Hot Posts

6/recent/ticker-posts

Ad Code

Recent in Home

হুমায়ুন কবীরের বাবরি মসজিদ ও নতুন দল JUP - ২০২৬-এ ভোট অংকে সুবিধা কার ? তৃণমূল নাকি বিজেপির ?

হুমায়ুন কবীরের বাবরি মসজিদ  ও  নতুন দল JUP - ২০২৬-এ ভোট অংকে সুবিধা কার ? তৃণমূল নাকি  বিজেপির ?


Image- sanatanprabhat.org


মুর্শিদাবাদের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে হুমায়ুন কবীর এক চিরকালীন 'বিদ্রোহী' চরিত্র। কিন্তু ২০২৫-এর ডিসেম্বর মাসে তিনি যে চালটি চেলেছেন, তা শুধু মুর্শিদাবাদ নয়, ২০২৬-এর পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনের সম্পূর্ণ পাটিগণিত বদলে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। একদিকে ভরতপুরের এই বিতর্কিত বিধায়ক গঠন করেছেন নতুন দল 'জনতা উন্নয়ন পার্টি' (JUP), অন্যদিকে অযোধ্যার বিতর্কিত ইতিহাসের স্মৃতি উসকে দিয়ে বেলডাঙায় করেছেন 'বাবরি মসজিদ'-এর আদলে এক বিশাল মসজিদের শিলান্যাস।1

গতকাল তাঁর ছেলে গোলাম নবি আজাদ (সোহেল)-এর পুলিশি আটক এবং মুক্তি সেই উত্তেজনায় ঘৃতাহুতি দিয়েছে। এই ঘটনাপ্রবাহের নেপথ্যে থাকা গভীর রাজনৈতিক সমীকরণ এবং ২০২৬-এর নির্বাচনে এর প্রভাব নিয়ে একটি বিস্তারিত বিশ্লেষণ নিচে তুলে ধরা হলো।


১. রাজনীতির 'যাযাবর' থেকে 'নিজেস্ব সাম্রাজ্য': হুমায়ুন কবীরের রাজনৈতিক ইতিহাস

হুমায়ুন কবীর পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে এমন এক ব্যক্তি, যাকে কোনো নির্দিষ্ট দলের ফ্রেমে আটকে রাখা কঠিন। তাঁর রাজনৈতিক জীবন মূলত তৃণমূল, কংগ্রেস এবং বিজেপির এক বিচিত্র মিশ্রণ।

  • অধীর গড়ে উত্থান: একসময় অধীর চৌধুরীর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সেনাপতি হিসেবে পরিচিত ছিলেন তিনি। ২০১১ সালে কংগ্রেসের টিকিটে রেজিনগর থেকে প্রথমবার বিধায়ক হন।

  • তৃণমূল ও মন্ত্রিত্ব: ২০১২ সালে কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেন এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্ত্রিসভায় জায়গা পান। কিন্তু দলের নেতৃত্বের সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় ২০১৫ সালে তাঁকে বহিষ্কার করা হয়।

  • গেরুয়া বসন্ত: ২০১৮ সালে তিনি যোগ দেন বিজেপিতে। ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে মুর্শিদাবাদ কেন্দ্রে বিজেপির হয়ে লড়েছিলেন। যদিও তিনি জিততে পারেননি, তবে ওই এলাকায় বিজেপির ভোটব্যাঙ্ক বৃদ্ধিতে তাঁর বড় ভূমিকা ছিল।

  • ঘরওয়াপসি ও বর্তমান বিদ্রোহ: ২০২১-এর আগে আবার তৃণমূলে ফিরে ভরতপুর থেকে বিধায়ক হন। কিন্তু গত ৫ ডিসেম্বর ২০২৫-এ তৃণমূল তাঁকে সাসপেন্ড করার পরই তিনি নিজের দল 'জনতা উন্নয়ন পার্টি' (JUP) ঘোষণা করেন।


২. গতকালের ঘটনা: পুলিশের ভূমিকা ও শুভেন্দু অধিকারীর 'তাৎপর্যপূর্ণ' সমর্থন

রবিবার সকালে শক্তিপুর থানার পুলিশ হুমায়ুন কবীরের বাড়িতে হানা দিয়ে তাঁর পুত্র গোলাম নবি আজাদকে আটক করে। অভিযোগ ছিল, এক পুলিশ কনস্টেবলের গায়ে হাত তুলেছেন তিনি। আট ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের পর তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হলেও, এই ঘটনাটি জেলায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়ায়।

এই পুরো ঘটনায় সবথেকে চমকপ্রদ ছিল বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর প্রতিক্রিয়া। বিজেপি নেতা হয়েও তিনি সরাসরি হুমায়ুন কবীরের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়ে পুলিশের সমালোচনা করেছেন। শুভেন্দুর বক্তব্য ছিল:

"রাজ্য পুলিশকে পিসি-ভাইপোর দলদাসে পরিণত করা হয়েছে। এক নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির বাড়িতে বিনা নোটিশে ঢুকে ছেলেকে তুলে নিয়ে আসা বেআইনি।"

