"মমতা-শুভেন্দু হিন্দু সাজলে আমি হবো মোল্লাদের নেতা!" ১০০ সিট জেতার চ্যালেঞ্জ ছুড়ে নয়া যুদ্ধের ডাক হুমায়ুনের
নিজস্ব প্রতিবেদন, মুর্শিদাবাদ ও কলকাতা: ২০২৬-এর বিধানসভা নির্বাচনের দেড় বছর বাকি থাকতেই বাংলার রাজনৈতিক ময়দান কার্যত কুরুক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। একদিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘দুর্গাঙ্গন’ এবং ‘জগন্নাথ মন্দির’ তৈরির প্রতিযোগিতা, অন্যদিকে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর কড়া হিন্দুত্ববাদ। এই দুইয়ের মাঝখানে দাঁড়িয়ে এবার বিস্ফোরক মন্তব্য করলেন ভরতপুরের বিধায়ক তথা জনতা উন্নয়ন পার্টির (JUP) প্রধান হুমায়ুন কবীর। তাঁর সাফ কথা, "ওঁরা যদি হিন্দু হিন্দু করেন, তবে আমি মোল্লাদের নেতা সাজবো। পারলে আমাকে রুখে দেখান!"
১. "সরকারি টাকায় মন্দির কেন?"— মমতাকে সরাসরি তোপ
হুমায়ুন কবীরের অভিযোগ, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেকে হিন্দু প্রমাণ করতে গিয়ে সরকারি কোষাগারের টাকা যথেচ্ছ ব্যবহার করছেন। তাঁর প্রশ্ন:
জগন্নাথ মন্দির বা দুর্গাঙ্গন কেন সরকারি টাকায় হবে?
দুর্গাপূজায় কেন ক্লাবগুলোকে ১ লক্ষ ১০ হাজার টাকা করে সরকারি অনুদান দেওয়া হবে?
হুমায়ুন হুঙ্কার দিয়ে বলেন, "শুভেন্দু বাবু হিন্দু হিন্দু করছেন, আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সরকারি টাকায় মন্দির আর কার্নিভ্যাল করছেন। এই বিভাজনের রাজনীতি যদি চলতেই থাকে, তবে আমি সংখ্যালঘু বা মোল্লাদের নেতা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করবোই।"
২. ২০২৬-এর ফর্মুলা: "১০০ আসন জিতে কিংমেকার হবো"
২০২৬-এর নির্বাচনে জাতিগত ও ধর্মীয় মেরুকরণ যে চরম পর্যায়ে পৌঁছাবে, তার স্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়েছেন হুমায়ুন। তাঁর দাবি, "হিন্দুরা হিন্দু নেতা বেছে নিক। ২০০টি হিন্দু মেজরিটি আসন আছে, সেখানে ঠিক হোক মমতা না শুভেন্দু কে জিতবে। কিন্তু বাকি ১০০টি আসনে হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে আমি জিতে দেখাবো। তখন সরকার গড়তে মমতা বা শুভেন্দু— কাউকেই আমাকে সমর্থন করা ছাড়া উপায় থাকবে না।"
৩. তৃণমূল ও বিজেপির প্রতিক্রিয়া: "বিজেপির বি-টিম" বনাম "সংষ্কৃতি রক্ষা"
হুমায়ুনের এই ‘মোল্লা’ মন্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করেছে তৃণমূল। দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, "হুমায়ুন কবীর আসলে বিজেপির লিখে দেওয়া স্ক্রিপ্ট পড়ছেন। সংখ্যালঘু বা সংখ্যাগুরু— কেউই এই বিষাক্ত প্রচারকে পাত্তা দেবে না। বাংলার মানুষ জানেন বিজেপিকে হারাতে হলে মমতাই একমাত্র বিকল্প।"
অন্যদিকে, বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার জানিয়েছেন, বিজেপি নীতিগতভাবে সরকারি টাকায় মন্দির বা মসজিদ বানানোর বিরোধী। তিনি বলেন, "অযোধ্যার রাম মন্দির জনগণের টাকায় হয়েছে, সরকারের টাকায় নয়। সরকারের কাজ মন্দির-মসজিদ থেকে দূরে থাকা। তবে মা দুর্গা বাংলার সংস্কৃতির অঙ্গ, এটা বুঝতে হবে।"
হুমায়ুন কবীরের ‘মোল্লা’ কার্ড এবং মগরাহাটে নির্বাচন কমিশনের অফিসারের ওপর হামলা— এই দুই ঘটনাই প্রমাণ করছে যে ২০২৬-এর নির্বাচন শান্তিতে হওয়ার সম্ভাবনা কম। বাংলার রাজনীতি এখন আর উন্নয়নের তর্কে সীমাবদ্ধ নেই; তা এখন মন্দির-মসজিদ এবং পেশ পেশী শক্তির লড়াইয়ে পর্যবসিত হয়েছে।
Tags- হুমায়ুন কবীর মোল্লা নেতা, দুর্গাঙ্গন বনাম জগন্নাথ মন্দির, মগরাহাট হামলা সি মুরুগান, ২০২৬ পশ্চিমবঙ্গ নির্বাচন।
0 মন্তব্যসমূহ