মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বনাম রাজনৈতিক প্রতিহিংসা: কৌস্তভ বাগচীর বিরুদ্ধে এফআইআর, প্রশ্ন উঠছে বিচার ব্যবস্থার ভূমিকা নিয়ে
মানুষের ভাষা, কলকাতা, ৩০ মে, ২০২৫:
ফের শিরোনামে বিজেপি নেতা কৌস্তভ বাগচী। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে উদ্দেশ্য করে মন্তব্য করার অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে টালিগঞ্জ থানায় নতুন করে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। দীপক ঘোষের লেখা একটি বিতর্কিত বইয়ের প্রসঙ্গ টেনে কৌস্তভ তাঁর সামাজিক মাধ্যমে একটি পোস্ট শেয়ার করেছিলেন, যা এই অভিযোগের মূল কারণ। তবে এই ঘটনা শুধুমাত্র একটি এফআইআর-এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই, এটি মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং রাজনৈতিক প্রতিহিংসার গভীরতর প্রশ্নগুলিকে সামনে নিয়ে আসছে, যা ইতিমধ্যেই বাংলার রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
বারবার নিশানায় কেন কৌস্তভ?
কৌস্তভ বাগচীর বিরুদ্ধে এফআইআর দায়েরের ঘটনা এবারই প্রথম নয়। এর আগেও ২০২৩ সালে একই কারণে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। প্রসঙ্গত, সেই সময় সাগরদিঘি উপনির্বাচনে তৃণমূলের পরাজয়ের পর কংগ্রেস সাংসদ অধীর চৌধুরীকে আক্রমণ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এর প্রত্যুত্তরে কৌস্তভ বাগচী দীপক ঘোষের লেখা একটি বইয়ের সূত্র ধরে মুখ্যমন্ত্রীকে খোঁচা দেন। সেই মন্তব্যের জেরেই মাঝরাতে তাঁর বাড়ি থেকে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়।
তবে সেই গ্রেফতারি প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন ওঠে কলকাতা হাইকোর্টে। বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা কলকাতা পুলিশ কমিশনারকে এই বিষয়ে রিপোর্ট পেশ করার নির্দেশ দেন এবং এফআইআর-এর ওপর স্থগিতাদেশ জারি করেন। এই রায় কৌস্তভের মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষে একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করে। জামিন পাওয়ার পর রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি মাথাও মুণ্ডন করেন, যা তাঁর প্রতিবাদী মনোভাবের প্রতীক হয়ে ওঠে।
নতুন এফআইআর: একই কারণ, একই প্রশ্ন
এবারও সেই একই দীপক ঘোষের বইয়ের প্রসঙ্গ টেনে মুখ্যমন্ত্রীকে আক্রমণ করার অভিযোগে কৌস্তভের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। এই অভিযোগপত্রে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার এবং বর্ষীয়ান নেতা তথাগত রায় যেভাবে মুখ্যমন্ত্রীকে আক্রমণ করে চলেছেন, তারও নিন্দা করা হয়েছে। এই বিষয়টি আবারও প্রমাণ করে যে, শাসক দল বিরোধীদের সমালোচনামূলক মন্তব্যকে কিভাবে দেখছে এবং এর বিরুদ্ধে কী ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে।
মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বনাম রাজনৈতিক চাপানউতোর
গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় মতপ্রকাশের স্বাধীনতা একটি মৌলিক অধিকার। সরকার বা বিরোধী দলের নেতাদের গঠনমূলক সমালোচনা গণতন্ত্রের অবিচ্ছেদ্য অংশ। কিন্তু বারবার একই কারণে একজন রাজনৈতিক কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের এবং গ্রেফতারির ঘটনা নিঃসন্দেহে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার ইঙ্গিত বহন করে। এই ধরনের পদক্ষেপ সরকারের সমালোচকদের কণ্ঠরোধ করার একটি চেষ্টা হিসেবেই দেখা হচ্ছে।
বিচার ব্যবস্থার উপর এখন আবারও সবার নজর। আদালত কি ফের মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষেই রায় দেবে, নাকি এই নতুন এফআইআর কৌস্তভের জন্য আরও আইনি জটিলতা তৈরি করবে, তা সময়ই বলবে। তবে এই ঘটনাগুলি বাংলার রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে বিরোধীদের মতপ্রকাশের সুযোগ এবং তার সীমা নিয়ে বিতর্কের নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
কৌস্তভ বাগচীর বিরুদ্ধে এই এফআইআর কি সত্যিই আইনানুগ প্রক্রিয়া, নাকি এটি কেবল রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টির একটি কৌশল, সেই প্রশ্ন এখন বাংলার সচেতন মহলে ঘুরপাক খাচ্ছে।
0 মন্তব্যসমূহ