বিশ্লেষণ: শুভেন্দু অধিকারী কেন হুমায়ুন কবীরের ছেলেকে সমর্থন করছেন? এর উত্তর লুকিয়ে আছে ২০২৬-এর নির্বাচনী পাটিগণিতে। হুমায়ুন কবীর যত বেশি তৃণমূলের থেকে সংখ্যালঘু ভোট কাটতে পারবেন, বিজেপির জয়ের রাস্তা ততটাই মসৃণ হবে। শত্রু পক্ষকে দুর্বল করার জন্য 'শত্রুর শত্রু মিত্র' নীতিতেই হাঁটছেন শুভেন্দু।

৩. ২০২৬-এর বিধানসভা নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রভাব: ভোট কাটাকুটির অঙ্ক

২০২৬-এর নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গ দখলের লড়াইয়ে মূল চাবিকাঠি হলো ৩০ শতাংশ সংখ্যালঘু ভোট। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জয়ের প্রধান স্তম্ভ হলো এই ভোটব্যাঙ্ক। হুমায়ুন কবীরের JUP সেই স্তম্ভেই কুড়ুল মারার চেষ্টা করছে।

সংখ্যালঘু ভোটের বিভাজন (Minority Vote Split)

মুর্শিদাবাদ, মালদা এবং উত্তর দিনাজপুরে সংখ্যালঘু ভোটারদের আধিক্য। হুমায়ুন কবীর যদি এই জেলাগুলোতে ৫-১০ শতাংশ সংখ্যালঘু ভোটও টানতে পারেন, তবে তৃণমূলের অনেক হেভিওয়েট প্রার্থীর পরাজয় নিশ্চিত হতে পারে। ২০২১ সালে ISF যা দক্ষিণবঙ্গে (ভাঙড়) করেছিল, উত্তর ও মধ্যবঙ্গে হুমায়ুন কবীর সেই একই ভূমিকা নিতে চাইছেন।

বিজেপি-র জয় সহজ হবে?

হুমায়ুন কবীর সংখ্যালঘু ভোট কাটলে তার সরাসরি সুবিধা পাবে বিজেপি। বিশেষ করে ত্রিভুজ লড়াই বা চতুর্মুখী লড়াই (TMC vs BJP vs Left-Congress vs JUP/ISF) হলে, বিজেপি মেরুকরণের মাধ্যমে অনেক হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ বা মিশ্র বসতি এলাকায় জিতে যেতে পারে। অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষকের মতে, হুমায়ুন কবীরের এই 'বিদ্রোহ' আদতে বিজেপির 'বি-টিম' হিসেবে কাজ করবে, যা তৃণমূলের জয়ের সম্ভাবনাকে তলানিতে নিয়ে যেতে পারে।

বাবরি মসজিদের প্রতীকী প্রভাব

মুর্শিদাবাদে বাবরি মসজিদের আদলে মসজিদ তৈরির ঘোষণাটি অত্যন্ত সুপরিকল্পিত। এর মাধ্যমে হুমায়ুন কবীর নিজেকে 'সংখ্যালঘুদের প্রকৃত ত্রাণকর্তা' হিসেবে তুলে ধরতে চাইছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'উন্নয়ন'-এর রাজনীতির বিপরীতে তিনি 'আবেগ ও পরিচিতি'-র রাজনীতিকে অস্ত্র করেছেন।

৪. তৃণমূলের মাথাব্যথা ও কৌশল

তৃণমূল ইতিমধ্যেই বুঝতে পেরেছে যে হুমায়ুন কবীরকে হালকাভাবে নিলে বিপদ। তাই পুলিশি সক্রিয়তা বা আইনি ব্যবস্থার মাধ্যমে তাঁর উপর চাপ সৃষ্টি করার চেষ্টা চলছে—এমনটাই দাবি রাজনৈতিক মহলের একাংশের। তবে এতে হিতে বিপরীত হওয়ার সম্ভাবনাও প্রবল। মুসলামান প্রধান এলাকায় হুমায়ুন যদি 'ভিক্টিম কার্ড' খেলতে পারেন, তবে তৃণমূলের সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্কে ফাটল ধরা আটকানো কঠিন হতে পারে।

হুমায়ুন কবীরের জনতা উন্নয়ন পার্টি (JUP) ২০২৬-এর নির্বাচনে কতগুলো আসন জিতবে, তা নিয়ে সন্দেহ থাকলেও, তারা তৃণমূলের কতগুলো আসন হারাবে—সেটাই এখন বড় প্রশ্ন। মুর্শিদাবাদের রাজনীতি এখন আর শুধু তৃণমূল বনাম কংগ্রেস নেই; এখানে এখন এক নতুন শক্তির উদয় হয়েছে যা নবান্নের মসনদকে টলিয়ে দিতে পারে। শুভেন্দু অধিকারীর সমর্থন এবং পুলিশের কড়াকড়ি এই লড়াইকে আরও তিক্ত করে তুলল।

পরবর্তী পদক্ষেপ: আপনি কি চান আমি মুর্শিদাবাদ জেলার প্রতিটি বিধানসভা ভিত্তিক ভোটের সমীকরণ নিয়ে আরও একটি বিস্তারিত বিশ্লেষণ লিখে দিই? অথবা হুমায়ুন কবীর ও নওশাদ সিদ্দিকীর (ISF) জোট সম্ভাবনা নিয়ে কোনো রিপোর্ট দেব? আপনার মতামত জানান।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

Comments

Ad Code