বদলের স্বপ্ন দেখছে বাংলা? শুভেন্দু অধিকারীর মুখোমুখি - ভোট-পরবর্তী হিংসা থেকে রাজ্যের অবস্থা ও ২৬ এর রোডম্যাপ - বুঝিয়ে দিলেন সবকিছু
মানুষের ভাষা , Bongo Bhumi , নিউজ ডেস্ক:
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্রমোদীর অপারেশন সিঁদুর পরবর্তী সভা , সেখানে পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর ভাষণ - ২০২৬ -এ বিজেপি ঠিক কি করতে চলেছে সেখান থেকেই খানিকটা স্পষ্ট হয়ে গেছিল। আগামী কাল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহের বঙ্গ সফরে একাধিক কর্মসূচি রয়েছে। তার ঠিক আগে শুভেন্দু অধিকারী আজ সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে খোলা মেলা মনে জানালেন রাজ্য বিজেপির পরবর্তী রোডম্যাপ। উঠল অনুব্রত থেকে ভোট পরবর্তী হিংসা প্রসঙ্গ। জানালেন ঠিক কি অংকে বিজেপি ক্ষমতায় আসতে পারে এ রাজ্যে।
ভোট-পরবর্তী হিংসার ক্ষত ও বিচার চাওয়া
শুভেন্দু অধিকারীর বক্তব্য:
"রাজ্যটার অবস্থা আপনারা দেখতে পাচ্ছেন? ভোট-পরবর্তী হিংসার ঘটনায় সিবিআই ৬১টি এফআইআর (FIR) দায়ের করেছে এবং প্রায় ৪০০ জন গুন্ডাকে গ্রেপ্তার করেছে। তবে আরও অনেক গুন্ডা এখনও বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছে, যারা সহজেই জামিন পেয়ে গেছে। আমরা সিবিআইকে অনুরোধ করব যেন প্রতিটি মামলায় এই জামিন বাতিল করার জন্য আবেদন করা হয়। একইসাথে, ভিকটিম পরিবারগুলিকে, যেহেতু তারা আমাদের (বিজেপি) সমর্থক, আমরা সুপ্রিম কোর্টে নিয়ে যাবো যাতে অভিজিৎ মামলার মতো প্রতিটি ক্ষেত্রে এই জামিন বাতিল হয়। শুধু জামিন বাতিল নয়, সিবিআই এবং এনএইচআরসি (NHRC) যাদেরকে 'গুন্ডা' ঘোষণা করেছে – যেমন উদয়ন গুহ, পার্থ ভৌমিক, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, পরেশ পাল, অনুব্রত মণ্ডল, রানা সিংহ, খোকন দাস, ইজ্জত মোল্লা, জাহাঙ্গীর, শামীম – এদের বিরুদ্ধেও যেন কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এর জন্য আমরা ভিকটিমদের হয়ে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করব।"
শুভেন্দু অধিকারীর এই বক্তব্য থেকে স্পষ্ট যে, তিনি পশ্চিমবঙ্গের ভোট-পরবর্তী হিংসাকে একটি গুরুতর সমস্যা হিসেবে দেখছেন। তিনি সিবিআই তদন্তের গতি নিয়ে কিছুটা সন্তুষ্ট হলেও, জামিনপ্রাপ্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তুলেছেন। এর মাধ্যমে তিনি ভুক্তভোগীদের পাশে থাকার বার্তা দিচ্ছেন এবং শাসক দলের বেশ কয়েকজন হেভিওয়েট নেতার বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার নিশ্চিত করার ওপর জোর দিচ্ছেন। এটি স্পষ্টতই আগামী দিনে রাজনৈতিক বিতর্ককে আরও উস্কে দেবে এবং বিচার প্রক্রিয়ায় বিজেপির সক্রিয় ভূমিকার ইঙ্গিত দিচ্ছে।
দেশবিরোধী কার্যকলাপ ও জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্ন
শুভেন্দু অধিকারীর বক্তব্য:
