ad Code