মানুষের ভাষা ওয়েবডেস্ক
বেঙ্গালুরুতে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর (RCB) আইপিএল ২০২৫ জয়ের পর আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ঘটে গেল এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের বাইরে অতিরিক্ত ভিড়ের কারণে পদপৃষ্ট হয়ে অন্তত ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং প্রায় ৫০ জন আহত হয়েছেন। বুধবার এই দুর্ঘটনা ঘটে, যেখানে হাজার হাজার সমর্থক উপস্থিত হয়েছিলেন নিজেদের প্রিয় ক্রিকেটারদের এক নজর দেখতে। যদিও এই অনুষ্ঠান ছিল শুধুমাত্র টিকিট এবং পাসধারীদের জন্য, তবুও বিপুল সংখ্যক মানুষ স্টেডিয়ামের বাইরে জমায়েত হন।
সরকারি সূত্র জানায়, স্টেডিয়ামের পাশে একটি ড্রেনের উপর অস্থায়ীভাবে বসানো কংক্রিটের স্ল্যাব অতিরিক্ত ভিড়ের চাপে ভেঙে পড়ে। সেই সময় বহু মানুষ সেই স্ল্যাবের ওপর দাঁড়িয়ে ছিলেন। হঠাৎ স্ল্যাব ভেঙে পড়ার ফলে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এবং শুরু হয় দৌড়াদৌড়ি। এই আতঙ্কজনিত হুড়োহুড়ির কারণেই ঘটে এই ভয়াবহ প্রাণহানি।
কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া এক প্রেস কনফারেন্সে জানিয়েছেন, পদপৃষ্ট হয়ে অন্তত ১১ জন প্রাণ হারিয়েছেন। ঘটনায় ডেপুটি কমিশনার স্তরের তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নিহতদের পরিবারের জন্য ১০ লক্ষ টাকা করে আর্থিক সহায়তার ঘোষণা করেন তিনি। এছাড়াও, আহতদের বিনামূল্যে চিকিৎসার ব্যবস্থার আশ্বাস দেন মুখ্যমন্ত্রী। উপমুখ্যমন্ত্রী ডি কে শিবকুমারও মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করলেও বিস্তারিত কিছু জানাননি। তিনি বলেন, “আমি এখনই স্টেডিয়ামে যাচ্ছি। প্রচুর আবেগপ্রবণ সমর্থক ছিল। আমরা ৫,০০০ নিরাপত্তারক্ষী মোতায়েন করেছিলাম।”
জানা গেছে, মৃতদের মধ্যে ১৩ থেকে ৩৫ বছর বয়সী পুরুষ ও নারী রয়েছেন। বৌরিং হাসপাতালে ৬ জনের মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়েছে, যার মধ্যে তিনজন নারী ও তিনজন পুরুষ। ভাইদেহি হাসপাতালে আরও ৪ জন এবং মণিপাল হাসপাতালে ১ জনের মৃত্যু হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া এবং ডি কে শিবকুমার আহতদের দেখতে হাসপাতালে যান এবং তাদের সঙ্গে কথা বলেন। ঘটনাস্থল থেকে পাওয়া দৃশ্যে দেখা যায়, আহতদের দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিড়ের মধ্য দিয়ে অ্যাম্বুলেন্স চলতে দেখা যায়।
এই ঘটনার পর রাজনৈতিক চাপ তৈরি হয়েছে। বিজেপি এই ঘটনাকে রাজ্য সরকারের প্রশাসনিক ব্যর্থতা হিসেবে আখ্যা দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ও উপমুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেছে। তাদের অভিযোগ, অনুষ্ঠানে কোনো কার্যকর ভিড় নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা ছিল না। বিজেপি নেতা ও কর্নাটক রাজ্য সভাপতি বি ওয়াই বিজয়েন্দ্র প্রশ্ন তোলেন, “মুম্বাইয়ে যখন বিজয় উৎসব নিরাপদে সম্পন্ন হয়, তখন বেঙ্গালুরুতে কেন ব্যর্থতা ঘটল?” তিনি এই ঘটনার জন্য বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেন।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই মর্মান্তিক ঘটনার প্রতি শোক প্রকাশ করেন এবং মৃতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান। রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুও এক্স-এ লেখেন, “বেঙ্গালুরুর এই ঘটনায় প্রাণহানি অত্যন্ত মর্মান্তিক ও হৃদয়বিদারক।”
অন্যদিকে, BCCI-র সহ-সভাপতি রাজীব শুক্লা বলেন, “অনুষ্ঠানে বিপুল ভিড় হয়েছিল। আমরা ঘটনাটির তদন্ত করছি। এটিকে রাজনৈতিক রং দেওয়া অনুচিত।” ঘটনার দিন সকালে ট্রাফিক পুলিশ সাধারণ মানুষকে সেন্ট্রাল বিজনেস ডিস্ট্রিক্ট এলাকা এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছিল, এবং বলেছিল কেবল টিকিটধারীরাই প্রবেশ করতে পারবেন। তবে এতেও ভিড় কমানো যায়নি।
এই পরিস্থিতিতে মেট্রোর ভিড় নিয়ন্ত্রণে বেঙ্গালুরু মেট্রো কর্তৃপক্ষ কিছু স্টেশন সাময়িকভাবে বন্ধ রাখে। এমনকি পুলিশকেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে লাঠিচার্জ করতে হয়। অনুষ্ঠান শেষে বিদ্যমান পরিস্থিতিতে পাথর নিক্ষেপের ঘটনাও ঘটে, যা বিধান সৌধ ভবনের দিকে গিয়েও লাগে বলে অভিযোগ ওঠে। সাংবাদিকরাও হামলার শিকার হন।
এই দুর্ঘটনা নিয়ে রাজ্যের বিজেপি নেতারা ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান এবং আহতদের সঙ্গে দেখা করেন। প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার ভাস্কর রাও এই দুর্ঘটনাকে অনিয়মিত ও অব্যবস্থাপনার ফল বলে উল্লেখ করেন এবং বলেন, “আমি মুখ্যমন্ত্রী হলে অনুষ্ঠান পিছিয়ে দিতাম।”
এই মর্মান্তিক ঘটনা শুধু রাজ্যের প্রশাসনিক দায়িত্বহীনতার দৃষ্টান্তই নয়, ভবিষ্যতের জন্যও এক বড় শিক্ষা। জনসুরক্ষাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার না দিলে ক্রীড়াজয়ের উৎসব মুহূর্তেই শোকদায়ক বিপর্যয়ে পরিণত হতে পারে।
0 মন্তব্যসমূহ