"এদিকে এনআইএ (NIA) এই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। কলকাতার একাধিক জায়গায় গুপ্তচর সন্দেহে এনআইএ তল্লাশি চালাচ্ছে। এটা তো আসলে দেশবিরোধীদের আশ্রয়স্থল হয়ে উঠেছে। 'কাশ্মীর মাঙ্গে আজাদী' স্লোগান নিয়ে যেসব আন্দোলন বা গান তৈরি হচ্ছে, গাঁজা, চরস সেবনের মাধ্যমে এই ধরনের কার্যকলাপ চলছে, তা মূলত ঢাকাবাজার থেকে শুরু করে। প্রকাশ্যে 'কাশ্মীর মাঙ্গে আজাদী' স্লোগান কোন ভারতীয় দিতে পারে? এগুলি তো সরাসরি পাকিস্তানের চোরদের কাজ। যে ১০-১২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, পুলিশ তা করেনি; জনতা ক্ষিপ্ত হয়ে থানায় ঘেরাও করার পর বারাসাতের এক দোকানদারকে মারধরের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ বাধ্য হয়েছে। কিন্তু একদিন পরেই তাদের জামিন হয়ে গেছে। শান্তিপুর, চাপড়া, নাকাশি, বারাসাত – এগুলি কি দেশবিরোধীদের হাফ? যাদবপুরের মতো জায়গায় যারা রাম নবমী, সরস্বতী পূজা, স্বাধীনতা দিবস উদযাপনে বাধা দেয় বা জাতীয় সঙ্গীত গাইতে আপত্তি করে, তাদের সবাইকে সুরক্ষা দেওয়া হচ্ছে। আসামে 'অপারেশন সিন্ধুর'-এর মাধ্যমে যারা পাকিস্তানের পক্ষে পোস্ট করেছিল, আসাম পুলিশ তাদের কী হাল করেছে, দেখুন। এরপর উত্তরপ্রদেশের পুলিশ কী করে, সেটাও দেখার বিষয়।"
এই অংশে শুভেন্দু অধিকারী 'দেশবিরোধী কার্যকলাপ' এবং জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়টিকে সামনে এনেছেন। তিনি এনআইএ-র অভিযানকে সমর্থন করেছেন এবং সরাসরি 'কাশ্মীর মাঙ্গে আজাদী' স্লোগানকে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছেন। তিনি পশ্চিমবঙ্গকে দেশবিরোধীদের আশ্রয়স্থল বলে অভিযোগ করেছেন এবং পুলিশের বিরুদ্ধে পক্ষপাতের অভিযোগ এনেছেন, বিশেষত কিছু ধর্মীয় বা রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের ক্ষেত্রে। তিনি আসাম ও উত্তরপ্রদেশের মতো বিজেপি-শাসিত রাজ্যের উদাহরণ টেনে বুঝিয়েছেন যে, এই ধরণের কার্যকলাপের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। এই বক্তব্য জাতীয়তাবাদী ভোটারদের প্রভাবিত করতে পারে এবং সীমান্ত সুরক্ষা ও দেশের অখণ্ডতার উপর জোর দেয়।
পুলিশ, বিচার ব্যবস্থা ও অনুব্রত মণ্ডলের প্রভাব
শুভেন্দু অধিকারীর বক্তব্য:
"পুলিশ এবং বিচার ব্যবস্থা একাকার হয়ে গেছে। অনুব্রত মণ্ডলের অসুস্থতার নাটক করে পুলিশে হাজিরা না দেওয়া, অথচ তাঁকে পার্টি অফিসে দেখা গেছে – এগুলি সবই সাজানো। আইনজীবীদের মাধ্যমে বলে দেওয়া হয়েছে যে, এইগুলি জামিনযোগ্য ধারা, তাই কোর্টে আত্মসমর্পণ করলেই জামিন পাওয়া যাবে। আইসি বোলপুরকে সাসপেন্ড করা হয়েছে, কারণ তিনি হয়তো পুলিশের দালালী করেননি। আপনারা (গণমাধ্যম) মোদীজির বিরুদ্ধে যে ভাষা ব্যবহার করেন, মহিলাদের আক্রমণ করেন! মমতা ব্যানার্জি 'সিঁদুর' নিয়ে যে কথা বলেছিলেন, তা কি গ্রহণযোগ্য? আপনারাই তো মমতা ব্যানার্জিকে চ্যানেলে ভয় পান, বিজ্ঞাপনদাতারা ভয় পায়। আপনারা মমতা ব্যানার্জিকে ছোট করে অনুব্রতকে বড় করে দেখান। মমতা ব্যানার্জি মহিলাদের অপমান করেন, আর অনুব্রত মণ্ডল সরাসরি আইসি বোলপুরের স্ত্রীকে 'মা-রেপ' বলে উল্লেখ করেন। আর কী বলবো?"
