২০২৬-এর মহড়া? আজই বঙ্গে পা রাখছেন শাহ, তৃণমূলকে রুখতে বিজেপির ‘মাস্টারপ্ল্যান’ কি তৈরি?
নিজস্ব প্রতিবেদন, কলকাতা: বছর শেষ হতে চললেও বাংলার রাজনৈতিক উত্তাপ কমছে না বরং পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। আজ সোমবার, ২৯ ডিসেম্বর, ২০২৫। তিনদিনের সফরে মোদীর প্রধান সেনাপতি তথা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ আজই কলকাতায় পা রাখছেন। তাঁর এই সফর ঘিরে ইতিমধ্যেই সরগরম বঙ্গ রাজনীতি। বিজেপির অন্দরমহল থেকে যা খবর আসছে, তাতে ২০২৬-এর বিধানসভা নির্বাচনের ব্লু-প্রিন্ট পকেটে নিয়েই তিনি কলকাতায় আসছেন বলে মনে করা হচ্ছে।
সফরসূচিতে কী কী থাকছে?
বিজেপি সূত্রের খবর অনুযায়ী, আজ সোমবার সন্ধ্যায় কলকাতা বিমানবন্দরে নামবেন শাহ। সেখান থেকে সরাসরি চলে যাবেন সল্টলেকের দলীয় কার্যালয়ে। সেখানে সাংগঠনিক স্তরে একগুচ্ছ বৈঠক করার কথা রয়েছে তাঁর। রাজ্য বিজেপির এক শীর্ষ নেতার কথায়, "রাজ্যে নির্বাচনের প্রস্তুতি কতটা এগোল, সংগঠন কোথায় দাঁড়িয়ে—এসবেরই মূল্যায়ন করবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।" ৩০ ডিসেম্বর অর্থাৎ মঙ্গলবার তিনি একটি গুরুত্বপূর্ণ সাংবাদিক বৈঠকও করতে পারেন।
গোপন বৈঠক ও রুদ্ধদ্বার আলোচনা:
শুধুমাত্র দলের বৈঠক নয়, অমিত শাহ এই সফরে আরএসএস-এর শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গেও রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বসতে পারেন। এছাড়া বিজেপির সাংসদ, বিধায়ক এবং পুরসভার কাউন্সিলরদের সঙ্গেও আলাদা করে কথা বলবেন তিনি। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ভোটার তালিকা সংশোধন বা ‘এসআইআর’ (SIR) প্রক্রিয়া এবং বর্তমান সরকারের জনবিমুখী নীতিকে হাতিয়ার করে তৃণমূলকে কীভাবে চাপে ফেলা যায়, তারই কৌশল স্থির হবে এই বৈঠকগুলোতে।
নিরাপত্তার কড়াকড়ি ও এসআইআর বিতর্ক:
অমিত শাহের সফরের ঠিক আগেই এক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক (সিইও) মনোজ আগরওয়ালকে 'ওয়াই-প্লাস' (Y-Plus) ক্যাটাগরির কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছে। গোয়েন্দা রিপোর্টে হুমকির আশঙ্কার কথা মাথায় রেখেই এই সিদ্ধান্ত। এদিকে রাজ্যে প্রায় ৩২ লক্ষ ভোটারকে নিয়ে ‘এসআইআর’ শুনানি চলছে, যা নিয়ে ইতিমধ্যেই শাসক ও বিরোধী শিবিরের মধ্যে ঠান্ডা লড়াই শুরু হয়েছে।
শহর জুড়ে বাইক মিছিল ও শক্তিপ্রদর্শন:
সফরের শেষ দিন, অর্থাৎ ৩১ ডিসেম্বর সায়েন্স সিটি অডিটরিয়ামে এক বিশাল মন্ডল সভাপতি সম্মেলনে ভাষণ দেবেন অমিত শাহ। দলীয় কর্মীদের মনোবল বাড়াতে এটি একটি বড় হাতিয়ার হতে চলেছে। এছাড়া খবর পাওয়া যাচ্ছে যে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কনভয়কে স্বাগত জানাতে শহর জুড়ে হাজার হাজার বাইক মিছিলের পরিকল্পনাও সেরে রেখেছে বিজেপি যুব মোর্চা।
তৃণমূলের পাল্টা:
বিজেপির এই তোড়জোড়কে অবশ্য বিশেষ গুরুত্ব দিতে নারাজ তৃণমূল শিবির। দলের এক মুখপাত্রের কথায়, "নির্বাচন এলেই ওঁরা পরিযায়ী পাখির মতো আসেন, কাজের কাজ কিছু হয় না।" বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি এবং হিন্দুদের ওপর আক্রমণ নিয়ে শাহ ও মোদীর ‘নীরবতা’ নিয়ে ইতিমধ্যেই সরব হয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
সব মিলিয়ে, অমিত শাহের এই তিন দিনের সফর কেবলই একটি ‘রুটিন ভিজিট’ নয়, বরং ২০২৬-এর লড়াইয়ের জন্য জমি তৈরির এক বড় ধাপ। তিনি কি সত্যিই কোনো ‘মাস্টারপ্ল্যান’ নিয়ে আসছেন যা তৃণমূলকে প্যাঁচে ফেলবে? নাকি এই সফর শুধুই জল্পনা বাড়িয়ে শেষ হবে? উত্তর মিলবে আগামী কয়েক দিনেই।
.webp)
0 মন্তব্যসমূহ