শুভেন্দু অধিকারীর এই অংশে পুলিশ এবং বিচার ব্যবস্থার নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। তিনি অনুব্রত মণ্ডলের অসুস্থতা এবং জামিন প্রসঙ্গে কঠোর সমালোচনা করেছেন এবং এর পিছনে রাজনৈতিক প্রভাবের অভিযোগ এনেছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে মহিলাদের প্রতি অসম্মানজনক মন্তব্যের অভিযোগ তুলে তিনি শাসক দলের নারী সুরক্ষা এবং সম্মানের অঙ্গীকার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। এটি স্পষ্টতই শাসক দলের বিরুদ্ধে এক শক্তিশালী নৈতিক আক্রমণ, যা তৃণমূল কংগ্রেসের ভাবমূর্তিকে প্রভাবিত করতে পারে।
বিরোধীদের সমালোচনা ও বিজেপির পশ্চিমবঙ্গ কৌশল
শুভেন্দু অধিকারীর বক্তব্য:
"যোগী আদিত্যনাথ, হিমন্ত বিশ্বশর্মা এবং অন্যান্যরা মিলে 'লঙ্কা' লাগিয়ে দিয়েছেন। এই ধরণের সংশোধন (সম্ভবত সংবিধান বা আইনগত সংশোধনের কথা বলছেন) যা হওয়া উচিত, তা হচ্ছে না। আজকে ঘুষখোর ও প্রাইস চেয়ারম্যান নিত্যানন্দ চ্যাটার্জী একটি বিবৃতি দিয়েছেন। পুরনো তৃণমূলের একজন অনুব্রতকে হুমকি দিয়েছিল বলে ২০০০ সালে গ্রেপ্তার হয়েছিল। তখন মমতা ব্যানার্জি বলেছিলেন, 'অনু ব্রত, অনুব্রতই'। এখন বলা হচ্ছে কোর কমিটি হয়েছে, বীরভূমের চেয়ারম্যান আশীষ ব্যানার্জি, ডেপুটি স্পিকার। মমতা ব্যানার্জি প্রথম দিন থেকেই বিধানসভা ভাঙার কথা বলেছেন। আশীষ ব্যানার্জি ফোঁস ফোঁস করেন না, তিনি আসেন। অনুব্রত মণ্ডলের বার্তা খুব স্পষ্ট যে, তিনি এখন তোমাদের অনুব্রত মণ্ডল। সে যা করেছে বা বলছে, এর জন্য যদি কেউ দায়ী থাকে, তাহলে একমাত্র মমতা ব্যানার্জিই দায়ী। কারণ, তিনি যখন পঞ্চায়েত ভোটের সময় পুলিশ অফিসারের সামনে বলেছিলেন 'একই গ্রাম জ্বালিয়ে দেবে', সেদিন কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। যখন বলেছিলেন 'পুলিশের গাড়িতে বোমা মারো', সেদিনও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আজকেও নেওয়া হয়নি। ফলস্বরূপ, সেদিন যে বীজ বপন করা হয়েছিল, আজ তা বিষবৃক্ষে পরিণত হয়েছে।"
"প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং সুকান্ত মজুমদার (বিজেপি রাজ্য সভাপতি) ও শুভেন্দু অধিকারী – এরা কি রাজনৈতিকভাবে একে অপরের পেছনে লেগে আছেন? শুভেন্দু অধিকারী, প্রধানমন্ত্রী – প্রধানমন্ত্রীকে কি 'দাদু' বলা যায় না? তিনি কি জলে থাকেন না? অমিত শাহ ভারতবর্ষের উপরাষ্ট্রপতিকে অপমান করেন। প্রতিদিন কোর্টে গিয়ে বিচারপতিদের অপমান করেন। আমি ওনার কথার উত্তর দেবো না। তিনি তো মুসলমান ভোটের এমপি। শ্রীরামপুর মাইনাস, উত্তরপাড়া মাইনাস – কোনো হিন্দু ভোট দেয় না। ২০১৯ ও ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের হিসাব দেখুন, শ্রীরামপুর, উত্তরপাড়া, কোন্নগর – সব পৌরসভায় হেরেছে (তৃণমূল)। আর কারা জিতেছে? ডোমজুড়, ডাঙ্গীপাড়া, জগৎবল্লভপুর, মোলাই। পুলিশ যাকে গ্রেপ্তার করেছে, তার বিরুদ্ধে অভিযোগ সোশ্যাল মিডিয়ার মন্তব্যের জন্য। আমি স্বামীজির (স্বামী বিবেকানন্দ) বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে বলতে চাই – স্বামীজি সবাইকে শিখিয়েছেন নিজের ধর্মে আস্থা রাখতে, অপরের ধর্মে শ্রদ্ধা করতে। কিন্তু বিশেষ সম্প্রদায়ভুক্ত কেউ খুন হলে মমতা পুলিশের এত তৎপরতা কেন? আমার বিরুদ্ধে ২০০টি এফআইআর হয়েছে। ছাওয়া মিত্র নামের একজন কালী ঠাকুরকে নিয়ে সিগারেট খাওয়া, মদ খাওয়া, গাঁজা খাওয়ার কথা টক শো-তে বলেছেন। ২০০টি এফআইআর সত্ত্বেও তাকে স্পর্শ করা হয়নি। ঘোষ নামের এক যুবনেত্রী মহাদেবের শিবলিঙ্গ নিয়ে ফেসবুকে কি পোস্ট করেছিল? এর বিরুদ্ধে হিন্দু ছেলেরা একাধিক এফআইআর করেছে, কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ববি হাকিম যখন বলেন যে 'সকলের ইসলাম গ্রহণ করা উচিত', যারা 'দাওয়াতে ইসলাম' প্রচার করে, যারা অন্য ধর্মাবলম্বীদের 'দুর্ভাগ্যশীল' এবং নিজেদের 'সৌভাগ্যবান' বলে – তখন কি কোনো ব্যবস্থা হয় না? ববিয়া কি পাকিস্তানে ডন পত্রিকার সাংবাদিকের জন্য গিয়েছিলেন? এখানেও 'মিনি পাকিস্তান' হয়েছে বলে ব্যবস্থা হয় না। কিন্তু আপনার ভোট ব্যাংককে রক্ষা করতে যখন কেউ খুন হয়, আপনার মনোজ ভার্মা, আপনার রাজীব কুমার পৌঁছে যান।"
শুভেন্দু অধিকারী এখানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সরাসরি আক্রমণ করে বলেছেন যে, অনুব্রত মণ্ডলের কার্যকলাপের জন্য তিনিই দায়ী। তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অতীতের কিছু মন্তব্যকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেছেন যে, সেগুলিই বর্তমান পরিস্থিতির জন্ম দিয়েছে। তিনি অমিত শাহের বিরুদ্ধে ওঠা কিছু অভিযোগকে উড়িয়ে দিয়ে বলেছেন যে, সেগুলি ভিত্তিহীন। নিজের বিরুদ্ধে হওয়া এফআইআর এবং কিছু নির্দিষ্ট ধর্মীয় মন্তব্যের বিরুদ্ধে প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলে তিনি প্রশাসনের পক্ষপাতিত্বের দিকে আঙুল তুলেছেন। তিনি বিজেপিকে ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জীর আদর্শের ধারক ও বাহক হিসেবে তুলে ধরেছেন এবং বলেছেন যে, পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি সরকার না এলে ডঃ মুখার্জীর স্বপ্ন পূরণ হবে না।
নির্বাচন ও বিজেপির রোডম্যাপ
শুভেন্দু অধিকারীর বক্তব্য:
"মোদীজি কি পারবেন? আপনারা সবাই বলেছিলেন হরিয়ানায় বিজেপি হারবে, কিন্তু বিজেপি জিতেছে। আপনারা সবাই বলেছিলেন মহারাষ্ট্রে হারবে, কিন্তু বিজেপি বিশাল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে জিতেছে। আপনারা সবাই বলেছিলেন কেজরিওয়ালকে হারানো যাবে না, কিন্তু যেখানে ২৭ বছর বিজেপি সরকার ছিল না, সেখানেও ভারতীয় জনতা পার্টি ব্যাপকভাবে জিতেছে। পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি ৩৯% ভোট এবং ২ কোটি ৩ লাখ ২৭ হাজার ভোট পেয়েছে। আমাদের আর ৩০ লাখ ভোট দরকার, অর্থাৎ প্রায় ৫% ভোট দরকার। আমি হিন্দুদের বলবো, বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসে ভোটকেন্দ্রে যান এবং ভোট দিন। গত নির্বাচনে হিন্দুদের মধ্যে মাত্র ৬৮% ভোট পড়েছে, যেখানে মুসলিমদের মধ্যে ৯১% ভোট পড়েছে। হিন্দুরা যদি ৮০-৮৫% ভোট কেন্দ্রে যায়, তাহলেই এই রাজ্যকে এই জঞ্জাল, এই নর্দমা, এই কীট-পতঙ্গ, যারা রাজ্যকে ধ্বংস করছে, তাদের হাত থেকে বাঁচানো যাবে। প্রধানমন্ত্রী সাতটি বিষয়ের কথা বলেছেন – আলিগড় গুরুদ্বারেও সেই সাতটি বিন্দুর কথা বলেছিলেন। স্বচ্ছ চাকরি থেকে শুরু করে সীমান্ত বেড়া, রোহিঙ্গাদের বিষয়, নারী সুরক্ষা, উন্নয়ন – এগুলি সম্পূর্ণ হবে তখনই, যখন বিজেপি সরকার আসবে। উদয়ন গুহ বলছেন অমিত শাহ নাকি 'কোম্পানির মার্কেটিং ম্যানেজার'। অনুপ্রবেশের তিনটি চক্র রয়েছে, আর আসল কুইনপিন হলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বিএসএফকে ৫৪০ মিটার জমি দান করে বেমিথ (সম্ভবত 'ব্যর্থ' বলতে চেয়েছেন) করেছেন। আসল দায়ী মমতা ব্যানার্জি, তিনি সরাসরি বিএসএফকে আক্রমণ করে ৫৪০ কিলোমিটার সীমান্ত খুলে রেখেছেন।"
শুভেন্দু অধিকারী এখানে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির জয়ের ব্যাপারে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। তিনি বিজেপির সাম্প্রতিক সাফল্যের উদাহরণ টেনে বলেছেন যে, পশ্চিমবঙ্গেও তারা জয়লাভ করবে। তিনি হিন্দুদের প্রতি বেশি সংখ্যায় ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন এবং বলেছেন যে, এটিই রাজ্যকে বর্তমান 'জঞ্জাল' থেকে মুক্ত করার একমাত্র পথ। তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর 'সাতটি বিন্দু' অর্থাৎ স্বচ্ছ চাকরি, সীমান্ত সুরক্ষা, নারী সুরক্ষা, উন্নয়ন ইত্যাদির কথা উল্লেখ করে বলেছেন যে, বিজেপি ক্ষমতায় এলে এই লক্ষ্যগুলি পূরণ হবে। তিনি অনুপ্রবেশ এবং সীমান্ত সুরক্ষার ইস্যুতেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তীব্র আক্রমণ করেছেন। এই বক্তব্য বিজেপির নির্বাচনী কৌশল এবং হিন্দু ভোটের উপর তাদের নির্ভরতাকে তুলে ধরে।
শুভেন্দু অধিকারীর এই বিস্তারিত সাক্ষাৎকারটি পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং আসন্ন লোকসভা নির্বাচন নিয়ে তাঁর নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেছে। তিনি শাসক দলের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ এনেছেন এবং বিজেপিকে রাজ্যের জন্য একটি নতুন ভোরের স্বপ্ন দেখাচ্ছেন। তাঁর এই আক্রমণাত্মক এবং বিতর্কিত মন্তব্যগুলি আগামী দিনে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে আরও নতুন বিতর্কের জন্ম দেবে তা বলাই বাহুল্য। এই সাক্ষাৎকারটি একদিকে যেমন বিজেপির রণনীতি সম্পর্কে ধারণা দেয়, তেমনই অন্যদিকে রাজ্য রাজনীতিতে বিরোধী শিবিরের আক্রমণের মূল বিষয়গুলোও স্পষ্ট করে তোলে।
0 মন্তব্যসমূহ